শেখ হাসিনা ও আমেরিকা...

Submitted by WatchDog on Wednesday, October 4, 2023

ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দেয়ার কায়দায় শেখ হাসিনা ইউনুসকে অপদস্ত করে আমেরিকাকে শিক্ষা দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন। বুঝাতে চাইছে, দেখ তোমাদের আমরা থোরাই কেয়ার করি।
অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে মরণ কামড় তিনি যে দিবেন তাতে অবাক করার কিছু ছিলনা। তবে এই কামড়ের আফটারমাথ সম্পর্কে তিনি সচেতন কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
সমস্যা এখানে বহুমূখী। প্রথমত, নোবেল জয়ী ডক্টর ইউনুসের পেছনে কেবল আমেরিকাই না, আছে বাকি বিশ্বের সব স্বনামধন্য ব্যাক্তিবর্গ। আছে জাতিসংঘের মত অনেক বিশ্ব সংস্থা। তিনি কি পারবেন সবাইকে ঠেক দিয়ে প্রতিশোধ বাস্তবায়ন করতে?!
ছাত্রলীগের মত পশু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয়দের ঠেঙ্গানো গেলেও এই শক্তির শেকড় যে বিশ্বকে ঠেকানোর জন্যে গভীর নয় তা দেশের পশু-পাখিও জানে। পশুশক্তির এই দল নেত্রীর সামনে মাসল দেখালেও এদের বিরাট এক অংশ যে ছলে বলে কৌশলে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকার জন্যে সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিতে দ্বিধা করবেনা এ নিয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
চাইলে শেখ হাসিনা সবকিছু করতে পারবেন। হুকুমের কেনা গোলাম নিম্ন ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের ঘাড়ে বন্ধুক রেখে ইউনুস কেন, যে-কাউকে জেলে পুরতে পারবেন। মৃত্যু পথযাত্রী খালেদা জিয়াকে পর্যন্ত নতুন নতুন মামলা দিয়ে জেলে ভরতে পারবেন। এর জন্যে স্থানীয় বিরোধী দলের খুব যে একটা প্রতিবাদ প্রতিরোধের সন্মুখিন হবেন তার কোন আলামত নেই। এসব বিরোধীদের অনেককেই তিনি তলে তলে কিনে নিয়েছেন। কিন্তু একই সমীকরণ যে তিনি আমেরিকার মত দেশের সাথে করতে পারবেন সে সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য।
কেন বাংলাদেশ!
পৃথিবী্তে এত দেশ থাকতে বাংলাদেশের মত দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন একটা দেশের উপর আমেরিকা এতটা ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ কি তার জবাব কেবল শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বাকি সবার কাছেই আছে। তারা নিশ্চয় এমন কিছু করে থাকবে যার কারণে আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্যায় হতে হুমকি ধামকি আসছে।
আমার মত ম্যাংগো পিপলদের সহজ সরল বিশ্লেষণে পরাক্রমশালী আমেরিকা ক্ষিপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ঐ দেশের বন্ধু ডক্টর ইউনূস। রাতের অন্ধকারে প্রাক্তন হাইকমিশনার মার্সিয়া বার্ণিকাটের উপর হামলা। বর্তমান রাস্ট্রদূত পিটার হাসের উপর লেলিয়া দেয়া আওয়ামী ক্যান্সার শক্তি।
এবার আসুন নোবেল জয়ী এই বাংলাদেশি শেখ হাসিনার শত্রু হওয়ার আগের সময়ে ফিরে যাই।
বিশ্বব্যাংকের সাথে দরকষাকষি হচ্ছে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। সরকারের উঁচু পর্যায়ের অনেক হোমরা চোমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছেন বিশ্বব্যাংকের সাথে। এবং এসব যোগাযোগের সবটাই যে সেতুর অর্থায়ন নিয়ে নয় তা বাইরে আসতে সময় লাগেনি।
আপনি যদি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ বিশ্বাস না করে হাসিনা প্রশাসনের কথা বিশ্বাস করেন তা-হলে আমি নিশ্চিত বাংলাদেশকে চিনতে আপনার আরও হাজার বছর লেগে যাবে। পদ্মাসেতুর পাশাপাশি বাংলাদেশে আরও অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এসব প্রকল্পে কি ধরণের অনিয়ম হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ কেবল শেখ হাসিনার বিদায়ের পর TRUTH কমিশন জাতিয় কিছু একটা গঠন করলেই বের করা যাবে। অতীতে চেকের মাধ্যমে কমিশন খাওয়া শেখ হসিনা পদ্মাসেতুর মত বিলিয়ন ডলার প্রকল্প হতে নিজের ক্ষুধার্ত উদর পূরণ করতে চেষ্টা করেননি বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।
নিক্সন চৌধুরি নামের জনৈক রাজনীতিবিদ কাম শেখ পরিবারের আত্মীয়ও নিজের হিস্যা বুঝে নেয়ার জন্যে বিশ্বব্যাংকের দরবারে ধর্ণা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে।
আত্মীয় জনাব চৌধুরি নিজের অংশ বুঝে নেয়ার ব্যপারে সচেতন ও সক্রীয় থাকতে পারলে নিজ গর্ভের সন্তানদ্বয় মিলিয়ন ডলার কমিশন ওভারলুক করে গেছেন এমন দাবি বিশ্বাস করার মত ছাগলের তিন নং বচ্চা আমি নই। চাইলে আপনি করতে পারেন এবং সেতু অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের অস্বীকৃতিতে ডক্টর মোহম্মদ ইউনুসকে দায়ী করে সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন।
আমেরিকায় ২৩ বছর বাস করে দেশটার রাজনীতির সাথে সক্রিয় থেকে একটা সত্য অনুধাবন করেছি, ইউনুস কেন, খোদ সৃষ্টিকর্তার অনুরোধেও আমেরিকার কোন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান কাউকে লোন দেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেনা। লাভ-ক্ষতি হিসাব করার দেশ আমেরিকা। এখানে ইউনুসের মত তৃতীয় বিশ্বের একজনের জন্যে আমেরিকা অথবা দেশটার প্রভাবিত কোন প্রতিষ্ঠান তাদের বিনিয়োগ সেক্রিফাইস করবে তা আমি বিশ্বাস করতে নারাজ।
এ ধরণের অবৈধ প্রভাব কেবল লাভ-ক্ষতির খাতাকেই কলুষিত করবেনা, বরং উদ্যোক্তা ব্যাক্তির রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেরও ইতি টানবে। এসবের জবাবদিহিতার জন্যে আছে দেশটার আইন ও বিচার ব্যবস্থা। আছে কংগ্রেসের বিভিন্ন কমিটির হায়েনার মত দৃষ্টি। হিলারী অথবা ওবামা তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ডক্টর মোহম্মদ ইউনুসের জন্যে সেক্রিফাইস করবেন এমন পীরিত তাদের না থাকারই কথা।
শেখ হাসিনা ও হাসান মাহমুদদের মত গোয়েবলসের কথা শুনতে ও বিশ্বাস করতে গিয়ে আমরা ভুলে গেছি পৃথিবীতে এখনও অনেক দেশ আছে যেখানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রীর এবস্যালুট পাওয়ার নেই। আমেরিকা তাদের অন্যতম।
শেখ পরিবারের সদস্যরা পদ্মাসেতু প্রকল্প হতে নিজেদের হিস্যা আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডক্টর মোহম্মদ ইউনুসকে স্কেইপগোট বানিয়ে নিজেদের ক্ষোভ ও পাহাড় সমান অপরাধ চাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন এমনটাই আমার সারমর্ম। বলাহয় সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকান্ডও নাকি এই প্রকল্পের অংশ।
যেনতেন নির্বাচন করে শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতা ধরে রাখবে এ ব্যপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। চাইলে লিখে রাখতে পারেন। বিএনপি অথবা দেশের কোন রাজনৈতিক দল অথবা তাদের সন্মিলিত শক্তির কাছে শেখ হাসিনা নত করবেন এমনটা যারা বিশ্বাস করেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
শেখ হাসিনা সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই কাজটা করতে পারবেন না কেবল আমেরিকার সাথে।
তবে কি আমেরিকা নির্বাচনোত্তর হাসিনা সরকারকে গায়ের জোরে ক্ষমতা হয়ে সরিয়ে দেবে?
এমন কাজ আমেরিকা জীবনেও করতে যাবেনা। অতীতে করলেও দেশটার বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা সে জায়গায় নেই। নেই সোভিয়েতদের সাথে স্নায়ু যুদ্ধ। আমেরিকা নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশকে একঘরে করার চেষ্টা করবে। এক্সট্রীমে ঠেলে দিলে বাংলাদেশের রিজার্ভ আটকে দেবে। বাণিজ্য অবরোধ দেবে এবং এ অবরোধে যোগ দেবে দেশটার বাকি মিত্ররা।
স্ট্রাটেজিক কৌশল নিয়ে আমেরিকা সর্বক্ষণ বাংলাদেশ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এমনটা ভাবা আহাম্মকি বৈ অন্যকিছু নয়। আমেরিকার কাছে বাংলাদেশ অনেক দেশের তালিকায় একটা দেশ মাত্র। দেশটার নির্বাচন ও ক্ষমতা নিয়ে একটা পর্যায় পর্যন্ত যাবে তারা, বাকিটা ছেড়ে দেবে জনগণের উপর।
পৃথিবীর দেশে দেশে জমানো অবৈধ অর্থের ভাণ্ডার হাতছাড়া হলে গৃহপালিত প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা শেখ হাসিনার সাথে থাকবে কিনা সেটা হবে মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন। বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা এই ডাইনাসোর ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতনের শুরুটা হতে পারে তখনই যখন জনগণ রাস্তায় নামবে, প্রশাসন বিট্রে করবে এবং বিদেশীরা গলা চেপে ধরবে। এই তিনের সমন্ধয় ছাড়া অবৈধ সরকারের বিদায় আশা করা হবে দিবাস্বপ্ন, যার মূল্য জাতিকে বছরের পর বছর ধরে গুনতে হতে পারে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন