এই একটা জিনিস বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়।

Submitted by WatchDog on Wednesday, October 4, 2023

এই একটা জিনিস বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়। এই আমরা যারা বিদেশে বাস করে বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে নিজেদের ভাগ্য গড়ার চেষ্টা করছি তাদের বিরুদ্ধে দেশে এত বিষেদ্গার কেন? শিক্ষিতদের অনেকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন বিদেশি নাগরিকত্ব নেয়া মানে দেশের সাথে বেঈমানি করা, দেশকে দ্বিতীয় সাড়িতে ঠেলে দেয়া। এই আমাদের অনেকে যখন দেশে বেড়াতে এসে একটু আধটু অসন্তোষ প্রকাশ করি তাতে নাকি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। অনেকের মতে যেহেতু বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছি তাই দেশ নিয়ে ভালমন্দ বলার অধিকার নাকি আমাদের নেই।

গতকালের এক খবরে দেখলাম দেশের দুই পুলিশ ব্যাংক হতে একজনকে উঠিয়ে এনে তার ২০ লাখ টাকা ছিনতাই করেছে। পৃথিবীতে দ্বিতীয় এমন একটা দেশ খুঁজে পাওয়া মুস্কিল হবে যেখানে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ঢাকা শহরের এক মেয়র ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকে তিনি শহরে ঢুকতে দেবেন না। একই শহরে শত শত মা-বাবা তাদের সন্তান হারাচ্ছে ডেঙ্গুর কারণে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এমন শহর এবং এমন মেয়রের দেখা পাওয়া দুষ্কর যেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কাউকে শহরে ঢুকতে না দেয়ার হুমকি দেয়। পাশাপাশি মশার আক্রমণ হতে শহরবাসীকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করতে দায়বদ্ধ নয়। এটাই বাংলাদেশ এবং এ নিয়ে বিদেশি নাগরিকত্ব নেয়া বাংলাদেশিদের কথা বলা অন্যায়!

যে কোন বিচারে বাংলাদেশ অন্যায়, অবিচার, অনাচার আর পাপাচারের অভয়ারণ্য। এখানে কথা বলার স্বাধীনতা নেই, মত প্রকাশে আছে হরেক রকম বাধা। রাজনৈতিক ক্ষমতা এ দেশে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের জিয়নকাঠি। এমন একটা দেশের সমালোচনায় মুখর অনেক দেশ এবং তারাও চাইছে পরিবর্তন।
অনেকে অভিযোগ করে থাকেন বিদেশ হতে দেশে গিয়ে অনেকে নাকি নাক সিটকায়। দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা নিয়ে নানা অভিযোগ করেন। বিশেষকরে মহিলা মহল তাদের অসস্তূষ্টি যত্রতত্র প্রকাশ করে থাকেন। এবং এমন অভিযোগে কোন অসত্যতা নেই। অনেক মহিলাই দেশের দুরবস্থা নিয়ে সোচ্চার এবং পাশাপাশি প্রবাসে তাদের ও সন্তানদের জীবন নিয়ে ফুলিয়া ফাঁপিয়ে অনেক কিছু বলে থাকেন।

এবার আসুন বাংলাদেশে স্থানীয় কোন অনুষ্ঠানে অথবা বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অপেক্ষমাণ মা-বোনদের আলাপচারিতায় প্রবেশ করি। এসব আলোচনার বিষয়বস্তু বিস্তারিত না লিখলেও চলবে। এসবের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অথচ একই আলোচনা যখন প্রবাসী মা-বোনদের মুখ হতে উচ্চারিত হয় অনেকে দেশের ইজ্জত নিয়ে টানাটানির পর্যায়ে নিয়ে যান। কেন এমনটা? দেশে বিদেশি মা-বোনরা আমাদেরই কেউ, এক জনের বেলায় সাত খুন মাপ, আর অন্য জনের বেলায় এত চুলকানি কেন? প্রবাসী মা-বোনদের দেশ নিয়ে অভিযোগ এটাই প্রমাণ করে বিদেশ জীবনও তাদের বাঙ্গালী-পনা হতে সরিয়ে দেয়নি। ওরা এবং আমরা সবাই একই ঘাটের পানি খাওয়া মানুষ।

অনেকের অভিযোগ যারা নাগরিকত্ব নিয়ে প্রবাসে বাস করছে তাদের অনেকেই রেমিটেন্স পাঠায় না, বরং দেশের সম্পদ বিক্রি করে তা প্রবাসে পাচার করে থাকে। আর তাতেই দেশপ্রেম তথা চেতনার দণ্ড নেতিয়ে যাচ্ছে। একজন বাংলাদেশি যখন দেশ ত্যাগ করে আমার বিচারে সেটাই দেশপ্রেম। রেমিটেন্স পরের কথা, যা বোনাস হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। একজন কম মানে কম চাপ দেশের অর্থনীতিতে, বাতাসে কম কার্বন ডাই অক্সাইড, ট্রাফিক চাহিদায় সামান্য হলে স্বস্তি। দুর্নীতির দৌড় না হয় না-ই টানলাম। এ মুহূর্তে আরও ৫ কোটি মানুষ দেশ ছাড়লে সেটা হবে দেশপ্রেমের বিরলতম নিদর্শন। এ প্রেম চেতনার দণ্ড দিয়ে রিপ্লেস করার নয়। সবচেয়ে বড় কথা, আপনারা যারা প্রবাসীদের দেশপ্রেম নিতে মাতম করছেন সুযোগ পেলে তাদের কেউ কি দেশ ত্যাগ করবেন না।

আজ প্যারিসের Seine নদীর তীরে দুজন বাংলাদেশির দেখা পেলাম। ৫ বছর আগে জীবন বাজি রেখে এ দেশে এসেছেন। পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। এই দুজন যদি কোনদিন ফ্রান্সের নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশ নিয়ে সমালোচনা করেন, খুব কি অন্যায় হবে। কারণ এই দুজন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন দেশ কি এবং কি কারণে বাড়ি-ঘর বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছেন।
প্যারিস। ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন