ভাল আছি ভাল থাইকেন, আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিয়েন...

Submitted by WatchDog on Thursday, August 26, 2021

মগরেব আলীর সাথে পরিচয়টা হঠাৎ করেই। নিজকে একজন অলৌকিক শক্তিধর কবিরাজ হিসাবে পরিচয় দেয় সে। আমার সাথে পরিচয়ের প্রথম প্রহরে তাই বলেছিল।
খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করতাম কেউ একজন আমাকে ফলো করছে। দিনরাত সারাক্ষণ। বাসা হতে বের হওয়ার সাথে সাথে কাছে আসার চেষ্টা করে। দুপুরের খাবার খেতে এলেও দেখি সে সুলতান ফকিরের দোকানে বসে আছে। আমাকে দেখলে উঠে দাঁড়ায়। কি যেন একটা বলতে চায়।

কৌতুহল দমাতে না পেরে আমার সার্বক্ষণিক ব্যাট্ম্যান আক্কাস আলীর কাছেই জানতে চাইলাম লোকটার পরিচয়।
সেও লক্ষ্য করেছে মগরেবের চলাফেরা। কেমন রহস্যময় ও সন্দেহজনক।
অনেকটা গলাধাক্কা দিয়ে আমার সামনে ফেলেদিল মগরেবকে। আক্কাস চড়-থাপ্পর মারার প্রস্তূতি নিতে তাকে থামিয়ে দিলাম। রিক্সায় উঠার আগে জানতে চাইলাম কি উদ্দেশ্য নিয়ে ছায়ার মত আমাকে ফলো করছে।
বললো কিছু প্রাইভেট কথা আছে। সবার সামনে বলা যাবেনা। আমার ইজ্জতে নাকি আঘাত আসতে পারে।
কৌতুহল আরও বেড়ে গেল। রিক্সায় উঠার অনুরোধ করতে সে অসহায়ের মত তাকালো। ভয় পেয়েছে সে। তবে আমাকে নয়, আমার হাউন্ড ডগ আক্কাস আলীকে।
অভয় দিয়ে রিক্সায় উঠালাম।

ব্যবসাটা আমাদের পারিবারিক। গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের দায়িত্ব নিতে সুদূর অস্ট্রেলিয়া হতে সাময়িক বিরতি নিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। প্রায় ৩০০'শর মত শ্রমিক নিয়ে দৈনন্দিন উঠাবসা। এখানে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্নও আছে। উদ্বিগ্ন মা তাই জোর করে আক্কাস আলীকে নিয়োগ দিয়েছে। কেবল বাথরুমে গেলেই তার সাথে দেখা হয়না। বাকি সময় ২৪/৭ আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় গোয়েন্দা রিপোর্ট দিয়ে আমাকে আস্বস্ত করে।
মগরেবকে রিক্সায় উঠানোটা সে মোটেও পছন্দ করেনি। আমার দিকে অসন্তুষ্টির দিকে তাকাতে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
রিক্সায় বসেই মগরেবকে জিজ্ঞেস করলাম আমার সাথে তার প্রয়োজনের কথা।
উত্তরে জানাল, এখানে বলা যাবেনা কারণ রিক্সাওয়ালা স্বাক্ষী হয়ে যাবে।
আমি রহস্যের গন্ধ পেলাম।

কারখানার মূল ফটকে দাড়োয়ানও অবিশ্বাসের চোখে তাকাল আমার দিকে। আমি ইশারা দিতে শান্ত হল।
অফিসে ঢুকতে দরজা বন্ধ করতে অনুরোধ করল মগরেব।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই করলাম।
এবার ভনিতা বাদ দিয়ে কাজের কথায় আসতে অনুরোধ করলাম।

খুব সিরিয়াস হয়ে মগরেব আমার কানের কাছে সরে এলো।
ধমক দিয়ে নিশ্চিত করলাম এমনটা করার কোন প্রয়োজন নাই। অফিসে বিনা অনুমতিতে কারও প্রবেশের সম্ভাবনা নেই।

- মামা, আপ্নের চিকিৎসা দরকার। বয়স হইতাসে। দেরী করলে এই রোগের উপসম হইবো না।
- আমার চিকিৎসা দরকার, বাইঞ্চু* তুরে কে কইসে?
- তার কথা পরে। তয় আমার কাছে রোগের তাবিজ আছে। বাম বাহুর গোড়ায় বাইন্ধা রাখবেন। তাবিজ পানিতে চুবাইয়া সেই পানি দিনে তিনবার পান করবেন। অপনে ঘোড়ার মত শক্তিশালী হইবেন।
- মায়রে বাপ, সব বুঝলাম, তয় আমার রোগটা কি?
- আপনেরে দোষ দেইনা। এমন রোগের কথা মুখ ফুইট্টা বলতে লজ্জা লাগারই কথা।
ভাবলাম পাছায় একটা লাথি দিয়ে তাকে আক্কাসের হাতে তুলে দেই।
আমি জানি আক্কাস হাতে মুগুর নিয়ে দরজার বাইরে অপেক্ষায় আছে।

হঠাৎ করে কেন জানি উপভোগ করতে শুরু করলাম মগরেবের কথাবার্তা। এমন কারও সাথে জীবনে কথা হয়েছে কিনা মনে করতে পারলাম না।
আক্কাসকে ডেকে চা দিতে বললাম।

- পাশের বাসার ব্যাংকের ম্যানেজারের বউ আমাকে খবরটা দিছে। কইছে, চিকিৎসায় ভাল ফল পাইলে তুই অনেক বকসিস পাবি।

একটু অবাক হলাম। পাশের বাড়ির ম্যানেজারের স্ত্রী আমার চিকিৎসা চায়, ব্যপারটা একটু ঘোলাটে মনে হল।
দুই সন্তানের জননী বরিশালের এই মহিলা এলাকার পুরুষদের হ্রদকম্পন তোলায় একাই একশ। শারীরিক আবেদন এবং আটসাট পোশাকের জন্য একনামে সবাই চেনে তাকে।
মহিলার ছোট মেয়ের নাম পামেলা। আক্কাসই তার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, পামেলার মার ইচ্ছার কথাটা। তার আরও ৩ বোন। তারা প্রায়ই বরিশাল হতে এখানে বেড়াতে আসে।
তাদের একজনের সাথে আমার বিয়ে নিয়ে আগ্রহ পামেলার মা কোনদিন লুকায়নি।
মাঝে মধ্যে দাওয়াত দিয়ে পরিচয় করিয়ে দেওয়ারও পরিবেশ তৈরী করেছিলেন। তরুনীর সান্বিধ্য আমিঃ উপভোগ করিনি বললে অন্যায় হবে। তবে বিয়ের প্রসঙ্গ এলে আমি সবসময় শিং মাছের মত পিছলে গেছি। এসে উড়িয়ে দিয়েছি অনেকবার।

- তাবিজের পানি দিনে ৩ বার পান করলে সাত দিনের ভেতর রেজাল্ট পাইবেন।
এবার আমি উপভোগ করতে শুরু করলাম মগরেবের আসমানী কথা বার্তা।
- দুই ঘণ্টা স্ত্রী সহবাসে সমর্থ হইবেন।
- তুরে কে কইল আমি ২ ঘণ্টা সহবাসে ইচ্ছুক? এত লম্বা সময় ধরে একজনের সাথে ঘষাঘষি আমি মোটেও উপভোগ করিনা। বিরক্ত লাগে।
- মামা, স্ত্রীরে আজীবন ধইরা রাখতে চাইলে আমার তাবিজের কোন জবাব নাই।
- আরে মাদানির পোলা মাদানি, তুরে কেডা কইসে আমি আজীবন আমার স্ত্রীরে ধইরা রাখতে চাই! এক স্ত্রী গেলে আরেকজন আইবো, এটাই তো উপভোগের জীবন।
মগরেবকে ব্যথিত দেখালো। মার্কেটিং সুবিধার দিকে এগুচ্ছেনা দেখে হতাশ হয়ে পরল।
- হারামজাদা, তুই কয়ডা বিয়া করছস?
- সর্বসাকুল্যে তিনডা। আগের দুইডা তালাক দিয়ে বাপের বাড়ি ফিরা গেছে।
- আরে কবিরাজের বাচ্চা কবিরাজ, নিজের বউ ধইরা রাখতে পারসনা, আবার আইছস আরেকজনের বৌ ধইরা রাখার মন্ত্র নিয়া।
- রেজিনা আপাতো কইল, আপ্নের সমস্যা আছে। তাই বিয়া শাদি করতে শরমিন্দা হন।
পামেলার মা'র নাম রেজিনা কবিরাজের মুখ হতে প্রথম শুনলাম। বোনকে আমার গলায় ঝুলাতে না পেরে কবিরাজ লেলিয়ে প্রতিশোধ নিতে চাইছে বুঝতে অসুবিধা হলনা।

মগরেবের হাতে বড় অংকের কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম তাবিজের মারফতি।
হরহর করে বলে দিল সবকচিছু।
তার এক সন্তান মাদ্রাসায় পড়ে। আরবীতে তার ভাল দখল। পড়ার পাশাপাশি লিখতেও পারে। তাকে দিয়েই কাগজে কিছু লিখিয়ে নেয়। হক সাহেবের স'মিল হতে তাবিজের অন্যতম ইনগ্রেডিয়েন্ট কাঠের গুড়া যোগার করে। মেশানোর কাজটা রাতের অন্ধকারে করে যাতে ছেলেমেয়েরা বুঝতে না পারে।
রেজিনার মত গৃহবধুরাই নাকি তার মূল গ্রাহক। স্বামী বশ হতে শুরু করে অন্যের সংসার ভাঙ্গানীর মত নষ্ট কাজে ব্যবহার করে মগরেবের তাবিজ।
কাজ দেয় তাবিজ, এমনটাই মগরেবের দাবি।
ঘণ্টা খানেক সময় ব্যয় করার পর আক্কাসের হাতে তুল দিলাম মগরেব কবিরাজকে।

আরও অনেক পরে জেনেছিলাম আমার ফুলটাইম ব্যাট্ম্যান আক্কাসও মগরেব কবিরাজের রুগী।

সকাল ১১টার পর আমাদের এলাকা এমনিতেই নীরব হয়ে যায়। পুরুষরা চলে যায় কর্মক্ষেত্রে। ছেলেমেয়েরাও থাকে স্কুল কলেজে। এমন সময়টাই রেজিনাদের সময়। ওদের গসিপ কারখানায় গণউৎপাদের মোক্ষম সময়।

সুযোগটা নিলাম আমি। পামেলার মা তথা রেজিনার সাথে কথা বলার তাগাদাটা আমাকে কিছুদিন নিদ্রাহীন রেখেছিল।
নক করতে আলুথালু পোশাকের রেজিনা নিজেই দরজা খুলে দিল।

- আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল রেজিনা।
- আমার সাথে? কি কথা?
- আমি কিছু লুকাবোনা। যা বলার সরাসরিই বলবো। আপনাকে আমার অনেক পছন্দ।
- এসব আপনি কি বলছেন?
- রাজী থাকলে আমরা কোথাও রাত কাটাতে পারি। ঢাকার সোনার গা হোটেল আমার খুব পছন্দ। যেমন সুন্দর তেমনি নিরাপদ।

মহিলা থ হয়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। হয়ত বুঝার চেষ্টা করছিলেন এসব কথার সূত্র ও উদ্দেশ্য।

- আর যদি বিয়ের কথা বলেন, তাহলে আপনার বোনদের কাউকে নয়, বরং আপনাকে করতেই আমার আগ্রহ।
- আপনি বাড়ি যান। সূস্থ হলে কথা বলা যাবে।
- তবে বিয়ে করার শর্ত হবে; স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তানদ্বয় তার ঘাঁড়ে চাপিয়ে আমার সাথে যেতে হবে

থর থর করে কাঁপতে শুরু করলেন মহিলা। মনেহল চীৎকার করে উঠবেন। উঁচু গলায় কিছু একটা বলতে শুরু করলেন।
দৃশ্যের সামনে এসে আক্কাস আলী সাবধান করেদিল তার মনিবের সামনে এমন চীৎকার না করতে।

ইটের বদলে পাটখেল খেলাটা জমে উঠার আগেই আমি রণেভঙ্গ দিলাম। ভেবে স্বস্তি পেলাম মগরেব কবিরাজের অতিরিক্ত কিছু আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করতে পেরে।

প্রায় দেড় বছর পর রোববার রাতে একটা ফোন পেয়ে চমকে উঠলাম। থাকি সিডনির মারুবরা এলাকার এনজাক পেরেডের উপর একটা ফ্লাটে।
পামেলার মা, ওরফে রেজিনার ফোন।
স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। পুরানো ইচ্ছাটা জীবিত থাকলে দেশে ফিরে আসতে হবে আমাকে। বিয়ে করতে চাইলে এটাই মোক্ষম সময়।

আমি জানি রেজিনা চাইলে যে কাউকে বিয়ে করতে পারে। অনিত্য সুন্দরী মহিলা সে। ভাল মা। কিন্তু দোষ ছিল একটাই, গসিপ।

উত্তর আমি শুধু বললাম, ভাল আছি ভাল থাইকেন...আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিয়েন...

ভালো লাগলে শেয়ার করুন