ঘুরে এলাম ইসরায়েল/প্যালেস্টাইন - পর্ব ৪

Submitted by WatchDog on Wednesday, April 14, 2021

সান ফ্রানসিস্কো

জুলাই ১৯, ২০১৯ সাল। চমৎকার রৌদ্রজ্বল একটা দিন। আমেরিকার হিংস্র পশ্চিমে বছরের এ সময়টায় সূর্যের দাপাদাপিতে কেউ ভাগ বসাতে পারেনা। একটানা গরমে জীবন অনেকসময় অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। মাঠ-ঘাট, চারিদিকে পাহাড় পর্বতেও চলে সূর্যের রাজত্ব। আজকেও এর ব্যতিক্রম হলনা। এয়ার ট্রাভেলের নিখুত আবহাওয়া।

বিকাল ৪টায় ফ্লাইট হলেও দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় সানপোর্ট এয়ারপোর্টে হাজির। লাগেজ বলতে মধ্য সাইজের একটা স্যুটকেস ও হাল্কা একটা হাতব্যাগ। জানতাম মধ্যপ্রাচ্যের যে কোন দেশে এটা গরমের সময়। অনেক জায়গায় রাতে বেশ ঠাণ্ডা পরে। তাই দু'ধরণের আবহাওয়ার জন্যেই কাপড় নিতে হলো।

নিউ মেক্সিকোর আলবুকুরকে হতে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রানসিসকো তিন ঘণ্টার সরাসরি ফ্লাইট। ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সে ক'মাস আগে একই পথে ভ্যানকুভার ঘুরে এসেছি। চরম বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার পর প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এই কোম্পানীর ফ্লাইটে আর উঠবো না। কিন্তু সময় ও দামের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হলো এ যাত্রায়। দু'ঘণ্টা সময়ের পার্থক্যের কারণে সান ফ্রানসিসকো পৌঁছানোর পর একই দিন রওয়ানা দিব তেল আবিবের পথে। অযথা এয়ারপোর্টে সময় নষ্ট করতে হবেনা, এটাই ছিল ফ্লাইট সিলেকশনের আসল কারণ।
এ যাত্রায় ইউনাইটেড হতাশ করেনি। আলবুকুরকে হতে ফ্লাইট ছাড়তে একমিনিটও দেরী হয়নি। পথে দু'একবার ঝাকি লাগলেও গোটা ফ্লাইট ছিল শান্ত। যাত্রীদেরও তেমন ভীড় ছিলনা।

ইন-ফ্লাইট সার্ভিস বলতে এক কাপ কফি অথবা এক গ্লাস সফট ড্রিংক। তা নিয়েই ইদানিং সন্তূষ্ট থাকতে হয়। এই সল্পতার হেতু জানতে চাইলে ওরা বলে টিকেটের দাম কম, তাই সার্ভিসও কম। অথচ সময় ছিল যখন তিন ঘণ্টার জার্নিতেও গরম খাবারের ব্যবস্থা থাকতো। অবশ্য ফ্লাইটে উঠলেই ক্ষুধা চাপতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আমার কোন কালেই ছিলনা। জানালার সীটটায় বসে বাইরের পৃথিবী দেখতে দেখতে কখন পৌঁছে গেছি টের পাইনি।

সান ফ্রানসিসকো। অদ্ভুত সুন্দর একটা শহর। ঘণ কুয়াশা, মৃদু শীতের বসন্ত, গোল্ডেন গেইট ব্রীজ আর নটরিয়াজ আলকাট্রাস জেলখানার এই শহরে বছরজুড়ে লেগে থাকে ট্যুরিষ্টদের ভীড়। গোটা শহরের একটা স্ন্যাপ শট পেতে উঁচু হতে দেখার কোন বিকল্প নেই। ক্ষণিকের জন্যে হলেও থমকে যেতে হয়। প্রকৃতি ও মানুষের আজন্ম ভালবাসার এই শহরকে প্রথম দেখায় ভাল না লেগে উপায় নেই। ল্যান্ড করতে চাইলে সব ফ্লাইটকেই সানফ্রানসিস্কো বে'র খুব নীচু দিয়ে উড়ে যেতে হয়। ভাল লাগার এসব খন্ড খন্ড মুহূর্তগুলোর সবটা ক্যামেরায় ধরা যায়না, বরং হ্রদয় খুলে উজার করে নিতে হয়। এবং এ ধরে রাখা ক্ষণিকের জন্য নয়, বেঁচে থাকার বাকি দিনগুলোর জন্যে।

উপরে পরিস্কার নীল আকাশ, নীচে বে'র পানিতে মৃদু-মন্দ ঢেউ; সবমিলিয়ে উপভোগ করার মত একটা বিকেল। সূর্য পরে আসছিল। নির্ধারিত সময়ের একমিনিট হেরফের না করে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আলতো করে ছুঁয়ে ফেললো সান ফ্রানসিস্কোর মাটি।

- চলবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন