দুষ্টু আমেরিকা...

Submitted by WatchDog on Wednesday, April 27, 2022

বিশ্বে খারাপ যা কিছু ঘটে তার কারণ আমেরিকা ও তার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। দেশে দেশে রাজনৈতিক গুম, খুন, ক্ষমতার পালাবদল, সামরিক শাসন, দুই দেশের যুদ্ধ, জলে স্থলে অন্তরীক্ষে যা কিছু বিপর্যয় সবকিছুর মুলে ঐ আমেরিকাই। তারা যুদ্ধবাজ, কারণ যুদ্ধে বাধলে তাদের অস্ত্র বিক্রি হয়, অর্থনৈতিক প্রসার ঘটে। দেশটার ক্ষমতাসীনরা যুদ্ধকে পুঁজি বানিয়ে ওয়াল স্ট্রীটে অর্থ কামায়... যুগ যুগ ধরে এমনটাই জেনে এসেছি আমরা। এমনকি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকায় যে ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাস ঘটেছিল তার পেছনেও নাকি হাত ছিল আমেরিকার। আমেরিকানরা সাগরের তলদেশে পরীক্ষামূলক পারমানবিক বোমা ফাটিয়ে যে ভ্যাকুম তৈরি করেছিল তারই ফলে সৃষ্টি হয়েছিল পাহাড় সমান ঢেউ। আছড়ে পরেছিল পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলে এবং একরাতে কেড়ে নিয়েছিল ৫ লাখ মানুষের জীবন।

এ শুধু আমাদের দেশের পারসেপশন নয়, পৃথিবীর বহু দেশের। বিশেষকরে যারা সম্পদের সুষম বণ্টনে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মন্ত্রে উজ্জীবিত তাদের বিশ্বাসের গোঁড়া অনেক গভীর। তাদের কাছে আমেরিকা মানে নিউ কলোনিয়ালিষ্ট, যুদ্ধপ্রিয় একদল ইয়াঙ্কি। স্বভাবতই ইউক্রেইন যখন আমেরিকার হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার চালাচ্ছে সমর্থন, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার পাল্লা রাশিয়ার দিকেই ঝুলে পরছে।

মারিওপোল নামের ইউক্রেইনের পূব একটা শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে রুশরা। হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে গণকবরে সমাহিত করেছে। এসব গণহত্যার সমর্থনে আমাদের সাফাইয়েরও অভাব নেই। রাশিয়া এমনটা করতেই পারে, কারণ আমেরিকা ও তার দুষ্ট জোট ন্যাটো রাশিয়ার সীমান্তের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এবং ইউক্রেইনও এই দুষ্টু জোটে যোগ দেয়ার পায়তারা করছে। সঙ্গত কারণে মারিওপোল, বুচা সহ ইউক্রেইনের শহরের পর শহর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার অধিকার রাখে রাশিয়া। শহরের বাসিন্দাদের পশুর মত গুলি করে হত্যা করা এবং গণকবরে কবর দেয়া রাশিয়ার বৈধ অধিকারের আওতায় আসে। একই লজিক, একই সাফাই...সবকিছুর হোতা বদমাইশ আমেরিকা। তলে তলে ওরাই উস্কে দিয়েছে জালেনস্কির ইউক্রেইনকে। মাঠে নামিয়ে এখন তামাশা দেখছে। কোটি কোটি বাংলাদেশির এটাই রুশদের ইউক্রেইন আক্রমণের জাস্টিফিকেশন।

আমেরিকাকে অপছন্দ করার অনেক গ্রাউন্ড আছে। বিশেষকরে স্নায়ু যুদ্ধের সময় পৃথিবীর কোনায় কোনায় নিজেদের পছন্দের সরকার বসানোর হেন কোন কাজ নেই তারা করেনি। তাদের প্রিটেক্সট ছিল, সমাজতন্ত্রের দানব ঠেকানো। চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে খুন করে সেখানে সামরিক স্বৈরশাসক General Augusto Pinochet OMChকে ক্ষমতায় বসানো , ইরানের শাহ সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে রাজা বাদশাহদের ক্ষমতা পোক্ত করা, ইসরায়েলের অবৈধ দখলে প্রত্যক্ষ মদ দেয়া; সবকিছু মিলিয়ে আমেরিকা ও তার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ জড়িত ছিল হরেক রকম অপকর্মে। সে আমেরিকাকে পছন্দ করতে হবে তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

সময় বদলেছে। গোটা বিশ্ব একদিন সমাজতন্ত্রের রাজত্ব কায়েম হবে, সোভিয়েতদের এই স্বপ্ন তাসের ঘরের মত ভেসে গেছে। স্বভাবতই থেমে গেছে আমেরিকার সমাজতন্ত্র ঠেকানোর ক্রূসেড।

তারপর এসেছে ৯/১১। আফগানিস্তানের তোরাবোরা গুহায় বসে মুসলমানদের নব্য মুক্তিদাতা ওসামা বিন লাদেন ছক এঁকেছিলেন কি করে ইহুদি নাছারাদের শিক্ষা দেয়া যায়। এবং দিয়েছিলেনও। গুড়িয়ে দিয়েছিলেন বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী নিউ ইয়র্কের দুটো সুউচ্চ ভবন। এখানেও আছে আমাদের নিজস্ব জাস্টিফিকেশন, আছে কন্সপেরাসি থিওরি। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ নাকি ইহুদি দেশ ইসরায়েলের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করে উড়িয়ে দিয়েছিলেন টুইন টাওয়ার, খুন করেছিলেন ৩ হাজার স্বদেশী।

মানুষ শব্দের বিভাজন এভাবেই করা যায়; মান+হুশ। মানুষ ও পশুর পার্থক্য এখানেই। মানুষের মান ও হুশ দুটোই আছে; পশুর কোনটাই নেই।
রবীন্দ্র নাথের দুই পাখি কবিতার সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের জানা থাকার কথা পাখিদেরও প্রকারভেদ আছে; এই যেমন খাঁচার পাখি ও বনের পাখি। সমাজতন্ত্রের ব্যখ্যা আমাকে দিতে হবেনা। এর ব্যখ্যা অনেক আগে অনেক মুনি ঋষিরা দিয়ে গেছেন। তবে ব্যক্তি আমি ১২ বছর সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের ভোক্তা হওয়ার কারণে নিজেরও একটা ব্যখ্যা দাঁড় করাতে পারি। যার তুলনা হতে পারে রবীন্দ্র নাথের দুই পাখি কবিতার আলোকে।

খাঁচায় আটকে থাকা পাখির অন্তত খাবারের কোন অসুবিধা হয়না। মালিক তাকে নিয়মিত খাবার দেয়। রোগ শোক হতে দূরে রাখে। অন্যদিকে বনের পাখিকে খাবারের জন্যে লড়তে হয়। তৈরি করতে হয় নিজের আশ্রয়।
২২ বছর দুষ্টু আমেরিকায় বাস করার পর দুই মেরুর দুই তত্ত্বের উপসংহারে বলতে পারি; সমাজতন্ত্র হচ্ছে খাঁচার পাখি ও পুঁজিবাদী বিশ্ব হচ্ছে বনের পাখি। মানুষের কথা বলা ও চিন্তা শক্তির স্বাধীনতা যখন কেঁড়ে নেয়া হয় সে আর মানুষ থাকেনা।

ইদানীং কার লেখায় যেন পড়েছিলাম কোটি কোটি বাংলাদেশিদের হৃদয়ে আমেরিকার জন্যে আছে দুটো পছন্দ; এক, আমেরিকা আমাকে ভিসা দাও, দুই নইলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাও। এই যে আমেরিকা ঘৃণা, নিরবচ্ছিন্ন রুশ প্রেম, এতকিছুর নীচে কোথাও যেন আমেরিকার জন্যে একটা টান। আমেরিকার ভিসা পাওয়া যেন খোদ আজন্ম লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন। এ শুধু আমাদের দেশের বাস্তবতা নয়, গোটা বিশ্বের। ২০ বছর ধরে যে আফগানিস্তানের মাটিকে আমেরিকা তামা তামা করেছে ঐ আফগানরাই বিমানের পাখায় চেপে রওয়ানা দিয়েছিল আমেরিকায়। বাকিদের কথা না হয় বাদই দিলাম, সুযোগ পেলে আজকের রাশিয়ার গোটা জনগণ আমেরিকায় পাড়ি জমাতে এক পায়ে খাড়া।

রহস্যটা কোথায়? যে আমেরিকার জন্যে অন্তরে এত ক্ষোভ, এত ঘৃণা, সে দেশটায় পাড়ি জমানোর জন্যে গোটা বিশ্বের প্রায় সবাই উন্মুখ। নিশ্চয় এমন কিছু আছে সেখানে যা মানুষকে চুম্বকের মত টানে।

রহস্য উন্মোচনে কিরিটি রায় হওয়ার দরকার হয়না। বনের পাখিদের মত দেশটার মানুষও স্বাধীন। অবারিত সুযোগ ও সীমাহীন সম্ভাবনার দেশ এই আমেরিকা। আইনের শাসন, যোগ্যতার স্বীকৃতি ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অফুরন্ত বিনিয়োগই দেশটাকে অন্যদের চাইতে আলাদা করে রেখেছে।

আপনি আমেরিকাকে ঘৃণা করুন এ আপনার অধিকার ও জন্মগত স্বাধীনতা। তবে মৃত্যু পথযাত্রী আপনার সন্তান অথবা পিতা-মাতাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় আপনি যখন তাদের শরীর শেষ ঔষধ প্রয়োগ করতে যাবেন দয়া করে পরীক্ষা করে নেবেন কাদের শ্রম ও অর্থের ফসল এসব ঔষধ। আমি গ্যারান্টি দিতে পারি খাঁচার পাখিদের মগজ হতে এসব বের হয়নি। আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছেন; ঘরে বসে পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন, শপিং করছেন, ডিগ্রী নিচ্ছেন, গবেষণা করছেন...কিছুক্ষণের জন্যে বনের পাখি হয়ে ভেবে দেখুন এসব আবিষ্কারের প্লাটফর্ম। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন মারিওপোল মাটির সাথে মিশিয়ে যারা উল্লাস করছে তাদের কোন অবদান নেই ওসব, নেই কোন বিনিয়োগ।

হিপোক্রেটরা হচ্ছে খাঁচার পাখি। আপনি পুতিনের রাশিয়ার সমর্থক, মানে আপনি মান ও হুশ বিহীন একজন হিপোক্রেট।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন