দ্যা গুলাগ আর্খিপেলাগো বনাম স্ট্যান্ড আপ কমেডি...

Submitted by WatchDog on Sunday, March 27, 2022

১৯৪১ সালের ২২শে জুন হিটলার বাহিনী সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। এরও আগে হিটলার যখন পূর্ব পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আগ্রাসন চালিয়ে নিজেদের দখলে আনছিলেন কুখ্যাত সোভিয়েত কসাই জোসেফ ভিসানিওরোভিচ স্তালিন হিটলারের সাথে আলাদা চুক্তি করে নিশ্চিত করেছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা। কিন্তু হায়, সময় ক্ষেপণে হিটলারের এই অপ-কৌশল বুঝতে স্তালিনের দেরি হয়ে যায়। ততক্ষণে পোল্যান্ডর দখল নিয়ে সোভিয়েত সীমান্তে ঢুকে পরেছে হিটলার বাহিনী।

পশ্চিম ইউক্রেইন সহ বিভিন্ন দেশের সীমান্তে অবস্থিত সোভিয়েত জেলখানা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন স্তালিন। নিজের জেনারেলদের আদেশ দেন কোন অবস্থাতেই যেন জার্মানদের হাতে না পরে হাজতিরা।

যেমন স্তালিন তেমনি তার জেনারেল! স্তালিনের গেস্টাপো বাহিনী NKVD যুদ্ধ শুরুর ৮ দিনের মাথায় পরিষ্কার করে ফেলে পশ্চিম ইউক্রেইন সহ বেলারুশ, এস্তোনিয়া, লিথুনিয়ার জেলখানা। ৪০,০০০ হাজতিকে জেলের ভেতর ম্যাসাকার করে তামিল করে স্তালিনের হুকুম।

১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড দখলের জন্যে জার্মান ও সোভিয়েতরা দ্বিমুখী আক্রমণ করে দেশটায়। পশ্চিম ইউক্রেইন ছিল পোল্যান্ডের অংশ। স্তালিন বাহিনী হাজার হাজার নিরস্ত্র জনগণের রক্তে রঞ্জিত করে নিজেদের হাত। দখল নেয় পশ্চিম ইউক্রেইন এবং অফিসিয়ালি অন্তর্ভুক্ত করে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় হিটলার বাহিনী পশ্চিম ইউক্রেইনের দখল নিয়ে ঐ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ স্বাগত জানায় তাদের। ১৯৪৪ সালে স্তালিনের রেড আর্মি পুনর্দখল নেয় ইউক্রেইনের ঐ অঞ্চল। এবং তারপরই শুরু হয় ম্যাসিভ এথনিক ক্লিনজিং।
রক্তের বন্যায় লাল হয়ে উঠে ইউক্রেইনের মাটি। চেচেনদের মত গোটা পশ্চিম ইউক্রেইনকেও করা হয় জনশূন্য। সাইবেরিয়া ও কাজাকিস্তানের মরুভূমিতে নির্বাসনে পাঠানো হয় তাদের। সাইবেরিয়ার -৫০/৬০ ডিগ্রী তাপমাত্রার গুলাগ অর্থাৎ ফোর্সড লেবার ক্যাম্প গুলোতে মানবেতর জীবন যাপনের এক পর্যায়ে ওখানেই মারা যায় হাজার হাজার ইউক্রেনিয়ান।

গণতান্ত্রিক ও মুক্ত বিশ্বের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আমরা অনেকেই বাস করছি পশ্চিমা বিশ্বের দেশে দেশে। সদ্য শুরু হওয়া রুশ আগ্রাসনের পক্ষে হাততালি দিতে গিয়ে তামাশা করছি ইউক্রেইনের শাসন ব্যবস্থা ও তার বর্তমান প্রেসিডেন্টকে নিয়ে। এসব করার অধিকার আমাদের আছে। গণতন্ত্র এসব ঠাট্টা তামাশার গ্যারান্টি দেয় বলেই বসবাসের জন্যে আমরা বেছে নেই পৃথিবীর এসব দেশ। ইউক্রেইন গণতন্ত্রের পারফেক্ট উদাহরণ এমন নয়, কিন্তু দেশটায় গণতন্ত্র আছে বলেই মানুষ ভোটের মাধ্যমে এক প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে অন্য জনকে ক্ষমতায় বসাতে পারে। হোক সে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান।

প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন তথা আজকের রাশিয়া কি এবং বিশ্ব মানবতার জন্যে কতটা হুমকি তা জানতে চাইলে যুগে যুগে সোভিয়েত স্বৈরশাসকদের নিজ দেশের নাগরিকদের উপর চালানো ভয়াবহ নিপীড়নের ইতিহাস জানতে হবে। এবং আমার মত ১২ বছর ঐ দেশে বাস করতে হবে।
https://www.dustjackets.com/pages/books/58528/aleksandr-i-solzhenitsyn/gulag-archipelago-1918-1956-the

ভালো লাগলে শেয়ার করুন