কেন সেক্টর কমান্ডারদের দাবী কোন দিন পুরন হবে না ?

Submitted by Visitor (not verified) on Tuesday, April 1, 2008

(ওয়ারক্রাইম ট্রাইবুনাল করে সেক্টর কমান্ডাররা যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের যে দাবী জানাচ্ছেন সেই দাবী বাংলাদেশের পক্ষে আইনি জটিলতার কারনে পুরন করা সম্ভব না। এমন কি সরকার চাইলেও না। পড়ুন বিস্তারিত)

ইন্টারন্যাশনাল ওয়ারক্রাইম ট্রাইবুনাল গঠন করে বাংলাদেশ এর পক্ষে যুদ্ধাপরাধের বিচার করা সম্ভব না। এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন কেন না? এইটা বুঝতে হলে প্রথমে বুঝতে হবে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধ হয়েছে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধে। বাংলাদেশের সাধীনতা যুদ্ধ হয় ১৯৭১ সালে এবং জাতিসংঘ ও পাকিস্থান বাংলাদেশকে সীকৃতি দেয় ৭৪ সালে। তার মানে ইন্টারন্যাশনাল ল এর মতে যুদ্ধটা হয়েছিল পাকিস্থান আর ইন্ডিয়ার মধ্যে আর পাকিস্থানে সিভিল ওয়ার হয়। তো এই যুদ্ধে পাকিস্থান পরাজিত হয়। আর এই কনসেপ্টটা অর্থাত পাকিস্থান আর ইন্ডিয়ার মধ্যে যুদ্ধ আর পাকিস্থানে সিভিল ওয়ার এইটা কিন্ত ল এর দৃষ্টিতে শুধু নয়। ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ড তাদের এনসাইক্লোপীডীয়া, হিস্ট্রি বুক ইত্যাদিতেও এই কথা গুলি লিখেছে। এইখানে আমি একটি উদাহরন দিচ্ছি, ইংল্যান্ডের  Oxford Dictionary of World History  এই বইয়ে বাংলাদেশের সাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে বলা হয়েছে, In 1966 the Awami League put forward a demand for greater autonomy which it proposed to implement after its victory in the 1970 elections. In March 1971, when this demand was rejected by the military government of Pakistan, civil war began, leading to a massive exodus of refugees to India. India sent help to the East Pakistan guerrillas (the Mukti Bahini). In the war of December 1971, Indian troops defeated the Pakistan forces in East Pakistan. The independence of Bangladesh was proclaimed in 1971 and recognized by Pakistan in 1974.তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ল্ডের চোখে যুদ্ধটা হয়েছে পাকিস্থান ও ইন্ডিয়ার মধ্যে। ( এই পর্যায়ে আমাকে ভুল বুঝবেন না , আমি এগ্রি করিযে ৭১ এ লিবারেশন ওয়ার হয়েছে, এখানে আইনের চোখে লিখছি)যাই হোক এখন আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, যে যুদ্ধে বাংলাদেশ কোন পক্ষই না সেই যুদ্ধে বাংলাদেশ কিভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইবে বা করবে? এইটা আইনের চোখে অবাস্তব ব্যাপার।এখন এই ব্যাপারটা আরো ক্লিয়ারলি বুঝতে হলে দেখতে হবে ৭১ এর পরপর কি হয়েছিল। ৭১ এর যুদ্ধের পর, যখন বাংলাদেশ পাকিশ্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দী সেনাকে বিচার করতে চায়, তখন পাকিস্থান হেগ ইন্টারন্যাশনাল কোর্টে একটা কেইস করেযে, বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারবেনা কেননা ৭১ সালে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশ নামের কোন দেশের অস্তিত্তই ছিলনা এবং এই যুদ্ধে বাংলাদেশের কোন পার্টিসিপেশন নাই। এই কেইসের কারনেই বাংলাদেশ অই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করতে পারেনি। এই কেইসটি চলছিল এবং যখন পাকিস্থান ইন্টারন্যশনাল প্রেসার এর মাধ্যমে গ্যারান্টি পায় যে তাদের ১৯৫ জন সেনাকে বিনা বিচারে ফেরত নেয়া যাবে তখন ই  পাকিস্থান এই কেইসটি উইথড্র করে । এরপরপরই ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ১৯৫ জন সেনাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তো আদৌ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ওয়ারক্রাইম ল এর মাধ্যমে ট্রাইবুনাল গঠন করে যুদ্ধপরাধির বিচার করতে পারে কিনা সেই ব্যাপারটি অমিমাংসিত থেকে যায় এবং এরপর ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে পাকিস্থানী সেনাদের ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ক্রাইম আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বাংলাদেশ যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে চায় তবে একটা টাইমমেশিন আবিস্কার করে চলে যেতে হবে ১৯৭৪ সালে, এরপর সিমলা চুক্তি ও ত্রিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করতে হবে। টাইম মেশিন ছাড়া এইটা সম্ভব না কারন এই চুক্তি গুলি ইমপ্লিমেন্টশন হয়ে গেছে।  তারপর ইন্টারন্যশনাল কোর্টে কেইস আবার চালুকরতে হবে যেটা বলবে বাংলাদেশ আদৌ যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে পারবে কিনা। যেটা টাইমমেশিন আবিস্কার ছাড়া সম্ভব না। আর পাকিস্থান এইটা কোনদিন করতে দিবেনা কেননা বাংলাদেশ যদি ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার ল মতে বিচার করার সুযোগ পায়, তাহলে তো বাংলাদেশ তাদের ১৯৫ জন সেনাকে বিচার করতে পারবে।

যাইহোক এইবার আসি রাজাকারদের ব্যাপারে, কলাবরেটর আর যুদ্ধাপরাধ এই দুইটি সমপুর্ন ভিন্ন জিনিস । এই কথাটা আমাদের বুদ্ধিজিবীরা বুঝেন না কেন? রাজাকাররা যদি যুদ্ধাপরাধী হত তাহলেতো মুজিব সরকার তাদের কলাবরেটর আইনে বিচার করতো না। তাদের আন্তর্জাতিক আইনে বিচার করতো।

আর ৭১ এর পর রাজাকারদের বিচারের জন্য যে দালাল আইন প্রনয়ন করা হয়,সেটি ছিল দুনিয়ার ইতিহাসে একটি অন্যতম কালাকানুন এবং মানবাধিকার ও সভ্যতার পরিপহ্নি। তখনি দেশ বিদেশে এর সমালোচনার ঝড় উঠে। হলিডে সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান, আওয়ামীলীগ নেতা ও মুজিবের সমসাময়িক নেতা আবুল মনসুর আহমদ, মইনুল হোসেন প্রমুখরা এই আইনের বিরুদ্ধে এর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে কলাম লেখেন। হাজার মানুষকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে পুরে রাখা হয়। কোন কোন আসামীকে আইনজীবিদের হেল্প নিতে দেয়া হয়নি। প্রহসন মুলক বিচার করা হয়। ব্যাপক অসন্তোসের মুখে মুজিব এক পর্যায়ে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা (৪টি অপরাধ ছাড়া) ও জিয়া এই আইন বাতিল করেন। এই আইন পুনর্জীবিত তো দুরের কথা এই আইনে ক্ষতিগ্রস্তরা যদি ক্ষতিপুরন মামলা করেন তাহলে সরকারের অবস্থা হবে ভিক্ষা চাইনা কুত্তা সামলাও। আর একটা কথা মনে রাখতে হবে রাজাকারদের অলরেডি বিচার হয়ে গেছে। বিচারের পর তারা কয়েক বছর শাস্তি পায় এবং পরে মুজিব ও জিয়া তাদের মুক্ত করে দেন। এখন আবার তাদের বিচার চাওয়া একটি চরম হাস্যকর বিষয় নয়কি ? দুনিয়ার ইতিহাসে কোথাও শুনেছেন যাদের একবার বিচার হয়ে , শাস্তি পেয়ে  এবং সাধারন ক্ষমা পেয়েছে। তাদের আবার বিচার করতে। এই ধরনের দাবী করা কোন সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব না। আর তারপর ও তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম (যদিও অসম্ভব) বাংলাদেশ যদি ইন্টারন্যাশনাল আইনে রাজাকারদের বিচার করতে চায়, তাহলে এই যে কলাবরেটর আইনে একবার বিচার হইল। সাধীনতার পর লক্ষাধিক লোককে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে রাখা হল। বা বিচারের পর ও অনেক জেল জরিমানা হয়েছে তারা যদি ক্ষতি পুরন মামলা শুরু করে পুরো বাংলাদেশকে বেচে দিলেও সেই টাকা আদায় হবে না ।

তবে তারপরও যদি কেঊ ৭১ সালে সংঘটিত কোন অপরাধের বিচার চায় , তাদেরকে সরকার আবার সুযোগ দিচ্ছে প্রচলিত আইনে কেইস করার । তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে কেইস কিন্তু উভয় পক্ষে হতে পারে।একদিকে মুক্তিযোদ্ধারা বা তাদের আত্মীয়রা করতে পারে অন্য দিকে বিহারী বা ৭১ এর অব্যহিত পরে যে হাজার হাজার মানুষকে রাজাকার সন্দেহে হত্যা করা হয় তারাও করতে পারে। এর এতদিন আগের অপরাধ প্রমান করা এক কথায় অসম্ভব ব্যাপার।

আর এই ব্যাপারগুলি আমাদের সরকার বুঝতে পেরেছেন বলেই, এত আন্দোলেনের (এমন কি জেনারেল মইনুদ্দিনও যদ্ধাপরাধের বিচার চাইছেন) পর ও চিফ এডভাইজার ফখরুদ্দিন সাহেব বার বার বলতেছেন সংক্ষুব্ধরা চাইলে কোর্টে কেইস করতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারগুলা আমাদের সেক্টর কমান্ডারদের মাথায় ঢুকতেছে না নাকি তারা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা ক্রিয়েট করে মার্শাল ল আনতে চান? 

ভালো লাগলে শেয়ার করুন