আগের সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা আজকের রাশিয়া আসলেই কি কোনদিন পরাশক্তি ছিল?

Submitted by WatchDog on Friday, April 1, 2022

রাশিয়া আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। চাওয়া পাওয়ার সমীকরণ মেলাতে গেলে এই দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার পাল্লাটাই ভারি হবে। ফুল স্কলারশীপ, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী, বাধভাঙ্গা উপভোগের যৌবন, প্রথম প্রেম, প্রথম সেক্স সহ আরও অনেক কিছু যা বাংলাদেশের মত রক্ষণশীল দেশে স্বপ্ন মনে হবে। ঢাকা বিমানবন্দর হতে যেদিন এরোফ্লটের ফ্লাইটে পা রাখি আমার পকেটে কানাকড়িও ছিলনা। সেই আমি ইউরোপের বিভিন্ন গলিতে ঘুরে বেড়িয়াছে পকেটের স্বাস্থ্য চলনসই পর্যায়ে রেখে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সাড়ির সমর্থক। ভারতের ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ার সুবাদে তাদের সাহয্য সহযোগীতা ছিল প্রত্যাশিত। সময়টা ছিল স্নায়ু যুদ্ধের সময়। যেহেতু আমেরিকান মোড়লিপনায় পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশই ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, তাই সোভিয়েত ইউনিয়নকে পক্ষ নিতে সময় লাগেনি।
৭১'এ সোভিয়েত সাহায্য নিয়ে আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধের কমতি নেই। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে তা অহরহ প্রকাশ করা হচ্ছে।

সে যুদ্ধে আমাদের কতটা সাহায্য করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন তার কি কোন তালিকা আছে? আমরা শুধু শুনি আমাদের বন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শাক্তি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকবার ভেটো দেয়ার বাইরে কি ছিল দেশটার কন্ট্রিবিউশন তার কোন পরিস্কার পরিসংখ্যান নেই।
পরাশক্তি বিধায় মাঠের জন্যে সামরিক সাহায্য ছিল প্রত্যাশিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন আদৌ কি কোন সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছিল? অথবা নগদ সাহায্য দিয়ে শক্তিশালী করেছিল মাঠের লড়াই।
এখানেই আসে সোভিয়েত তথা আজকের রাশিয়ার পরাশক্তির তকমা পাওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন।

যুদ্ধের সময় বাদ দিয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে ফিরে গেলে ওখানেও দেখবো সোভিয়েত সাহায্য ও সহযোগীতার অনুপুস্থিতি। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত জাতিকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে প্রয়োজন ছিল ম্যাসিভ সাহায্য। সে সাহায্যের সিকিভাগও আসেনি পূর্ব ইউরোপ হতে। ইনস্টেড, রাশিয়া অফার করেছিল স্টূডেন্ট স্ক্লারশীপ। এটাকে যদি সাহায্য বলা হয় তাহলে এর গভীরে ঢুকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে ঐ সময় নগদ অথবা সুল্ভমূল্যের ব্যবসা-বাণিজ্য করার মত শক্তি ছিলনা সোভিয়েত অর্থনীতির। অনেক ক্ষেত্রে বার্টাচ চুক্তি, অর্থাৎ পণ্য বিনিময়ের মত মোগল আমলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে পা দিয়েছিল কথিত এই পরাশক্তি।

অনেকে টেনে আনবেন ঘোড়াশাল থার্মাল পাওয়ার ষ্টেশনের বাস্তবতা। কারিগরী বিবেচনা পাওয়ার জেনারেশনের এই উৎস বাংলাদেশের জন্যে সব সময়ই ছিল লায়াবিলিটি। এ ধরণের নড়োবড়ে ও অচল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাওয়ার জেনারেট করা বাকি বিশ্বের জন্যে অস্বাভিক কিছু না। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন বাকি বিশ্বের সাধারণ কোন দেশ ছিলনা, তারা ছিল পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন পরাশক্তি।

এবার চলুন ঘুরে আসি খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরে।
কালচারটা ছিল প্রতিটা সোভিয়েত পরিবারের। সকাল ঘুম ভাঙ্গলে আর দশটা দেশের মতই সোভিয়েত পরিবারের স্বামী স্ত্রী দুজনেই চলে যেত কাজে। প্রায় ৯০ ভাগের উপর পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর সাথে থাকত একজনের মা বাবা। কর্মক্ষম ওয়ার্কফোর্সের সবাই কাজে চলে যাওয়ার পর ঘরে অবস্থানরত বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব ছিল বাজারের ব্যাগ নিয়ে শপিংয়ে যাওয়া। গেলাম আর কিনলাম জাতীয় স্বাভাবিক শপিং নয়, বরং লাইন ধরে শপিং। এসব শপিংয়ের স্থায়িত্ব হত ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সাধারণ এক কিলো আলু অথবা মাংসের জন্যে ঘরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা লম্বা লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হত প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে।
সোভিয়েত নাগরিকদের প্রায় সবার জীবনের একটা বিরাট অংশ কেটে যেতো লাইনে দাঁড়িয়ে। পাব্লিক টয়লেট হতে শুরু করে সাধারণ রেষ্টুরেন্ট অথবা ক্যাফেতে ঢুকতে তীর্থের কাকের মত লাইনে দাঁড়ানোর কোন বিকল্প ছিলনা।

নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্যে সোভিয়েত নাগরিকদের হাহাকার ছিল মহামারীর মত। খাবার টেবিল আলোচনায় পরিবারের সবার মূল সাবজেক্ট থাকত একটাই, কোথায় কি পাওয়া যাচ্ছে...এ তালিকায় টয়লেট পেপারও বাদ যেতো না। কোটি কোটি সোভিয়েত নাগরিকদের জন্যে দৈনিক পত্রিকা ছিল নিত্যদিনের টয়লেট পেপার।

তৃতীয় বিশ্বের নাগরিকদের জন্যে এসব অব্যবস্থা হয়ত অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ৩য় বিশ্বের কোন দেশ ছিলনা। ওরা ছিল পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন পরাশক্তি।

সোভিয়েত নাগরিকদের জন্যে বাইরের কোন দেশে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। কেবল সরকারী স্পন্সরেই তা সম্ভব ছিল। বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল মদ্যপান। নারী পুরুষ কেউ এই তালিকার বাইরে ছিলনা।শয়নে স্বপনে কামনা বাসনায় ওদের থাকতো ভদকা পানের অভিলাস। ওদের জন্ম ও মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে থাকত মদ্যপানের লম্বা অধ্যায়।

চেচনিয়ায় দুই দুইবার ম্যাসাকারের পর ইঙ্গুসেতিয়া, জর্জিয়া, ক্রাইমেয়িরার পর এবার গোটা ইউক্রেইন জুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে রুশ বাহিনী। কোটি কোটি বাংলাদেশির দরদ উথলে উঠছে বর্বর রুশদের জন্যে। কারও কাছে পরিস্কার কোন ব্যখ্যা নেই কেন এই দরদ। জিজ্ঞেস করলে বলে আমেরিকার সহায়তায় পশ্চিমারা মুসলিম দেশে হামলা চালাচ্ছে তাই ইউক্রেইনকে শাস্তি দেয়া মানে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার শামিল।
এ লজিক কতটা অসার অবাস্তব তা বুঝতে একজনকে আধুনা রাশিয়ায় বাসকরে তাদের মনোজগতের সাথে মিশে যেতে হবে। প্যালেস্টাইন নামের একটা জায়গা আছে এবং মুসলমান অধ্যুষিত দেশে ওখানে আমেরিকার ছত্রছায়ায় ইসরায়েল নামের একটা দেশ বর্বরতা চালাচ্ছে এর নাম গন্ধও জানা নেই অধিকাংশ রুশদের। জাতি হিসাবে ওরা পঙ্গু। চিন্তার জন্যে যথেষ্ট মগজ নেই ওদের মাথায়। ৭০ বছরের কারারুদ্ধ সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ওদের বিকলাংগ বানিয়ে উন্মাদের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। শতকরা ৮০ জন রুশ নাগরিক বিশ্বাস করে পুতিন ইউক্রেইন আক্রমণ না করলে ওরা আক্রমণ চালাতো রাশিয়ায়। যেমনটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানরা বিশ্বাস করেছিল হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষকে।

রুশদের ভাণ্ডার হতে পারমানবিক আর্সেনাল মাইনাস করলে সামরিক বিবেচনায় ওরা কোন শক্তি না। তেল ও গ্যাস বাদ দিলে ওদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য ৩য় বিশ্বের অনেক দেশের পর্যায়ে চলে যাবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ওদের কোন অবদান নেই। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চাপা পরে গেছে স্বৈরশাসকের তৈলমর্দনের নীচে।

রুশ লেখক আন্তন চেখভের কথা দিয়েই শেষ করি; In a human being everything should be beautiful: the face, the clothes, the soul, the thoughts. . . . সুপার পাওয়ার হতে চাইলেও সবকিছুতে সুপ্রীম হওয়া বাঞ্চনীয়...কথায়, কাজে, মননে...

ভালো লাগলে শেয়ার করুন