ভালবাসার সাতকাহন

Submitted by WatchDog on Wednesday, August 12, 2009

আপনি কি অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাষ করেন? যদি না করেন নীচের গল্পটি পড়া শেষে হয়ত করতে শুরু করবেন। মার্কিন দেশের রৌদ্র ঝলমলে অংগরাজ্য ফ্লোরিডা। এই অংগরাজ্যের পোর্ট টাম্পা শহরের বাসিন্দা ইউলান্ডা সেগোভিয়া। কোন এক সুন্দর সকালে প্রতিবেশী স্টেসি সেভিজের গলা শুনে দরজা খুলতেই ইউলান্ডা অবাক। স্টেসির হাতে চমৎকার একটা কুকুর। জানা গেল কুকুটাকে সে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে এবং গলায় কোন বেলট অথবা মাইক্রোচিপস্‌ না থাকায় মালিকের কোন হদিস করতে পারছেনা। স্টেসি অনুরোধ করল কুকুরটা ইউলান্ডার বাসায় সাময়িক আশ্রয় দিতে। ৪৭ বছর বয়স্কা ইউলান্ডা, এক্‌কালের হেয়ার ড্রেসার, সর্বশেষ কাজ করেছিলে ২০০৬ সালের প্রথম দিকে। স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেছে অনেকদিন, ব্রেষ্ট এবং সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের বিরুদ্বে লড়াই করে জয়ী হতে গিয়ে প্রায় সর্বশান্ত। ইউলান্ডার দুই ছেলে, ১০ বছর বয়সী আইজেয়া এবং ২১ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ান। ক্রিস্টিয়ান ডাউন সিন্‌ড্রমের রুগী, সে বোবা এবং নিজ হাতে কিছু করার মত শারীরিক শক্তি নেই। আইজেয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাতে কুকুরটাকে সাময়িক আশ্রয় দিতে বাধ্যহল ইউলান্ডা।

আইজেয়া কুকুরটার নাম রাখল রাইলী, ওরা খুব দ্রুত একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল। বৈঠকখানায় রাইলীর শোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও ইউলান্ডা ঘুমিয়ে পরার সাথে সাথে রাইলী তার নিজের বিছনাটা টেনে আইজেয়ার রুমে নিয়ে নতুন বন্ধুর পাশে ঘুমিয়ে পরত। মা আইজেয়াকে সাবধান করে দিল রাইলীর ভালবাসায় না মজতে, কারণ এর মালিককে খোজা হচ্ছে, হয়ত খুব শীঘ্রই কেউ একজন তাকে নিতে আসবে। ইউলান্ডা এবং ষ্টেসি মিলে রাইলীর ছবি সহ ৪ হাজার প্রচার পত্র ছাপিয়ে প্রতিবেশীদের মেইল বক্সে বিলি করল। চারদিন পরেও রাইলীর দাবি নিয়ে কেউ এগিয়ে এলনা। অনোন্যপায় হয়ে ইউলান্ডা ক্রেগলিষ্টে পর্য্যন্ত বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্যহল। ইতিমধ্যে রাইলী বাড়ির সবার ভাল বন্ধু হয়ে গেল, আইজেয়া যতক্ষন বাসায় থাকত ওদের দু’জনকে কেউ আলাদা করতে পারতনা। রাইলী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকত প্রতিবন্ধি ক্রিষ্টিয়ানের দিকে, ক্রিস্টিয়ানও রাইলীর সান্নিধ্যে উৎফুল্ল হয়ে উঠত।

ক্রিষ্টিয়ান তার রুমে ভিডিওতে ’বার্নি’ ছবিটা দেখছিল, পাশে বসা রাইলী। মা ইউলান্ডা সিদ্বান্ত নিল বাগান পরিচর্যার কাজে বাইরে যাওয়ার। হঠাৎ করে রাইলীর গগনবিদারী চিৎকারে কেপে উঠল চারদিক, ইউলান্ডা কিছু বুঝে উঠার আগেই রাইলী বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে এল ভেতর হতে এবং শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে টানতে শুরু করল ইউলান্ডাকে। মার বুঝতে দেরী হলনা ক্রিষ্টিয়ানের কিছু একটা হয়েছে। অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে ক্রিষ্টিয়ান, নাক এবং মুখ দিয়ে রক্তের সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে।

ডাক্তার এবং হাসপাতাল হয়ে ক্রিষ্টিয়ান সূস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল। নিউরোলজিষ্ট জানাল আর মিনিট দু’এক দেরী হলে ক্রিষ্টিয়ানকে কিছুতেই বাচান যেতনা। পরিবারের জন্যে কিছু একটা করতে পারায় রাইলীকেও অত্যন্ত সূখী দেখাল। কাহিনীর এখানেই হয়ত শেষ হতে পারত, কিন্তূ হলনা। পরদিন সকালে কেউ একজন দরজায় নক করল।

ছ’ব্লক দূরের প্রতিবেশী র‌্যান্ডি ক্লিফ জানাল কুকুরটা আসলে তার এবং এর প্রকৃত নাম ওডি। বুক ভেঙে গেল সেগোভিয়া পরিবারের সবার। আইজেয়া বোবা হয়ে তাকিয়ে রইল রাইলী/ওডোর দিকে, ক্রিষ্টিয়ানের দু’চোখ গড়িয়ে কান্নার নদী বয়ে গেল। আর রাইলী! সে আইজিয়াকে জড়িয়ে ধরে কিছুতেই আলাদা হতে চাইলনা। ইউলান্ডাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওডিকে কোলে নিয়ে বের হতেই র‌্যান্ডি ভাল করে দেখল ক্রিষ্টিয়ানকে। কি মনে করে মার কাছে জানতে চাইল ছেলের খবর। ইউলান্ডা বিস্তারিত জানাল কি হয়েছিল আগের দিন। র‌্যান্ডি মুগ্ব হয়ে তাকাল তার অনেকদিনের সংগী ওডির দিকে, মুচকি হেসে এগিয়ে গেল ক্রিষ্টিয়ানের দিকে এবং কোল হতে নামিয়ে দিল ওডিকে। ওডি নিমষেই রাইলী বনে গেল, এক কোল হতে অন্যকোলে ঝাপিয়ে সেলিব্রেট শুরু করল পূনমিলন। ‘ওডি এখন তোমাদের, গত ক’বছরে এতটা সূখী আমি তাকে কখনো দেখিনি, ওর আসলে জন্মই হয়েছিল তোমাদের জন্যে’, র‌্যান্ডি মালিকানা হস্তান্তর করে বিষন্ন মনে মিলিয়ে গেল লোকালয়ে।

সূত্রঃ আমেরিকা অন লাইন

বাস্তব ঘটনাটার অনুবাদ আমার নিজের। কাহিনীর মূল অনুভূতিটুকু তুলে ধরতে পেরেছি বলে মনে হয়না। দুঃখিত।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন