কাছ হতে দেখা একজন লেসবিয়ান

Submitted by WatchDog on Monday, July 27, 2009

lesbian

প্রেসিডেনসিয়াল নির্বাচনের সময় তখন। চারদিকে আলোচনা সমালোচনা, ওবামা না ম্যাক্‌কেইন এ নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। ঐতিহাসিক ভাবে নিউ মেক্সিকো রিপাবলিকানদের দুর্জয় ঘাটি, যদিও এ যাত্রায় দলটির বিজয় যে খুব একটা সহজ হবেনা তা রিপাবলিকানদেরও জানা ছিল। ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোতে ম্যাক্‌কেইন আসবেন নির্বাচনী প্রচারনায়। আফিসের প্রায় সবাই যাচ্ছে এই প্রার্থীর বক্তব্য শুনতে। একটা সময় পর্য্যন্ত আমিও জন ম্যাক্‌কেইনকে ভোট দেব বলে নিশ্চিত ছিলাম তার বাংলাদেশী দত্তক কন্যার জন্যে। কিন্তূ হঠাৎ করে ম্যাক্‌কেইন ক্যাম্প সূকৌশলে এই বাংলাদেশীকে প্রচারনা হতে দূরে সড়িয়ে দেয়ার কারণে মত পালটে ফেলি। ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও আমেরিকান মনে হয়নি। যেহেতু কাছ হতে জন ম্যাক্‌কেইনকে দেখার র্দুলভ সূযোগ হতে নিজকে বঞ্চিত হতে চাইছিলাম না, তাই অফিসের বাকি কলিগদের সাথে দলবেধে সভায় যাব বলে সিদ্বান্ত নিলাম। আনইপ্রেসিভ ম্যক্‌কেইন যতটা না দাগ কাটতে পেরেছিল তার চেয়ে বহুগূন আলোড়িত করেছিল সভায় উপস্থিত মানুসগুলোর সমন্নয় দেখে। নিরেট সাদা ব্যতীত একমাত্র আমিই ছিলাম ব্যতিক্রম ধর্মী চামড়ার মানুষ। ফক্স টিভর সাংবাদিক যতই আমাকে সামনের কাতারে ঠেল দিচ্ছিল, আমিও রং সমস্যা ব্যালেন্সে রিপাবলিকান দলীয় প্রয়াসের বলি হবনা বলে প্রতিজ্ঞ ছিলাম। যাই হোক, প্রত্যাশা মোতাবেক জন ম্যাক্‌কেইন পরিচিত কিছু বক্তব্য দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন পরবর্তী সভায় যোগ দেবেন বলে।

অফিসে ফিরে সবাই ম্যাক্‌কেইনের প্রশংষায় পঞ্চমূখ হতে দেরী করলনা শুধু একজন ছাড়া। আমার সাক্ষাৎ বস, প্রকল্প প্রকৌশলী সিলভিয়া টাইসন ফাক পেয়ে আমাকে চেপে ধরল ভোট কাকে দেব জানার জন্যে। আমি বাইন মাছের মত পিছলে গেলাম সড়াসড়ি উত্তর হতে। সিলভিয়া মুখ বাকা করে কঠিন মনতব্যে প্রত্যাখান করল ম্যাক্‌কেইন এবং তার রিপাবলিকান পার্টিকে। একটু হলাম এ ধরনের মনতব্যে। ইতিপুর্বে সাদা আমেরিকান যার সাথেই ভোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবাই একবাক্যে ম্যাক্‌কেইনকে ভোট দেবে বলে জানিয়েছিল। কথা প্রসংগে বেরিয়ে এল সলভিয়া সমকামী এবং এ ধরনের সেক্সুয়্যাল অরিয়েন্টেশনে রিপাবলিকানদের দৃষ্টিভংগি তার ভাষায় মধ্যযুগীয়। থ হয়ে গেলাম তার কথায়। সবকিছু ছাপিয়ে মাথায় ঘুরপাক খেত শুরু করল সিলভিয়ার সমকামীতা। ইতিপূর্বে কোন সমকামী মহিলাকে এত কাছ হতে দেখেছি বলে মনে করতে পারলামনা। বস মানুষ তাই বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামাবনা বলেই সিদ্বান্ত নিলাম। কিন্তূ টেবিলে ফিরেই বন্ধু এরিক্‌কে সিলভিয়ার যৌন পছন্দের উপর প্রশ্ন না করে পারলামনা। সে অবাক হল এতদিন জানতামনা বলে। আলাপ প্রসংগে জানাগেল সিভিয়ার পার্টনার মেলোডি গিবসন একই কোম্পানীর অন্য একটা অফিসে কাজ করে। গেল বসন্েত এরা দু’জন ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে হলিডে করে এসেছে। এখন বুঝতে পারলাম কেন সলভিয়ার ডেস্কে মোট মত এক মহিলার ছবি। কেন জানি সহজ ভাবে নিতে পারলামনা সত্যটা।

কোন এক শনিবার সকাল। জরুরী কিছু কাজ থাকায় অফিসে হানা দিতে হল সকাল সকাল। পাঁচ তলা অফিসটার সবচেয়ে বড় আকর্ষন এর ডাইনিং রুম। জানালার পাশে বসতেই দিগন্ত রেখায় ভেসে উঠে সান্ডিয়া পাহাড়ের প্যনোরমা। মনটা জুড়িয়ে যায় কোন উপলক্ষ ছাড়াই। অফিস ফাকা থাকার দরুন সিদ্বান্ত নিলাম জানালার পাশে বসে কিছুক্ষন কাজ করব। দরজা ঠেল ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল অদ্ভূদ এক দৃশ্য, আমার প্রতিদিনের কাজের সংগী লুসি এবং বেভারলি একে অপরের হাত ধরে অপলকনেত্রে তাকিয়ে আছে পরস্পরের দিকে, মাঝে মধ্যে চুমো খাচ্ছে। আমাকে দেখে বিন্দুমাত্র বিচিলিত হলনা। মাথাটা ঝিম মেরে উঠল। এসব নীল ছবিতে দেখেছি, গসিপ ম্যগাজিনগুলোতে পড়েছি, কিন্তূ এমন একটা দৃশ্য বাস্তবে দেখব তা স্বপ্নেও চিন্তা করিনি। নিজকেই কেন জানি অপরাধী মনে হল। আসলে উইকএন্ড বলেই তারা হয়ত এমনটা করতে সাহস করেছিল, উইক ড্যাতে তাদের দুজনকে কাছাকাছি আসতে দেখেছি বলে মনে করতে পারলামনা।

প্রশ্নগুলো করার লোভ কিছুতেই সামলানো গেলনা। আমি সহ আরও দু’জন কন্ট্রাক্ট এঞ্জিনীয়রা বিদায় নিচ্ছি। শুক্রবার কাজের শেষে সবাই বসে মদ খাব বলে সিদ্বান্ত নিলাম। স্থানীয় একটা বারে আড্ডাটা রাত ১১টায় গিয়ে শেষ হল। এ ফাকে সবাই কমবেশী মাতাল হয়ে গেল অতিরিক্ত মদ্যপানে, বিশেষ করে সিলভিয়া। আসর শেষ হতে আমার দায়িত্ব পরল সিলভিয়াকে ২০ মাইল দুরের একটা শহরে পৌছে দেয়ার (তূলনামূলক কম মাতাল হওয়ার কারণে)।

গাড়ি ষ্টার্ট দিয়ে কিছুদূর যেতেই কথার খৈ ফুটল সিলভিয়ার মূখে। আমিও চুপ থাকলাম না। এতদিন মনের গভীরে লালিত অবৈধ কিছু প্রশ্ন সিলভিয়াকে করব বলে ঠিক করলাম। শুরুটা হল সিলভিয়ার সমকামী হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে। কয়েক সেকেন্ড নীরব থেকে খুব সাবলীল ভাষায় বলে গেল নিজ জীবনের কথা। অল্প বয়সে পিতা মাতার বিচ্ছেদ, সৎ পিতা কর্তৃক নিয়মিত ধর্ষিত হওয়া এবং পুরুষালী চেহারার কারণে কোন পুরুষের দৃষ্টিতে আসতে ব্যর্থ হওয়া, এ গুলো সমকামিতার প্রাথমিক কারণ। কথা অনেকদূর গড়াতে আসল প্রশ্নটা করার সাহষ পেলাম। ’আচ্ছা, তোমরা সমকামীরা নিজদের যৌন জীবন উপভোগ কর কি ভাবে?‘ মোটেও ভ্যাবাচেকা খেলনা যেমনটা আমি আশা করছিলাম। ‘তুমি কি নীল ছবি দেখনি কখনো?’। ’তা দেখেছি, কিন্থু বাস্তব জীবনে কেমন তা কল্পনা করা একটু জটিল‘। ‘হ্যা, তুমি ঠিকই ধরেছ, আসলেই একটু জটিল। তবে নীল ছবিতে যতটা দেখানো হয় তার সবটুকু যে আমাদের শয়নকক্ষে মঞ্চায়ন হয় ব্যাপারটা ঠিক তেমন না। আমরা উপভোগ করি আমাদের মত করে, তা অনেক সময় নীল ছবির বাস্তবতাকেও হার মানায়, আবার অনেক সময় তা একেবারেই পান্তাভাত, ব্যাপারটা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং আমাদের মনমানষিকতার উপর‘। এরপর বিষয়টার বিস্তারিত জানিয়ে এমন সব তথ্য দিল যা এ আসরে প্রকাশ করার মত নয়। সে স্বাভাবিক ভাবে বলে গেল আর আমিও শুনে গেলাম আমার নিষিদ্ব প্রশ্নের জবাব।

বাসার কাছে আসতেই মেলোডিকে দেখা গেল প্রধান ফটকের পাশে বসে থাকতে। উন্মাদের মত ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল সিলভিয়াকে। চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল সমস্ত শরীর। আমি নিথর হয়ে উপভোগ করে গেলাম এই নিষিদ্ব দৃশ্য। ফেরার পথে স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগল। মনুষ্য সর্ম্পকের এই জটিল সমীকরন মেলাতে হাপিয়ে উঠলাম। এদের দুজনের ভালবাসার যে উন্মাদনা কিছুক্ষন আগে নিজ চোখে দেখলাম তার ভেতর ছিলনা কোন ফাক ফোকর, ছিলনা নীল ছবির বানিজ্যিক অভিনয়। এ নীরেট ভালবাসার বাস্তব চিত্র, যার মাঝে প্রতিটা মানুষ খুজে পায় তার বেচে থাকার স্বার্থকতা।

সিলভিয়া টাইসন আমার দেখা সেরা মানুষদের একজন মানুষ, সেরা বসদের অন্যতম বস। তার কারণে গত ৩টা বছর নীরবে নিশ্চিদ্রে কাজ করতে পেরেছি, নিজকে খূজে পেয়েছি মার্কিন দেশের জটিল কর্পোরেট দুনিয়ায়। সমকামীতা যদি কোন সামাজিক অপরাধ হুয়ে থাকে তা হতে আমার প্রাক্তন বস সিলভিয়াকে মুক্তি দিতে আমার কোন আসূবিধা নেই। কারন আমি জানি সবার উপর সে একজন রক্ত মাংসের মানুষ এবং যথেষ্ট ভাল মানুষ।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন