৭ই জানুয়ারির নির্বাচন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ...

Submitted by WatchDog on Monday, January 1, 2024

(একান্তই নিজস্ব ভাবনা)

আজ সকালে বিভিন্ন দৈনিকের অন-লাইন ভার্সনে অনেক দেশের অনেকের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লম্বা কিছু তালিকা দেখলাম। কিন্তু এ মুহূর্তে (মার্কিন সময় রাত ৯টায়) সব কটা পোর্টাল হতে এসব একেবারে উধাও। সন্দেহ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছুর মত এ খবরও স্বদেশীদের কাছ হতে লুকাতে চাইছে। তবে যতই কানামাছি ভো ভো খেলা খেলুক না কেন হাসিনা সরকার স্যংশন আসবেই। এবং এ স্যাংশন হবে বহুমুখী যা হতে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আমলা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, ব্যবসায়ী কেউ বাদ যাবেনা।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি অর্থনৈতিক অবরোধ আশা করছিনা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাক্তি মালিকানাধীন ব্যবসার উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ খুবই সীমিত। যার কারণ মার্কিন সরকার ইরানের মত ব্যাপক কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে দেশটায় বাংলাদেশি পোশাক রফতানির উপর বিশেষ কোন প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয়না।
তবে পোশাক শিল্পের কর্মজীবীদের মাসিক মজুরি নিয়ে বাংলাদেশে যে আন্দোলন চলছে সে খবর এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। এ আন্দোলন তথা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারকে অজুহাত বানিয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিলেও অবাক হবোনা। এবং এমন নিষেধাজ্ঞা দিলে দেশটার প্রাইভেট সেক্টর এড়িয়ে যাবে এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। সস্তা শ্রম শোষণে বাংলাদেশের শিল্পপতিদের ভূমিকা নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া অনেক আগ হতেই সোচ্চার। মার্কিন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর জন্যে প্রফিট মুখ্য হলেও সে দেশে শ্রম আইনের কিছু বাধ্য বাধ্যকতা আছে যা হতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান গুলোও মুক্ত নয়। শিশু শ্রম তার অন্যতম।

সব বিচারে বাংলাদেশের জন্যে অপেক্ষা করছে খারাপ সময়। বিশেষকরে মাছ ভাগাভাগির মত নির্বাচনে সীট ভাগাভাগির বিষয়টা এখন স্ফটিকের মত পরিষ্কার। দেশটার সরকার এখন আর কোন কিছুই লুকোচুরির চেষ্টা করছেনা।

এখানে প্রশ্ন আসবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে। শর্ট টার্মে হয়ত জনগণ এর প্রভাব ততটা অনুভব করবেনা যতটা অনুভব করবে দেশের লুটেরা গ্যাং মেম্বারের দল। যদিও ইতিমধ্যে ঐ দেশ হতে অনেক লুটেরাই নিজদের বিনিয়োগ উঠিয়ে এনে তুলনামূলক নিরাপদ দেশে জমা অথবা বিনিয়োগ করেছেন।

লং টার্মে স্যাংশনের প্রভাব হবে সুদূর প্রসারী। মার্কিন সরকার এক অর্থে বাংলাদেশকে একঘরে করে ফেলবে। অন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অনেক কিছুই উন্মোচিত হবে সময়ের প্রবাহে। পাশাপাশি ভোকাল হবে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংস্থা গুলো। যেহেতু ঢাকাস্থ উন্নত দেশের দূতাবাস গুলোর প্রায় সবাই একযোগে কাজ করছে, ধরে নেয়া যায় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অনেক কিছুই প্রতিফলিত হবে ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া সহ আরও অনেক দেশের সিদ্ধান্তে।

তবে সব বিপদের মাদার অব বিপদ হবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের বাস্তবতা। বলাই বাহুল্য সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন, বৈধ চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠানোর প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকবে। এর জন্যে আওয়ামী লুটেরা সিন্ডিকেটের ভূমিকাকেই দায়ী করা যায়। কারণ হুন্ডি চ্যানেলের হর্তাকর্তার ভূমিকায়ও আছে এই সিন্ডিকেট।
এরপর আসবে বিদেশি ঋণ পরিশোধের তাগাদা। রিজার্ভ দিন দিন কমতে থাকলে চাপ বাড়বে আমদানির উপর। সংকুচিত হবে অন্যান্য বাজার।

বিপদে আওয়ামী প্রভু ভারত যে তাদের পাশে থাকেনা তা নতুন কিছু না। তবে দেখার বিষয় এতদিন লিপস সার্ভিস দেয়া চীন ও রাশিয়া কি ভূমিকা নেয়। চীন এমন এক দেশ যারা শুধু নেয়, কিছু দেয় না। দেশটার সাথে বাণিজ্যিক বৈষম্য আকাশ সমান। এখানে রাশিয়া কোন খেলোয়াড় না। এ মুহূর্তে তা্রা নিজেদের অর্থনীতি সচল রাখতে লড়াই করছে। যে কোন বিচারে আধুনিক রাশিয়া তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশ, যে দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লেশ মাত্র নেই। তাই রফতানি প্রবাহে বাধা আসলে তারা উদ্ধার করতে এগিয়ে আসবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। রাশিয়া যা করতে পারে তা কম মূল্যে জ্বালানী তেল সরবরাহ। তবে তার জন্যে তারা মূল্য পরিশোধে সময় দেবে এমনটা হবার নয়। রাশিয়ার মূল আয় এখন তেল রফতানি। বাকিতে তেল বিক্রি করতে গেলে তাদের নিজেদের অর্থনীতিই বিপদের সন্মুখিন হবে।

শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য যে নির্বাচন ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঠেলে নেয়া গেলনা। সমসাময়িক বাস্তবতার বিচার বলা যায় সামনের মার্কিন প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। জনাব ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্যে বাংলাদের মত দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কোন ফ্যাক্টর না। বরং শেখ হাসিনার মত ফ্যাসিবাদী সরকার গুলো তার বন্ধু তালিকার প্রথম দিকে থাকে।

আমার বিচারে শেখ হাসিনা অবৈধ সরকার যদি ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত টিকে যায় তা হলে পরবর্তী ৪ বছর টিকে থাকায় কোন অসুবিধা হবেনা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন