ভ্রমণ

রাজ্যের ক্লান্তি, তবুও সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল। জানালার পর্দাটা সড়িয়ে দিতেই সকালের র্মিষ্টি আলো ভাসিয়ে নিল হোটেল রুমটা। পাহাড়ের কোল ঘেষে সান্তা ফে রুটের মালবাহী ট্রেনটার হেলেদুলে চলা মনে করিয়ে দিল দাদা বাড়ির কথা।

হঠাৎ করেই সবকিছু বদলে গেল যেন। পশ্চিম দিগনন্তে রক্তিম সূর্য্যটা মিলিয়ে যেতেই অন্ধকারে ঢেকে গেল যতদূর চোখ যায়। এতক্ষন ধরে রাজত্ব করা দানবীয় ট্রাকগুলোও ভোজবাজির মত হাওয়া হয়ে গেল হাইওয়ে হতে। ডান বায়ে যতদূর চোখ যায় জীবনের কোন ছোয়া নেই...

হাইওয়েতে ড্রাইভ করার এ এক যন্ত্রণা, চারদিকের চোখ জুড়ানো দৃশ্যগুলোকে অন্ধের মত এড়াতে হয়। ৮০-৯০ মাইল বেগে (১২৮-১৪৪ কিঃমিঃ) গাড়ি চালাতে গেলে চোখ এদিক সেদিক করার কোন উপায় থাকেনা, সামান্য হের ফের হলেই আজরাইল বাবাজীর খপ্পরে ধরা দিতে হয় শেষ দোয়া না পড়েই।

কথা ছিল খুব সকালে বেড়িয়ে পরব। কিন্তূ বেরুতে বেরুতে দুপুর হয়ে গেল। এতদিন জানতাম বাংলাদেশী ললনারাই সাজ গোছের কারণে সব জায়গায় লেট, কিন্তূ আমার এই বিদেশী গৃহিনীও যে একই রোগে আক্রান্ত তা জানতে পেরে কিছুটা হলেও আস্বস্ত হলাম।

ইংল্যান্ডে এত গরম আগে কখনও দেখেছি বলে মনে করতে পারলামনা। মধ্য জুন এবং তাপমাত্রা প্রায় ২৮ ডিগ্রী সেঃ, হিউমিড। সুদূর সোভিয়েত দেশ হতে দু’দিন তিন রাতের ট্রেন জার্নি শেষে যেদিন লন্ডনের লিভারপুল ষ্টেশনে পৌছলাম পূর্ব ইউরোপের হাল্কা আবহাওয়ার কোন ছায়া খুজে পেলাম না।

কুস্‌কো এয়ারপোর্টে নামতেই আমার নামের সাইন নিয়ে মধ্য বয়সী এক মহিলাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে হাফছেড়ে বাচলাম। হাত তুলে ইশারা করতে এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় দিল, দোভাষি এবং ট্যুর গাইড। লিমার ট্রাভেল এজেন্টকে আগা-গোড়া বিশ্বাষ করতে পারিনি বলে নিজকে ধিক্কার দিলাম...

বৃষ্টি পড়ছে সকাল হতে। প্রথমে গুড়ি গুড়ি তারপর হুড়মুর করে। দিগন্ত রেখায় সান্ডিয়া পাহাড়ের অবস্থানটা গ্রাস করে নিয়েছে সাদা মেঘরাশির দৈত্যমেলা। জানালাটা খুলে আজ আর দেখা মিল্‌লনা পাহাড়ের চূড়াটা, পূবের আকাশে আজ শুধুই মেঘের খেলা।