ছাগলের তিন নং বাচ্চা ও কতিপয় স্বৈরশাসক...

Submitted by WatchDog on Friday, February 25, 2022

চাপা উল্লাসে উত্তেজিত স্বদেশীদের অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, আমি কোন চেটের বাল আবদুল্লাহ যে রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়ে হৈ চৈ করছি।

আপনাদের জন্য সমবেদনা রইল। পরীমনিদের নিয়েই থাকুন এবং বীচি চুলকানিতে জৈব সুখ উপভোগ করুন। কারণ আপনাদের পৃথিবী সীমিত মনি আর বীচির মাঝেই। সবাইকে একই গলির বাসিন্দা ভাবলে নিশ্চয় ভুল করবেন।

২০ বছর ধরে একজন বেটে মত মানুষ রাশিয়া শাসন করছে। এবং আরও ২০ বছর অথবা আমৃত্যু ক্ষমতা ধরে রাখার পরিকল্পনা করছেন। বিরোধী মতবাদের সবাইকে জেল, জুলুম, নির্যাতন, হুমকি, গুম খুনের মাধ্যমে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। দেশটায় কেউ কোন কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সে রাষ্ট্র বিরোধী, সন্ত্রাসী এবং হালকা বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার কোয়ালিফাইড নাগরিক।

এভাবেই ২০ বছরের উপর ক্রেমলিনে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন বেটে মানুষ ভ্লাদিমির পুতিন। এক কালের সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন/রাশিয়াকে নামিয়ে এনেছেন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। কেবল
তেল আর গ্যাস বিক্রি করে সক্রিয় রেখেছেন অর্থনীতি। এর বাইরে রফতানি করার মত রাশিয়ার কিছু অবশিষ্ট নেই।

অনেকেরই প্রশ্ন, কেন এই যুদ্ধ? কেন ইউক্রেইন?
উত্তরে মোটা মগজের ডিক্টেটরদের ভৃত্যরা বলবেন রাশিয়া তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে যা দরকার তাই করবে। ন্যাটো ইউক্রেইনের কাঁধে বন্ধুক রেখে নাকি রাশিয়া আক্রমণের পাঁয়তারা করছে, তাই ইউক্রেইনকে থামানো তার পবিত্র দায়িত্ব।

আসলেই কি তাই? প্রথমত, ইউক্রেইন ন্যাটোর সদস্য না। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। দ্বিতীয়ত, পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন একটা দেশের বিরুদ্ধে ন্যাটো বা অন্যকোন শক্তি আক্রমণ করতে যাবে এমন চিন্তা কেবল উদ্ভটই নয়, হাস্যকরও বটে।

ইউক্রেইন কোন কালেই রাশিয়া আক্রমণের শক্তি রাখে না। সামরিক শক্তির ভারসাম্যে রাশিয়া হাজার গুন এগিয়ে। এ সত্য ইউক্রেইন যেমন জানে, ন্যাটোরও অজানা নয়। ওদের কেউ ঘাস খেয়ে বড় হয়না যে এমন সেলফ-ডিস্ট্রাকটিভ কিছু করতে যাবে।

রাশিয়ায় গণতন্ত্র নেই। যুদ্ধ শুরু করতে অথবা নিউক্লিয়ার বাটনে চাপ দিতে ওখানে জনগণের ম্যাণ্ডেট নিতে হয়না। এক ব্যক্তির ইচ্ছাই যথেষ্ট। এবং সে ব্যক্তি ভ্লাদিমির পুতিন। তাই কেউ যদি তার প্রতিবেশীদের জন্যে হুমকি হয়ে থাকে যে রাশিয়া। ইউক্রেইন অথবা ন্যাটোর কলকব্জা এক ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত হয়না।

তাহলে পুতিনের কেন যুদ্ধ দরকার?

উদাহরণ চাইলে আপনি আপনার নিজের ঘরের দিকে চোখ ফেরাতে পারেন। ছোট স্কেলে হলেও সিমিলারটি পাবেন।

কেন একজনকে বছরের পর বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে হয়? কেন সে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যে বিরোধীদের গুম, খুন আর কথিত ক্রসফায়ারে দিয়ে খুন করতে হয়। তুলনা করুন রাশিয়ান বিরোধী নেতা আলাক্সেই নাভালনিকে আপনার নিজের দেশের বিরোধী নেত্রীর সাথে।

লেখাটা যখন লিখছি নাভালনি দশ বছরের সাজা নিয়ে জেলে আছেন। এবং নতুন করে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন আরও দশ বছর সাজার জন্যে।
মৃত্যু পথযাত্রী বাংলাদেশের বিরোধী নেত্রীকেও নতুন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। নতুন করে জেল দেয়ার প্রকল্প শুরু করেছে সরকার।

মিলটা কোথায়? অমিল বলতে আদৌ কিছু কি আছে এখানে?
ক্ষমতা! এবং ক্ষমতার ছত্রছায়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট নয় কি?

প্রতিবেশী দেশে গণতন্ত্র প্রস্ফুটিত হবে, মানুষ ফ্রি ও ফেয়ার ইলেকশনে ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দমত লেজিস্লেটিভ ও এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ নির্বাচিত করবে ক্রেমলিনের ছোট-খাটো মানুষটার জন্যে কি তা সমস্যা নয়? ভেবে দেখুন বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে; সমস্যাটা কি ক্রেমলিন সমস্যার মত নয়?

ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইলে জনগণকে ছাগলের কাতারে নামিয়ে আনতে হয়। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন করতে হয়। নির্বাচনে জালিয়াতি করতে হয়। পেশী শক্তি আর সামরিক শক্তির যৌথমিলনে নিশ্চিত করতে হয় আমরণ ক্ষমতা ধরে রাখার নিশ্চয়তা। পৃথিবীর দেশে দেশে কুখ্যাত স্বৈরশাসকরা তাই করছেন অথবা করে গেছেন।

উত্তর কোরিয়ায় কিম জুং উন, রাশিয়ায় পুতিন, চীনে শী জিং পিং, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একই পথের পথিক। ক্ষমতা ধরে রাখতে কেউ ন্যাটোর, কেউ ইসলামী সন্ত্রাস কেউবা আবার আমেরিকার ভয় দেখায়।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করায় যুদ্ধ একটা প্রিটেক্সট মাত্র। ঘরের সমস্যা অন্যদিকে প্রবাহিত করে জনগণকে ছাগল বানানোর এফেক্টিভ প্রকল্প। মিস্টার পুতিন ইউক্রেইন আক্রমণের মাধ্যমে তাই করছেন।

আমরা যারা ডিক্টেটরদের ছাগল প্রকল্পের তিন নং বাচ্চা, হয় তারা পুতিনদের পোষ্য, হয় দেউলিয়া মগজের আদম সন্তান অথবা সিম্পলি ফুলস্কেল আরাও একজন ছাগল।
চালিয়ে যান নিজেদের সাময়িক উল্লাস। তবে চোখ কান খোলা রেখে নজর রাখুন এসব ক্ষমতা-লিপ্সু ডিক্টেটরদের দিকে।
https://www.facebook.com/watch?v=319823580190944

ভালো লাগলে শেয়ার করুন