আমেরিকা ইসরায়েল প্রণয় ও তার দেনমোহর.

Submitted by WatchDog on Monday, January 1, 2024

প্রশ্নটা অনেকের, আমেরিকা কেন অন্ধভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে? এক সময় এ প্রশ্নের উত্তর আমারও জানা ছিলনা। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে এবং এই দুই দেশের সম্পর্কের অটোপসি করছি পানির মত পরিষ্কার হয়ে আসছ উত্তর।

যে দেশ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার নিয়ে তুলকালাম বাধিয়ে দেয়, ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, ক্ষমতা হতে ক্ষমতাসীনদের টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলে, এই তারাই ইসরায়েল প্রসঙ্গ এলে একবারে জন্মান্ধ, শরীরের সবকটা চেম্বার কোন এক অলৌকিক কারণে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়।
কোন সুস্থ সবল মানুষের পক্ষে ইসরায়েল প্রশ্নে আমেরিকার এই উলঙ্গ হিপোক্রেসি জটিল কোন ধাঁধাঁ মনে হতে বাধ্য।

এক সময় ইসরায়েলের প্রায়ত প্রধানমন্ত্রী Moshe Dayan ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, 'আমেরিকাকে আমরা কিনে নিয়েছি। দেশটার কংগ্রেস, প্রেসিডেন্ট যাই বলুন না কেন সবই আমাদের কেনা'।
অনেকটা দম্ভোক্তির মত শুনালেও বাস্তবতা হচ্ছে আসলেই আমেরিকা ইসরায়েলের ক্রয় করা দুধেল গাভী।

আমেরিকার দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট কংগ্রেসের আপার চেম্বার সিনেটের সদস্য সংখ্যা ১০০। দেশের প্রতিটা অঙ্গরাজ্য হতে ২ জন করে সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন এই চেম্বারে। ৬ বছরের জন্যে নির্বাচিত এসব সদস্যদের পাশ কাটিয়ে এ দেশে কোন আইন প্রণয়ন অথবা দেশি বিদেশি প্রকল্পে অর্থায়ন একেবারেই অসম্ভব। অন্যদিকে ৪৩৫ সদস্য বিশিষ্ট লোয়ার চেম্বার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্যরা নির্বাচিত হন ২ বছরের জন্যে। ক্ষমতার ব্যালেন্সের জন্যে এ দেশে এককভাবে কোন চেম্বারই কিছু করতে পারেনা, তার জন্যে চাই কংগ্রেসের দুই চেম্বার সহ প্রেসিডেন্টের অনুমোদন। হোক তা দেশটার বাজেট, যুদ্ধ ঘোষণা অথবা রাশিয়ার যুদ্ধে ইউক্রেইনকে অর্থায়নের মত প্রকল্প।

মানবাধিকার তেজারতির কথিত যীশু খ্রিষ্ট মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের অর্থের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। এই বাণিজ্যের বৈধতা দেয়ার জন্যে দেশে আইন আছে। এই আইনের বৈধ নাম হচ্ছে লবিং। আমেরিকায় লবি করা বৈধ। অর্থাৎ কেউ চাইলে এজেন্ট নিয়োগ করে এ দেশে নিজেদের স্বার্থ ও এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে পারে। এ চেষ্টার (লবি) আওতায় আছে দেশটার কংগ্রেস। পৃথিবীর অনেক দেশের লবিষ্ট আছে ওয়াশিংটন ডিসি'তে। এ হতে বাংলাদেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দলও বাদ না।

American Israel Public Affairs Committee (AIPAC) হচ্ছে আমেরিকা বেইজড লবিং এষ্টাবলিষ্টমেন্ট যার ভূমিকা উইকিপেডিয়া এভাবে মূল্যায়ন করে থাকে, "The American Israel Public Affairs Committee is a lobbying group that advocates pro-Israel policies to the legislative and executive branches of the United States."
৭৫ বছর ধরে নিজেদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিতে ইসরায়েল আমেরিকায় বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। AIPAC হচ্ছে এই বিনিয়োগের মাধ্যম।

এবার আসুন চোখ ফেরাই আমেরিকান সিনেটে AIPAC'এর বিনিয়োগ-কৃত তহবিলের দিকে:
Money from Pro-Israel to US Senators, 1990-2023:
Menendez, Robert (D-NJ)-New Jersey-$2,483,205
McConnell, Mitch (R-KY)-Kentucky-$1,953,160
Schumer, Charles E (D-NY)-New York-$1,725,324
Cruz, Ted (R-TX)-Texas-$1,299,194
Rubio, Marco (R-FL)-Florida-$1,012,263
Graham, Lindsey (R-SC)-South Carolina-$1,000,580
Romney, Mitt (R-UT)-Utah-$975,993
সিনেটে নতুন নির্বাচিত সদস্য:
Warnock, Raphael (D-GA)-Georgia-$928,796
Ossoff, Jon (D-GA)-Georgia-$759,227
Fetterman, John (D-PA)-Pennsylvania-$244,100
এখানে D stands for Democratic & R for Republican party respectively.

এবার আসুন আমাদের ইমাজিনেশন একটু উপরের দিকে নেই এবং বুঝার চেষ্টা করি একজন আমেরিকান প্রেসিডেন্টকে কি করে ইসরায়েলিরা কিনে নেয়:
Biden, Joe (D)-$4,346,264
Obama, Barack (D)-$294,898
Clinton, Hillary (D-NY)-$2,358,112

এ তালিকায় আছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের আলমোষ্ট সবাই। আছে অঙ্গরাজ্যের গভর্নর, এটর্নি জেনারেল, কাউন্টির শেরিফ সহ স্থানীয় সরকারের অনেকে।

প্রশ্ন উঠবে কাদের অর্থে পরিচালিত হয় এই AIPAC? এখানে ইসরায়েলি সরকারের পাশাপাশি আছে মার্কিন ধনকুবেরদের অনেকে। মূল অর্থায়নে আছে BlackRock ও The Vanguard Group নামের দুটি ইনভেস্টমেন্ট সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ওয়াল স্ট্রীটে নিবন্ধিত অনেক কোম্পানির মেজর ষ্টেক হোল্ডার এবং শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রায় সবাই ইহুদি।

চোখ ফেরান মিডিয়া ও এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির দিকে,। সিএনএন, (আমেরিকা অন লাইন) নিউজ মিডিয়া (ফক্স), কমকাস্ট (এনবিসি, এমএসএনবিসি, সিএনবিসি, এইচএলএন, পিকক) সহ আমেরিকার মেজর নিউজ মিডিয়ার মালিক ও এক্সিকিউটিভদের প্রায় সবাই ইহুদি ও ইহুদি লবির অর্থ ও ওয়ান সাইডেড সংবাদ পরিবেশনের যোগানদাতা।
হলিউডের বিভিন্ন স্টুডিও হতে যে সব মেগা মুভি বের হয় থাকে তাদের প্রডিউসারদের শতকরা ৯০ ভাগ ইহুদি।

এবার আপনি নিজেই পারবেন দুই প্লাস দুই সমান চার'এর সমীকরণ মিলিয়ে নিতে। আমেরিকার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি দেশটার ইহুদিরা, যার সাথে আছে সব ধরণের মিডিয়া। আমেরিকায় বাস করলেও ইহুদিরা ইসরায়েলকে তাদের আদি ও শেষ ঠিকানা হিসাবে মনে করে থাকে। ঠিক যেমনটা ভারতকে মনে করে থাকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা।

টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রূজের সন্তান যদি আজ ইসরায়েলি স্নাইপারের গুলিতে হেবরনের কোন এক গলিতে প্রাণ হারায় নিশ্চিত ধরে নিতে পারেন এই সিনেটর হত্যাকাণ্ডের জন্যে ফিলিস্তিনিদের দায়ী করবেন। কারণ একটাই, ইসরায়েলি অর্থ! নিজের সিনেট পদ ধরে রাখতে এমন কোন কাজ নেই যা তিনি করবেন না। আর এই পদ ধরে রাখতে চাই নির্বাচনী তহবিল। এখানেই সামনে আসে ইসরায়েলি লবি ও তাদের AIPAC, পাশাপাশি BlackRock, Vanguard'এর মত পাওয়ারফুল আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর দেশটার (ইসরায়েল) অবৈধ কর্মকাণ্ড ধামাচাপা দিতে উন্মুখ হয়ে বসে থাকা আমেরিকার প্রচার মাধ্যম। এই একই কারণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জোসেফ বাইডেন ইসরায়েলি বর্বরতার উস্কানি দিতে চলে যান তেল আভিভে, যেখানে তিনি নিজকে জোর গলায় ঘোষণা দেন একজন জায়নিষ্ট হিসাবে।
ইসরায়েলের বিশিষ্ট বন্ধু ক্লিনটন পরিবারের জামাই হচ্ছেন ইহুদি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প হচ্ছেন একজন কনভার্টেড ইহুদি।
এক কথায় আমেরিকাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে রেখেছে ইহুদি ও ইসরায়েল। এ এক অদৃশ্য প্রণয় যা দেখতে ও বুঝতে চাইলে ইতিহাসের গভীর ঢুকতে হবে।

আজকের আমেরিকা হচ্ছে ইহুদি লবির স্বর্গরাজ্য, যেমনটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপ। তাই আমেরিকার ইসরায়েল প্রীতি নিয়ে যারা দ্বিধান্বিত তাদের অনুরোধ করবো দুই দেশের অর্থনীতির ভেতরে ঢুকতে। কারণ ওখানেই বপিত আছে গাজা ট্রাজেডির আসল বীজ, অথবা আমেরিকা ইসরায়েল প্রণয়ের দেনমোহর!

ভালো লাগলে শেয়ার করুন