The Gravedigger's Wife

Submitted by WatchDog on Wednesday, October 4, 2023

সোমালিয়া! দেশটার নাম শোনার সাথে দৃশ্যপটে ভেসে উঠে দারিদ্র, ক্ষুধা, অনাহার, মৃত্যু পথযাত্রী শিশুদের কান্না আর ফারাহ আইদিদদের মত ওয়ারলর্ডদের নৃশংসতা। এমনটাই জেনে এসেছি এতদিন। স্বভাবতই ধরে নিয়েছি জীবন ওখানে আর দশটা দেশের মত সহজ না। জন্ম নিয়েই যেখানে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে হয় সেখানে শিল্পকর্ম, সাহিত্য নিয়ে ভাল কিছু আশা করা অন্যায়। বিশেষকরে সিনেমা জগতে।
২০০১ সালে তৈরি হলিউডের ছবি Black Hawk Down অনেক কিছুই পরিষ্কার করে দিয়েছিল দেশটার সমসাময়িক আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা। এরপর সোমালিয়ার উপর তেমন কোন খবর বাজারে আসেনি যা আগ্রহের সৃষ্টি করতে পারে।

ডালাস হতে লন্ডন হিথ্রোগামী বিমানে প্রায় ৯ ঘণ্টার মত সময় বায় করতে হয়। প্রচুর সময়। তেমন কিছু করার না থাকলে রাজ্যের বিরক্তি এসে চেপে ধরে।
বরাবরের মত এ যাত্রায়ও ম্যারাথন মুভি দেখে সময় পার করেছি। এয়ারলাইন্সের আর্কাইভে অগুনিত মুভি জমা থাকে, যার অনেক গুলোই সদ্য মুক্তি পাওয়া।
আর্কাইভ ঘাটতে গিয়ে দেখা পেলাম The Gravedigger's Wife মুভিটার। এবং এক কথায় মুভির টাইটেল ছবিটার দেখে দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল। আফ্রিকার কোথাও!
এবং ভুল হয়নি আমার ধারণায়। জিবুতির দৃশ্যপটে সোমালিয়ান মুভি। অর্থায়নে ছিল ফ্রান্স, জার্মানি ও ফিনল্যান্ড।

ইদানীং ফেইসবুকের সৌজন্যে দক্ষিণ ভারতের কোপা শামশু কোপা টাইপের মুভি ট্রেলার দেখতে গিয়ে ঐ অঞ্চলের মুভির প্রতি একধরণের বিতৃষ্ণা জন্ম নিয়েছে। হালকা পাতলা টাইপের এক নায়ক যখন ২০০ কিলো ওজনের দুম্বা মার্কা একজনকে আকাশে উঠিয়ে চরকির মত ঘুরায়, মুভি দেখার ইচ্ছারই কেবল মৃত্যু হয়। ঐ দুম্বা মার্কা কালা মানিকের না। বিভিন্ন কারণে হলিউড ছাড়া অন্য যে কোন দেশের মুভি দেখার ইচ্ছা বাদ দিয়েছি। অনেকে বলবেন আমার দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতার কথা। তথাস্তু, মেনে নিচ্ছি।
The Gravedigger's Wife মুভিটা বদলে দিয়েছে সে ধারণা।
ছবির নায়ক গুলেদের পেশা লাশের জন্যে কবর খোঁড়া। স্ত্রী নাসরা ও ছেলে মাসাদকে নিয়ে থাকে জিবুতির আউটস্কার্টে। গুলাদ সহ একদল ডিগার হাসপাতালের সামনে অপেক্ষায় থাকে লাশের। কষ্টের জীবন ওদের। গুলাদের স্ত্রী নাসরা অসুস্থ। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনা। ছেলে মাসাদকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দুজনের। ওরা বেঁচে থাকে স্বপ্নকে আঁকড়ে। ডাক্তার সময় বেধে দেয় নাসরার জীবন-মৃত্যুর। শেষ চেষ্টা হিসাবে গুলাদ রওয়ানা দেয় ফেলে আসা নিজ গ্রামে। ঐ গ্রামে যেখান হতে সে নাসরার হাত ধরে পালিয়ে এসেছিল।
আমার বিচারে কাহিনীই মুভির একমাত্র আকর্ষণ না, এর চিত্রায়ন, অভিনয়, সবকিছু মিলে মগজে গেঁথে যাওয়ার মত অনন্য এক সৃষ্টি।
মূল মুভি সোমালিয়ান ভাষায়, ইংরেজি সাব-টাইটেলে এর বিষয়বস্তু বুঝতে একটু অসুবিধা হয়। এটাই মুভির একমাত্র মন্দ দিক।
সব মিলিয়ে দেখার মত একটা মুভি।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন