'Mr Gorbachev, tear down that wall...'

Submitted by WatchDog on Saturday, September 21, 2019

ঐতিহাসিক বার্লিন ওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আমার কোন ছবি তোলা হয়নি। তবে ঐ দেয়ালটা আমি বহুবার অতিক্রম করেছে। কম করে হলেও ২০ বার। অধিকাংশ সময় পায়ে হেটে, দু'একবার ট্রেনে চড়ে। ঐ দেয়ালেরও একটা ইতিহাস আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুন তখনো দাউ দাউ করছে জ্বলছে গোটা ইউরোপ জুড়ে। মিত্র বাহিনীর সাড়াশি আক্রমনে ছোট হয়ে আসছিল হিটলারের পৃথিবী। পূর্ব হতে সোভিয়েতরা পশ্চিম হতে মিত্র বাহিনীর মার্কিন ও বৃটিশ অংশ। ১৯৪৫ সাল। হিটলার ম্যাডনেস হতে মুক্ত হয়েছে গোটা বিশ্ব। পোস্টড্যাম চুক্তির আওতায় জার্মানির দখল নেয় মিত্র বাহিনী। লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরী করা হয় কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফ্রান্স নিয়ন্ত্রন করবে জার্মানী, আনটিল সবার কাছে গ্রহনযোগ্য একটা জার্মান ফরমূলা তৈরী হবে। ১৯৩৭ সালের জার্মান টেরিটরিকে আনফিসিয়ালি আওতাভুক্ত করা হয় পূর্ব জার্মানীতে, যার নিয়ন্ত্রন চলে যায় সোভিয়েতদের হাতে। বাকি অংশ চারভাগে বিভক্ত করে মিত্র বাহিনীর চার দেশের উপর ন্যস্ত করা হয়। বার্লিনকে আনা হয় এই বিভক্তির আওতায়। চারদিকে পূর্ব জার্মানী, মাঝখানে বার্লিন শহর চারভাগে বিভক্ত। এভাবেই জন্ম নেয় দুই বার্লিনের; পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিন। সমাজতান্ত্রিক পূর্ব জার্মানীর নিয়ন্ত্রাধীন পূর্ব বার্লিন হতে দলে দলে মানুষ পালাতে শুরু করে ইঙ্গ-মার্কিন নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম বার্লিনে। ১৯৬১ সালে পূর্ব জার্মান সরকার বাধ্য হয় ঐতিহাসিক বার্লিন দেয়াল নির্মান করতে। উদ্দেশ্য তার নাগরিকদের পালানো রোধ।

গর্বাচেভের পেরেস্ত্রইকা ও গ্লাসনস্ত বদলে দিয়েছিল ইউরোপের মানচিত্র। খসে পড়তে শুরু করে ওয়ারশ প্যাক্ট অর্ন্তভুক্ত সোভিয়েত এলায়েন্স। খোদ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে জন্ম নেয় পনেরটি দেশের। বার্লিন ওয়াল, যাকে 'জার্মানরা ওয়াল অব সেইম' হিসাবে বিবেচনা করত ১৯৮৯ সালে শুরু হয় এর ডেমোলিশন। তৎকালিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন গর্বাচেভকে আহবান জানিয়েছিলেন, 'মি গর্বাচেভ, টিয়ার ডাউন দ্যাট ওয়াল'। সে দেয়াল আজ ঠাঁই নিয়েছে যাদুঘরে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের মূল ভিক্টিম ছিল ইহুদিরা। ইউরোপের দেশে দেশে প্রায় ১ কোটির মত ইহুদিকে হত্যা করেছিল হিটলার বাহিনী। গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা ছিল এর অর্ন্তভুক্ত। এই ইহুদিদের ভবিষৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষেই জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইহুদি রাস্ট্র ইসরাইল।

জেরুজালেম পেরিয়ে পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লায় প্রবেশের মুখেই চোখে পরবে দেয়ালটা। সলিড এন্ড এক্সট্রিমলি হাই। আমার বাসটা যখন রামাল্লায় ঢুকছিল ইসরাইলি পুলিশের কোন চাঞ্চল্য দেখা যায়নি। কিন্তু উলটো দিকের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। লম্বা লাইন। থেমে আছে ট্রাফিক। জলপাই পোশাকের ইসরায়েলি পুলিশ হাতে অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে পরখ করছ সবার পরিচয়। পরে রামাল্লায় ঢুকে স্থানীয়দের কাছ হতে জেনেছি কেবল ইসরায়েলে জন্ম নেয়া আরবদেরই অনুমতি আছে আসা-যাওয়ার। বাকিদের অনুমতি নেই। এক কথায় অবরোধে আছে পশ্চিম তীর। হিটলারের নির্মমতা হতে যে ইহুদিদের রক্ষার জন্যে গোটা বিশ্ব এক হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল, প্রতিষ্ঠা করেছিল ইসরায়েল রাস্ট্র, সে ইসরায়েল আজ হিটলারের ভূমিকায়।

মানবেতর জীবনে অভ্যস্ত প্যালেষ্টাইনিরাও আজ অপেক্ষায় আছে এমন একজনের, যে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেইগ্যানের মত বুক চেতিয়ে আহবান জানাবে, 'হে ইসরাইল, টিয়ার ডাউন দ্যাট ফ্রিকিং ওয়াল'

ভালো লাগলে শেয়ার করুন