সব আমেরিকার খেলা!

Submitted by WatchDog on Saturday, February 26, 2022

প্রশ্নটা অনেকের, রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে আমেরিকা অথবা ন্যাটো জোট সরাসরি মাঠে নামছে না কেন? ভয়টা কি পারমানবিক অস্ত্রের, না কমিটমেন্ট রক্ষায় নিজেদের সদিচ্ছার অভাব?

অনেকে এক ধাপ এগিয়ে এমনও অভিযোগ করছেন ইউক্রেইনকে মাঠে নামিয়ে দূর হতে মজা লুটছে পশ্চিমা বিশ্ব। পাশাপাশি সমরাস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছে।

প্রশ্নগুলো জটিল না হলেও এর উত্তর গুলো বেশ জটিল। বিশেষকরে সমসাময়িক বাস্তবতায়। আমার দৃষ্টিতে কারণগুলো হতে পারে নিম্নরূপ:

১) নতুন বিশ্বব্যবস্থাঃ
ঠাণ্ডা-যুদ্ধের অবসানের পর পৃথিবী ভাগাভাগির সমীকরণে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পৃথিবীর দেশে দেশে কথিত বামপন্থীরা এতিমের খাতায় নাম লিখিয়েছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে কিউবা অথবা উত্তর কোরিয়ার মত একনায়ক-তান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করাও এখন অকল্পনীয়। তাই ইউক্রেইনের ভাগ্য বদলাতে মার্কিনীদের সরাসরি যুদ্ধে নামার কোন তাগাদা অথবা বাধ্যবাধকতা নেই।

২) মার্কিনীদের আভ্যন্তরীণ বিভক্তি
দেশটার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এখন দলীয় বিভক্তি বড় ফ্যাক্টর। বিশেষকরে যুদ্ধে জড়িয়ে পরার মত সংবেদনশীল বিষয়ে। এ জন্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবশ্যই ক্রেডিট দিতে হবে। রিপাব্লিকান দলীয় এই প্রেসিডেন্টের ৪ বছরের শাসন সত্যিকার অর্থে ছিল দলীয় শাসন। সাদা বর্ণবাদকে উস্কে দিয়ে দেশকে সফলভাবে দুই ক্যাম্পে বিভক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। যার প্রতিফলন কেবল রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং ডমিনেট করছে মার্কিনীদের প্রতিদিনের জীবন। তাই প্রয়োজন থাকলেও বাইডেনের যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেশটার অর্ধেক জনগণ সমর্থন করবেনা। পাশাপাশি নতুন কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পরলে সামনের নির্বাচনে বাইডেনের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। অথচ একটা সময় ছিল যখন যুদ্ধে যাওয়ার জরুরি সিদ্ধান্তে মার্কিন জনগণের সমর্থন থাকতো অবিভক্ত।

৩) আফগানিস্তান ফ্যাক্টর;
জনগণের মেমোরি হতে এত সহজে মুছে যাবেনা কাবুল হতে মার্কিন সৈন্যদের লজ্জাজনক বিদায়ের দৃশ্য। তাই মার্কিন সামরিক শক্তি নিয়ে দেশটার জনগণের সংশয় না থাকলেও বিদেশ বিভূঁইয়ে সৈন্য প্রেরণের ফলাফল কি হবে তা নিয়ে নিশ্চিত নয়। নতুন কোন আফগানিস্তানের জন্যে প্রস্তুত নয় মার্কিন জনগণ।

৪) মার্কিন অর্থনীতি। কর্পোরেট লেভেলে যুদ্ধের উন্মাদনা থাকলেও সাধারণ পাবলিক লেভেলে যুদ্ধ এখন লায়াবিলিটি। দেশটায় হু হু করে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি। আয় ব্যয়ের হিসাবে গড়মিল এখন প্রায় প্রতি ঘরে। ইউক্রেইনের মাটিতে মার্কিন সৈন্য পা রাখা মাত্র আগুন লাগবে জ্বালানি বাজারে। অনেক ক্ষেত্রে চীনের উপর নির্ভরশীল মার্কিন অর্থনীতি এক সাথে এত চাপ বহন করার মত ক্ষমতা রাখে না এখন। ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে আফগানিস্তান হতে মার্কিনীদের প্রাপ্তি কি তার জবাব এখনও পায়নি দেশটার জনগণ।

ইউক্রেইনকে মাঠে নামিয়ে দূর হতে মজা লুটছে মার্কিনীরা, এমন চিন্তা খুবই সস্তা মস্তিষ্কের বাই-প্রোডাক্ট। কোন বিচারেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী ন্যাটো জোট ইউক্রেইনকে রাশিয়ের বিরুদ্ধে ঠেলে দেয়নি। একদলীয় সোভিয়েত শাসনের যাঁতাকল হতে বেরিয়ে মুক্ত গণতান্ত্রিক বিশ্বে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ইউক্রেইনিয়ান জনগণের। তারা ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে সে রায় দিয়েছিল।

আজকের ইউক্রেইন ন্যাটো অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য নয়। তাই চাইলেও ন্যাটো জোট সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর অধিকার রাখে না।

রাশিয়ার সাথে সীমান্ত আছে এমন আরও তিন দেশ ন্যাটোর সদস্য। লাটভিয়া, লিথুনিয়া ও এস্তোনিয়া নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যে নাম লিখিয়েছে ন্যাটো জোটে।

সমস্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা ন্যাটো জোট নয়, সমস্যা রাশিয়ার একব্যক্তির শাসন। যুদ্ধ হচ্ছে এই একনায়কের ক্ষমতা আজীবন ধরে রাখার ব্লাডি রোডম্যাপ।

-সামনে পুতিনের আদর্শিক গুরু স্তালিনকে নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে!

ভালো লাগলে শেয়ার করুন