DPR, LPR ও Vladimir Validimirovich Putin

Submitted by WatchDog on Friday, February 25, 2022

যাদের জানা নেই তাদের জন্যে জ্ঞানের ভাণ্ডারে জমা করার মত তথ্য হতে পারে। আসুন শুরু করি সমসাময়িক কালের রুশ জার পুতিনের নাম নিয়ে। পুতিনের নাম Vladimir। এই নামের সবাই রুশ দেশে সংক্ষেপে ভলোদিয়া, ভভা অথবা ভবকা নামেও পরিচিত। খুবই কমন ও বহুল ব্যবহৃত নাম। কোটি কোটি পুরুষ পাওয়া যাবে রুশ দেশে যার নাম ভভা। এবার আসুন Vচlidimirovich'এর দিকে চোখ ফেরাই। পুতিন তার মধ্য নাম হিসাবে ব্যবহার করেন এই Vladimirovich। এর অর্থ, Vladimir'এর পুত্র Vlaidimir। রুশদের মধ্য নামের শেষে vich যোগ করা হয় বাবার নাম আইডেনিটিফাই করার জন্যে।

পুতিনের নামের রসায়ন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছি কারণ সামনে দিনগুলোতে রুশ এই ডিক্টেটরের নাম সোশ্যাল মিডিয়া সহ সব মিডিয়াতে বার বার সামনে আসবে। তবে তা কোন মহৎ কারণে নয়। প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেইনের সীমান্তে মোতায়েন সেনাবাহিনীকে সেনা অভিযানের নির্দেশ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।/এই নির্দেশেও একটা রহস্যের গন্ধ আছে। যাদের জানা নেই তারা হয়ত বিভ্রান্ত হবেন।

ইউক্রেইনের পূবের অনেক এলাকায় রুশ জাতি গুষ্টির বাস। সেখানে তারা সংখ্যাগুরু (সবটা সত্য নয়)। রুশদের প্রতি তাদের অগাধ আনুগত্য। এলাকাগুলো হচ্ছে দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল। পুতিনের থিওরি হচ্ছে যেহেতু ঐ অঞ্চলে রুশ ভাষাভাষীদের সংখ্যাধিক্য (সবটা সত্য নয়) তাই ঐতিহাসিকভাবে তা হবে রাশিয়ার অংশ।

৭১'সালে আমরা রাজাকার নামের এক প্রজাতির দালালদের সাথে পরিচিত হয়েছি। যাদের আইডেনটিফিকেশন ছিল নিজ দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে দখলদার বাহিনীর সহযোগী হওয়া। দনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকায়ও রাজাকার আছে। আমাদের সাথে ওদের পার্থক্য হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে ওরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পুতিনের সহযোগী। এই রাজাকারদের দিয়েই পুতিন প্রতিবেশী দেশসমূহে নিজের সামরিক অভিযানের বৈধতা দেন। ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখলও ছিল এই কায়দার দালাল নির্ভর সামরিক অভিযান।

ইতিমধ্যে স্থানীয় দালালদের দিয়ে পুতিন Donetsk People's Republic (DPR) ও Luhansk People's Republic (LPR) নামের দুটি স্বাধীন দেশের নাটক সাজিয়েছেন। কথিত এই স্বাধীন দেশের রাজাকাররা অনেকদিন ধরেই ইউক্রেইনের নিয়মিত বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করছে। যার মূলে রয়েছে পাক সেনাবাহিনীর কায়দায় রুশ সেনাবাহিনী।
পুতিন আগ বাড়িয়ে আরও কিছু গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে রেখেছেন; দনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকার অনেক ইউক্রেইনিয়ানদের রুশ নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট ইস্যু করে দালালিত্ব পাকাপোক্ত করেছেন।

দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনী প্রবেশ করেছে। উছিলা হচ্ছে, ঐ দুটি অঞ্চলে শান্তি রক্ষা।
শান্তি, শব্দটা শুনতে খুব ভাল শোনায়। মানবতার গন্ধ পাওয়া যায়। উচ্চারণ করতে মায়া মায়া লাগে। তবে পুতিনের শান্তির ফর্মুলা বেশ ইউনিক ও কৌশলী।
ব্যপারটা এ রকম। ধরুন বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অসমীয়া জাতিসত্তার সংখ্যাধিক্য এবং ঐ এলাকার জনগণ ভারতীয় ভাষা ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ সেবক।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তাই মনে করেন সিলেট বাংলাদেশের নয়, ভারতের অংশ। এবং তা নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশের ঐ অঞ্চলে ভারতীয় সেনা অভিযান বৈধ।

ইউক্রেইন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। দেশটার জন্মে জাত শত্রু ন্যাটোর কোন সামরিক ভূমিকা ছিলনা। স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ইউক্রেইন তার লেজিস্লেটিভ ও এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ চয়েস করে থাকে। এখানেও মার্কিনীদের কোন ভূমিকা থাকেনা।

এই ইউক্রেইন যখন সিদ্ধান্ত নেয় তারা রুশ দেশের একনায়ক-তান্ত্রিক স্বৈরশাসন নয়, বরং পশ্চিমাদের বহুদলীয় গণতন্ত্র অনুসরণ করবে, পুতিনের পশ্চাৎ-দেশে চুলকানি শুরু হয়। পাশাপাশি খোয়ানো সুপার পাওয়ারের প্রসব বেদনা শুরু হয়।

অথচ নিজেদের পাছায় দশ মন গু নিয়ে রুশরা বছরের পর বছর ধরে চেচেন, ইঙ্গুসেটিয়ার মত অঞ্চল গুলোতে কচুকাটা করছে স্থানীয় জনগণকে যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্যে লড়ছে।

এক সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়ন খোয়াব দেখত গোটা বিশ্ব একদিন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার আওতায় আসবে। এবং সেদিন হতে গোটা মানবসমাজ মনের আনন্দে হাসবে, গাইবে এন্ড লিভ হ্যাপিলি এভার আফটার।

সে খোয়াব খোয়াবই থেকে গেছে। মাইটি সোভিয়েত দেশ ভেঙ্গে ১৫ টুকরা হয়েছে। পুতিন ও তার পূর্ব পুরুষদের পৃথিবী সংক্ষিপ্ত হয়েছে। সামরিক শক্তির জোট ওয়ারশ প্যাক্ট গোরস্তানে সমাহিত হয়েছে। অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। সোভিয়েত দেশের উত্তরসূরী রাশিয়া নাম লিখিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। সেই দেশে স্থায়ীভাবে পোক্ত হয়েছে এক ব্যক্তির স্বৈরশাসন। পুতিন নিজকে বসিয়েছেন ভগবানের আসরে। হিটলারের কায়দায় নিজের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষে উস্কে দিচ্ছেন রুশ ন্যাশনালিজম। বলির পাঠা বানাচ্ছেন প্রতিবেশী দুর্বল দেশগুলোকে।

ইউক্রেইন যুদ্ধ সমাগত। হয়ত আপাতত দনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলে সীমিত থাকবে পুতিনের সামরিক অভিযান। কিন্তু এ অভিযানের মাধ্যমে ম্যাসেজ দিয়ে যাবেন প্রতিবেশী প্রত্যেক দেশে। যেমনটা দিয়েছিল ১৯১৭ সালের বর্বর বলশেভিকরা।।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন