নায়ক ও খলনায়ক...

Submitted by WatchDog on Sunday, July 3, 2022

কিছু সমীকরণ আছে যা মেলাতে কষ্ট হয়। কোন যুক্তি প্রযুক্তিই কাজে আসেনা। এ যেন এক অসমাধান যোগ্য ধাঁ ধাঁ।

অলমোষ্ট ৭০-৮০% বাংলাদেশির বিচারে আমেরিকা হচ্ছে গোটা বিশ্বের খলনায়ক। ওরা দেশে দেশে যুদ্ধ বাধায়। ইয়াকিং কায়দায় মানুষ খুন করে বেড়ায়।
আমেরিকা এমন এক দেশ যেখানে ঘরে ঘরে অস্ত্র ভাণ্ডার। ১৭ বছরের কিশোর এসাল্ট রাইফেল হাতে এলিমেন্টারি স্কুলে ঢুকে শিশুদের হত্যাকরে।

শুধু আমেরিকা কেন, গোটা পশ্চিমা বিশ্ব স্বদেশিদের কাছে শয়তানের আখড়া। ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় হতে এমনটা উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে শেয়ালের হুক্কা হুয়া রবের মত তা টেকনাফ হতে তেতুলিয়ায় প্রতিফলিত হয়।

পাশাপাশি আরও একটা সমীরকণ আছে যা মেলাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
আজ এক খবরে দেখলাম ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের শীর্ষ তালিকার অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। তালিকার প্রথম ৫ দেশের এক দেশ বাংলাদেশ। আকাশ বাতাস, সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে স্বদেশিরা আশ্রয় নিতে চায় পশ্চিমা বিশ্বের দেশে দেশে। ভয়াবহ এসব জার্নি করতে গিয়ে অনেকের সলিল সমাধি হয়। ভূমধ্য সাগরের ঢেউ এসে কেড়ে নেয় উন্নত জীবনের স্বপ্ন।

শুধু বাংলাদেশীরাই নয়, বাকি বিশ্বের প্রায় সবদেশে সবকালে একই বাস্তবতা। সম্ভব হলে গোটা বিশ্বই যেন পাড়ি জমাতে চায় পশ্চিমা বিশ্বে।
ক্ষমতার শীর্ষে বসে বিষেদগার করলেও দিনশেষে দেখা যায় তাদের প্রায় সবার ছেলে-মেয়ে, মা-বাবা, ভাই-বোন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি অথাব ইতালির বাসিন্দা। যে আফগানিস্তানকে ২০ বছর ধরে মার্কিনিরা তামা তামা করেছে তারাই যখন পিছুটান দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্লেনের পাখায় চড়ে ভিক্টিম দেশের লাখ লাখ বাসিন্দা পাড়ি জমাতে চায় ইয়াংকি দেশে।

অথচ ভুলেও আমরা শুনিনা জল স্থল অন্তরীক্ষ দিয়ে কেউ তাদের প্রিয় দেশ রাশিয়ায় প্রবেশের ধান্ধা করছে। একই রাশিয়া আমাদের প্রিয় দেশের তালিকার অন্যতম শীর্ষ দেশ। পুতিনের মিসাইল যখন ওডেসার রেসিডেন্টশিয়াল এলাকায় আছড়ে পরে গণ্ডায় গণ্ডায় নীরিহ মানুষ হত্যাকরে স্বদেশিদের অনেকের কাছে তা পুতিনের ষ্ট্রাটেজিক বিজয়। হাত তালি দিয়ে অনেকে উৎযাপন করে কথিত এসব বিজয়। ইউক্রেইন নামের একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশে হামলা চালিয়ে শহরের পর শহর দখল করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে তাও আমাদের কাছে 'সাম্রাজ্যবাদী' আমেরিকাকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার শামিল।

রাশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ। দেশটার লাখ লাখ মাইল এলাকা জনমানবহীন বিরানভূমি। চাইলে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে ঠাঁই দিতে পারে তারা।
কথা হচ্ছে মানব সম্পদই যদি আমাদের আয়-রোজগারের মূল মাধ্যম হয়ে থাকে রাশিয়া কেন এগিয়ে আসছেনা? রাশিয়া তো আমাদের পছন্দের তালিকার অন্যতম শীর্ষ দেশ!

যখন বিদেশ পাড়ি দেয়ার প্রসঙ্গ আসে সেই ইয়াকিংল্যান্ড আমেরিকাকেই আমরা বেছে নেই। বোন কে স্ত্রী বানিয়ে, মাকে শাশুড়ি বানিয়ে ছলে বলে কৌশলে দেশটায় গোটা পরিবারকে স্থায়ী বানানোর চেষ্টা করি।
ব্যপারটা কি? কি আছে ঐ খলনায়কদের দেশে?

নিউ ইয়র্কের গোটা একটা এলাকা আছে রুশদের জন্যে। প্রতিদিন ওখানে রুশ ইমিগ্রেন্টদের মেলা জমে। দোকানপাট, হোটেল রেষ্টুরেন্ট, বাড়িঘর সবকিছুতে রাশিয়ার প্রতিচ্ছবি। অনেকে আদর করে লিটল রাশিয়া বলে সম্বোধন করে।
স্বদেশ হতে রুশরা দলে দলে আসছে আমেরিকায়। এবং আসার কিছুদিনের ভেতর স্ত্রী, সন্তান, বাপ-মা ভাইবোন সহ পরিবারের বাকি সবাইকে আনার ধান্ধা শুরু করে। রুশ উকিলরা লাইনধরে বসে থাকে গ্রাহকদের আশায়।
এমন কোন এলাকা কি মস্কোর কোথাও আছে যেখানে মার্কিনিদের আস্তানা যা লিটল ইয়াকিংল্যান্ড নামে পরিচিত? থাকলেও আমার জানা নেই।

মোরাল অব দ্যা স্টোরি হচ্ছে, আমেরিকা নিয়ে আমাদের হিপোক্রেসি অনেক। আমার মতে দেশটাকে ঘৃণা করতে চাইলে আপদমস্তক ঘৃণা করতে হবে। কাগজে কলমে ঘৃণা করবো অথচ বৈধ অবৈধ পথে ঐ দেশেই পাড়ি জমানোর চেষ্টা করবো তা কেবলই হিপোক্রেসি।

আমেরিকাকে অপছন্দ করার যথেষ্ট কারণ আছে।
তাই অপছন্দ করুন, ঘৃণা করুন। পাশাপাশি শয়নে স্বপনে ঐ দেশে ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন কবর দিন। তাহলেই কেবল ১৮ চাকার ট্রাকের অন্ধ প্রকোষ্ঠে ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপমাত্রায় প্রাণ হারানোর হতে দূরে থাকা যাবে।
https://statewatch.net/post/29863?fbclid=IwAR3faIjqhOjBanE4LnS8xZFmKfqlfK1etTsa1GEOa6a2Y3kPSfmkllrD2C8

ভালো লাগলে শেয়ার করুন