ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট বাংলাদেশি ভার্সন!

Submitted by WatchDog on Saturday, February 5, 2022

ওসি প্রদীপ ও তার পার্টনার ইন ক্রাইম লিয়াকতকে ফাঁসি দিয়েছে নিম্ন আদালত। ন্যায় বিচার প্রত্যাশীদের অনেকের কাছে ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্টের সহজ সরল সমীকরণের মত মনে হবে এ শাস্তি।
আসলেই কি তাই?

একজন পুলিশ অফিসার দলবল নিয়ে বছরের পর বছর ধরে গুম, খুন, হত্যা, লুণ্ঠন চালিয়ে গেছে। কেবল ক্রস ফায়ারেই খুন করেছে শতাধিক মানুষ। তিনিই আইন, তিনিই বিচারক এবং তিনিই জল্লাদ, সদম্ভে এমনটাই তিনি জাহির করতেন। বিনিময়ে মমতাময়ী মা জননী, শান্তির টুকটুকে কবুতরের হাত হতে তুলে নিয়েছিলেন প্রাপ্য পুরস্কার।

সব চলছিল পানির মত। ঘর হতে নিয়মিত গৃহবধুদের উঠিয়ে এনে কর্মক্ষেত্রে মাস্তি করেন। স্বামীকে মাদক ব্যবসায় ফাঁসিয়ে পণ হিসাবে স্ত্রীর কাছে দাবি করেন লাখ লাখ টাকা। উপরি পাওনা হিসাবে ধর্ষণ করেন পাওনা মেটাতে অক্ষম স্ত্রীদের। ব্যাংক ব্যালেন্স, বাড়ি গাড়ি ফুলে ফেঁপে কেবল স্বদেশেই নয়, প্রতিবেশী দেশেও অংকুর হয়ে মহীরুহে পরিণত হয়েছিল।

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান বাংলাদেশের কনটেক্সটে কোন স্বাভাবিক মানুষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন। এবং বেজায় শক্তিশালী।
সমস্যার গোঁড়া এখানেই।

জনাব সিনহার নামের আগে মেজর শব্দটা না থাকলে এতদিনে হয়ত হত্যাকাণ্ডের জন্যে প্রদীপ রায় নতুন কোন পুরস্কার বাগিয়ে নিতেন উন্নয়নের আর্কিটেক্ট ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মোহম্মদ বখতিয়ার খিলজির লম্বা হাত হতে।

আজকের ফাঁসির রায় ছিল সেনাবাহিনীকে তুষ্ট করার রায়। রায় অন্যকোন দিকে বাঁক নিলে বাহিনীর কেউ কেউ হয়ত রিভোল্ট করে বসতো। ফলে ডমিনো এফেক্টের মত ক্ষমতার তখত তাউস পর্যন্ত পৌঁছে যেতো ভয়ের ঢেউ।

পুলিশ তুমি যতই মার, বেতন তোমার দুইশ বার, পাকিস্তান আমলে এমটাই ছিল পুলিশের মূল্যায়ন। অধুনা পুলিশের বেতন হয়ত পাকিস্তান আমলের ২১২তে সীমাবদ্ধ নেই, কিন্তু সেনাবাহিনীর তুলনায় তাদের আর্থিক ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ঐ আমলের তুলনায় সামান্যতম উন্নতি হয়নি। পুলিশ পুলিশই। সব বিচারে সমাজের তৃতীয় শ্রেনী নিকৃষ্ট প্রাণী, যারা রাস্তার পতিতা হতেও চাঁদাবাজি করে।

বাংলাদেশের পুলিশ সেনাবাহিনীর একজনকে খুন করে পার পেয়ে যাবে কস্মিন কালেও এটা সম্ভব না। অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার নিয়ামক শক্তির তালিকায় সেনাবাহিনীর স্থান সবার শীর্ষে এবং আনফরচুনেটলি পুলিশের স্থান সবার নীচে। আজকের রায় ছিল সবলকে খুশি করার জন্যে দুর্বলকে বলি দেয়া। এ রায় কোন বিচারেই প্রদীপ গংদের শাস্তি বিবেচনা করা যাবেনা, বরং তা ছিল ছাউনির বাহিনীকে নিজের বগলে আগলে রাখার ম্যান্ডেটরি উপঢৌকন।

তাহলে কি পুলিশ নামের তৃতীয় শ্রেণীর বাহিনীকে অবজ্ঞা করল ক্ষমতাসীনরা? মোটেও না, কারণ পুলিশ হচ্ছে অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ফ্রন্টে সন্মুখ যোদ্ধা। তাদের বেজার করা মানে প্রতিপক্ষ পেটানোর হাতিয়ারকে দুর্বল করে ফেলা।

প্রদীপ ও লিয়াকত রাজ্য জয়ের কায়দায় জেল হতে বের হতে না পারলেও নীরবে নিঃশব্দে বেরিয়ে আসবেই। চাইলে আপনি লিখে রাখতে পারেন। শেখ হাসিনা জীবিতাবস্থায় অন্তত প্রদীপকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলাতে পারবেনা। বলির পাঠা বনে লিয়াকত হয়ত ঝুলে যেতে পারে। তবে সেটাও অনিশ্চিত থাকবে ময়মনসিংহের জোকার আব্দেল হামিদের কারণে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন