স্মৃতির মেঠোপথ - ১

Submitted by WatchDog on Sunday, February 23, 2020

ছোটবেলার অনেককিছুই এখন আর মনে করতে পারিনা। ঝাপসা হয়ে গেছে স্মৃতি। ফিকে হয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিন্ন অনেক ঘটনা। অথচ এই সেদিনও চাইলে ফিরে যেতে পারতাম ঝড়ের রাতে আম কুড়ানোর মহোৎসবে। পাড়ার আম্বির মার আম আর কেন্নার বাড়ির বরই গাছ সবার মত আমার কাছেও ছিল লোভের জিনিস। সুযোগ পেলেই হামলে পড়তাম। অদৃশ্য ভুত হয়ে ছুড়ে মারতাম ঢিল। কেউ দেখে ফেললে ভূঁইয়া বাড়ির নামের প্রতি অবিচার হবে এ ভয়ে নিজকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হতাম। হরযুর মার তেড়ে আসা অথবা মুখে বসন্তের দাগওয়ালা কেন্নার খিস্তি খেউরের ফাঁক গলে দুএকটা আম অথবা এক থোক বরই কুড়ানোর ভেতর আনন্দটা আজ আর সমীকরণ করে মেলানো যায়না। এসব কেন করতাম তার উত্তর খোঁজা নিশ্চয় অর্থহীন। অথচ আমাদের ঘরে তখন কাড়ি কাড়ি আম। উত্তর ঘরের চৌকির তলা সয়লাব থাকতো আমের স্রোতে। সাথে পাকা কাঁঠালের মৌ মৌ গন্ধ। মার চোখ এড়িয়ে চৌকির তলায় বসেই সাবাড় করে দিতাম বেশকিছু আম। সাথে মামাবাড়ির মুড়ি। কুড়ির দোকানের বাঁকানো বিস্কুট অথবা টকমিষ্টি হজমি কি শত বছর আগের ঘটনা! চোখ বুজলে এখনো কি ফিরে যাওয়া যায়না সেসব গলিতে! আমাদের স্কুলে তখন প্রথম শ্রেণীর আগে শিশু শ্রেণী বলে একটা শ্রেণী ছিল। ওখানেই আমার শুরু। যথেষ্ট জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নীচে আমাদের বসানো হতো। চিত্ত স্যার হাতে মগার বাড়ির লিকলিকে বেত নিয়ে আমাদের শাসাতেন। ভয়ে থরথর করে কাঁপতাম আমরা। সহপাঠী মহসিন একদিন কাপড়ই নষ্ট করে দিল। চৈত্রের রৌদ্রজ্জ্বল সকাল। আমার প্রথম পরীক্ষা। বিষয় অংক। বিশাল আমগাছটার তলায় বসে উপুড় হয়ে লিখছি। শেষ হতে চারদিকে চিত্ত স্যারের খোজ না পেয়ে খাতা হাতে সোজা বাড়ি চলে আসি। উত্তেজিত হয়ে বাসার সবাই দেখালাম পরীক্ষার খাতা। বড় ভাই তাৎক্ষণিক ভাবে আমাকে সাথে করে ফিরে গেলেন স্কুলে। কি কথা হয়েছিল চিত্ত স্যারের সাথে তা আর মনে নেই। তবে মনে আছে শিশুশ্রেনীর ফাইনাল দিয়ে বছরের শুরুতে প্রথমশ্রেণীতে ক্লাস করতে গেলাম। স্যার একে একে সবার নাম ডাকে কিন্ত আমাকে আর ডাকেনা। এভাবে সাতদিন। মন অস্বাভাবিক খারাপ। শেষপর্যন্ত বাড়িতে বলতে বাধ্য হলাম। প্রায় সবাই ধরে নিলো আমি হয়ত শিশুশ্রেনীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। যথারীতি বড় ভাইকে লাগানো হল রহস্য উৎঘাটনে। একটু সময় নিলো বিষয়টা পরিষ্কার হতে। প্রথমশ্রেণীতে নয়, আমার নাম লিপিবদ্ধ আছে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং এক-সপ্তাহ ধরে আমাকে অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে। আব্বার হস্তক্ষেপে আমাকে প্রথমশ্রেণীতে ডিমোশন দেয়া হল। বয়স কম, চাপ সইতে পারবোনা, এই ছিল কারণ।

-চলবে


ভালো লাগলে শেয়ার করুন