রাজনীতি ও তার 'সন্মানিত' চোরের দল

Submitted by WatchDog on Thursday, May 21, 2009

Bangladeshi

ভাষার ঘোর মারপ্যাচে বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিভিন্ন বিশেষনে ভূষিত করে এর মহিমা কীর্ত্তন করতে রাজনীতিবিদ্‌দের পাশাপাশি কাজ করে থাকে তাদের প্রপাগান্ডা মেশিন। এই চক্রের ধান্ধায় যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে, তাত্ত্বিক সংজ্ঞায় রাজনীতি তথা রাজনীতিবিদ্‌দের আসল পরিচয় কবর দেয়ার এই হীন মানষিকতার আড়ালে কাজ করে অন্য এক মিশন, যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট হচ্ছে পকেট পূর্তি। রাজনীতির স্বরলিপিতে গান গাইতে চাইলে আসুন এমন একটা জায়গা ঘুরে আসি যেখান চর্চা হয় আসল রাজনীতি। বাংলাদেশের একটা জেলা শহর, তার যে কোন একটা নাম থাকতে পারে। উদাহরনের জন্যে আমার নিজ জেলা শহরকেই হাজির করব।

শিল্প, ব্যবসা এবং কৃষির সমাহারে আমাদের জেলা শহরের গড় অবস্থান বাংলাদেশের যে কোন জেলা হতে বেশ এগিয়ে। এক কথায়, এ শহরে পয়সা উড়ে বেড়ায়। এবার আসুন শহরের বিশেষ গন্যমান্যদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেইঃ

১) সংসদ সদস্যঃ অলিউল্লাহ কসাই (কাল্পনিক নাম)। দ্বিতীয় শ্রেনী পর্য্যন্ত লেখাপড়া। কর্মজীবন শুরু করতে বাধ্য হয় অতি অল্প বয়সে। ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসাবে শুরু। পরবর্তীতে জুটমিলের শ্রমিক এবং শ্রমিক সর্দার। সেই যে শুরু এবং সে উত্থানের আর শেষ হয়নি। কথিত আছে ইটের ভাটায় কাজ করার সময় ভাড়াটে খুনী হিসাবে উপরি পয়সা কামাতেন আমাদের কসাই সাহেব। খুন করে ভাটার আগুনে পুড়িয়ে প্রমান নিশ্চিহ¡ করতে তার জুড়ি ছিলনা। তার সার্ভিস নিতে ঢাকা হতে অনেক রুই-কাতল আসত বলে শোনা যায়। অকুতভয় এ খুনী সর্দার ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয় শ্রমিক মহলে, ফলশ্রুতিতে তৈরী হয় বিশাল এক সমর্থক এবং কর্মী বাহিনী। প্রথমে পৌরসভার কমিশনার, তারপর ভাইস-চেয়ারম্যাম এবং সবশেষে চেয়ারম্যান। রাজনীতির ধারাপাত এভাবেই শুরু। জেনারেলে জিয়া তখন অসৎ লোকের খোজে দেশ চষে বেড়াচ্ছেন, স্বভাবতই আমাদের অলিউল্লাহ কসাই উনার নেক নজড়ে চলে আসেন। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়, সংসদ সদস্য। ইতিমধ্যে ৫ বিবি এবং তাদের গর্ভে ১৭ সন্তান নিয়ে বিশাল এক হ্যমিলনের বংশীবাদক বাহিনী তৈরী করে ফেলেছেন। যদিও অবৈধ সম্পদ লুটপাটের ভাগাভাগিতে তার ৫ সন্তানকে প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ দিয়ে হয়। শহরের ত্রাশ আমাদের কসাই এবং উনার কসাই বাহিনী। স্থানীয় ব্যবসা-বানিজ্য, শিল্প-কারখানা, বাসষ্ট্যান্ড, গরুর হাট, নদী পারাপারের গুদারা ঘাট, ভারতীয় শাড়ির চোরাই ব্যবসা, এ রকম আরও গোটা দশেক উৎস হতে নিয়মিত বখরা পেয়ে আয়েশে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন আমাদের সংসদ সদস্য সাহেব। বেশ ক’বার হজ্ব করেছেন, যদিও নিন্দুকেরা বলে থাকে হজ্ব নয়, বরং বিনা শুèে সোনা আনাই ছিল হাজী সাহেবের উদ্দেশ্য। উনার নিজে বাড়িতে চোলাই মদ তৈরীর কারখানা, এ ব্যাপারে উনার ভাষ্য খুব পরিস্কার; ১৭ সন্তান এবং উনার ব্যক্তিগত চাহিদা পূরন করার মত যথেষ্ট মদ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়না। প্রতি সন্ধ্যায় মদের আসরে প্রথম গ্লাসটা উনি নিবেদন করতেন উনার দীক্ষাগুরু জেনারেল জিয়ার নামে।

২) পৌরসভার চেয়ারম্যানঃ আবদুল হাকিম সরকার (কাল্পনিক নাম): লেখাপড়ার দৌড় কতটুকু কেউ জানেনা। কর্মজীবন শুরু বাসের হেল্পার হিসাবে। অতি রুক্ষ্ন মেজাজ এবং পয়সা চুরির কারণে একদিকে যেমন বিশাল বাস শ্রমিক সংগঠনে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন, অন্যদিকে গোপনে স্থানীয় জুটমিলে সাপ্লাই কাজ শুরু করে পকেট ভরতে শুরু করেন। হিংস্র এক নেকড়ে বাহিনী গড়ে তুলে শহরে আলোড়ন ফেলে দেন। কথায় কথায় খুনের হুকুম দিয়ে উনি অতি অল্পতেই ঢাকায় আওয়ামী লীগের নজড় কাড়তে সমর্থ হন। অলিউল্লাহ কসাইকে সামাল দেয়ার জন্যে হাকিম সাহেবকেই যোগ্য লোক মনে করত আওয়ামী লীগের সেন্ট্রাল কমিটি। চেয়ারম্যান হাকিমের ৪/৫টা ইটের ভাট, গোটা পাচেক ঠিকাদারী কোম্পনী যারা পৌরসভার সমস্ত নির্মান কাজ করে থাকত। স্থানীয় থানা হতে কমিশন, বাজারের দুধ পট্টি, কলা পট্টি, সবজি পট্টি সহ সব অলিগলি হতে চাঁদা আদায়ের জন্যে হাকিম সাহেবের রয়েছে বিশাল বাহিনী, সবাই সসস্ত্র এবং বিপদ জনক। হাকিম সাহেবের সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য আয়ের উৎস ছিল হিন্দু কম্যুনিটি। যে কোন হিন্দু বিয়েতে চেয়ারম্যান চাঁদা নির্দিষ্ট থাকত, যার পরিমান নূন্যতম ৫০ হাজার। চেয়ারম্যান সাহেবের ঢাকার নিকেতনে বিলাসী একটা ফç্যাট ছিল, যেখানে প্রতিরাতে জুয়ার আসর বসত। ঐ ফçাটে উনি রক্ষিতা রেখে উনি উপভোগ করতেন অন্য এক জীবন। নিজকে সন্ত্রাষীর পিতা দাবি করতে ভীষন ভালবাসতেন।

উপসংহারঃ
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা করা যেতে পারে। আওয়ামী ফ্যাশিজম আর বিএনপি জাতীয়তাবাদ নিয়ে দিনকে রাত আর রাতকে দিন করা যেতে পারে। কিন্তূ এ দেশের গ্রামে গঞ্জে রাজনীতির নামে যে সব বর্বর এবং বর্বরতার জন্ম দেয়া হয়েছে তার মূল উৎপাটন না করে তত্ত্ব আর ব্যক্তিপূজার খেমটা নাচ নেহাতই ছেলেমানুষী।

রাজনীতির এ করুন চিত্র শুধু একটা জেলা শহরে নয়, এর ব্যাপ্তি বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। সমাজকে পংগু বানাতে এবং ভবিষৎ প্রজন্মকে আতুরঘরে সমাহিত করতে রাজনীতির নামে যে ক্যান্সার বাংলাদেশের পথে প্রান্েত ছড়ানো হয়েছে/হচ্ছে তার জন্মদাতা এবং ধর্মমাতাদের পূজা করার অপরনাম অপরাধ।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন