মৃত্যু পথযাত্রী খালেদা জিয়া...

Submitted by WatchDog on Friday, November 19, 2021

রাজনীতি আমার জন্যে বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জ। রাজনীতি কি ও কেন এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে একেক দেশে একেক রকম উত্তর পেয়েছি যা আমাকে বিভ্রান্ত করেছে। রাজনীতির নামে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে ক্ষমতাসীনরা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজেদের আধিপত্য পোক্ত করার ব্যভিচারকেও রাজনীতি আখ্যায়িত করতে শুনেছি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশার দল নিজেদের বিলাস বহুল জীবন নিশ্চিত করতে গিয়ে রাজনীতিকে নিজেদের মত করে উপস্থাপন করে গেছেন। ইসরায়েল নামের রাষ্ট্র প্যালেষ্টাইনিদের জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে রাজনীতির নামে।

রাজনীতির সবচাইতে জটিল বাস্তবতা অনুধাবন করতে চাইলে একজনকে বাংলাদেশের দিকে চোখ ফেরাতে হবে। এখানে রাজনীতির সংজ্ঞা বহুমুখী, বৈচিত্র্যময় এবং অনেক ক্ষেত্রে উপভোগ্য। রাজনীতি এখানে পেশী শক্তির বৈমাত্রীয় ভাই। মধ্যরাতে ভোট চুরি এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বাহক। এক কথায় জগাখিচুড়ি সামাজিক সহাবস্থান।

সন্দেহ নেই বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন জীবন যুদ্ধের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ওপার হতে মৃত্যু উনাকে আলিঙ্গন করার জন্যে মুখিয়ে আছে। যে কোনদিন, যে কোন সময় খালেদা জিয়ে মৃত্যু বরণ করতে যাচ্ছেন।

আমি আপনি চাই বা না চাই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ খালেদা জিয়ার ভক্ত। রাজনীতিতে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে তিনি মধ্যরাতের ভোট চুরির আশ্রয় নেননি। ক্ষমতার গণতন্ত্রকে অন্তত চক্ষু লজ্জার কারণে হলেও কলুষিত করেননি যেমনটা করছেন আজকের ক্ষমতাসীনরা।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয় ডাক্তাররা তা জানিয়ে দিয়েছে। এখানে প্রশ্ন করা যায় দেশের কোটি কোটি মানুষ স্থানীয় চিকিৎসা নিয়েই তো বেঁচে আছেন। তাহলে রাজনীতিবিদদের কেন চিকিৎসার জন্যে বিদেশে যেতে হবে!

এখানেও আসবে রাজনীতি। ক্ষমতার রাজনীতি। দেশের ক্ষমতাসীন নেতা, উপনেতা, পাতি-নেতা, ছটাক নেতা সহ সবধরনের নেতারা চিকিৎসার জন্যে বাইরে যান। এ যেন অনেকটা বাধ্যতামূলক। অনেকে মধ্যরাতে এয়ার এম্বুলেন্স ভাড়া করে বিদেশে যান। দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নিজেদের চোখ, দাঁতের নিয়মিত সেবা যত্নের জন্যে হরহামেশাই বিদেশ পাড়ি দেন। এসব যাত্রা ও চিকিৎসার খরচ কে যোগায় তা নিয়ে জাতি কোন প্রশ্ন করেনা বলেই ক্ষমতাসীনদের কারও কাছে জবাব দিতে হয়না। এটাই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় বাধা কোথায়?

অনেকে বলবেন তিনি তো আদালত দণ্ডিত অপরাধী। অপরাধীরা আবার চিকিৎসা করতে বিদেশ যায় কোন আইনে! এখানে আবারও আসবে রাজনীতি।

শেখ মুজিবও তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বহুবার দণ্ডিত হয়েছিলেন। জেলে খেটেছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে। এক কথায় পশ্চিম পাকিস্তানের অবৈধ সামরিক সরকার দেশটার আদালতের সহযোগিতা নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করেছিল। খোদ শেখ মুজিবকেও রেহাই দেয়া হয়নি।

খালেদা জিয়াকে দেশের আদালত ২ কোটি টাকার বিদেশী সাহায্য আত্মসাৎ করার অভিযোগে সাজা দিয়েছে। খুব কাছ হতে মনিটর করার সুযোগ হয়েছিল এ মামলা। হ্যাঁ, বিদেশী সাহায্য আত্মসাৎ করা বাংলাদেশে নতুন কোন অপরাধ না। অহরহ ঘটছে এসব। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর অনেক আগেই ক্ষমতাসীনদের পিপীলিকার দল মৌমাছির মত ঝাঁপিয়ে পরেছিল তহবিলে।

খালেদা জিয়া ২ কোটি টাকা নিজে আত্মসাৎ করেননি। ঐ অর্থ এক হাত হয়ে অন্য হাতে যাওয়াতেও উনার কোন হাত ছিলনা। অন্তত রাষ্ট্র তা প্রমাণ করতে পারেনি। খালেদা জিয়ার শাস্তি ছিল রাজনৈতিক। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক সরকারের মত বর্তমান সরকারও গৃহপালিত আদালতের সহায়তা নিয়ে তিনবারের নির্বাচিত (মধ্যরাতে ভোট-চুরির নির্বাচন নয়) প্রধানমন্ত্রীকে শাস্তি দিয়ে নিজেদের ক্ষমতার রাস্তা মসৃণ করেছেন কেবল। পেরিয়ড!

শোনা যায় প্রাক্তন এক রেল-মন্ত্রী অতিরিক্ত ভায়াগ্রা সেবন করে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। রাতারাতি এয়ার এম্বুলেন্স ভাড়া করে সিঙ্গাপুর যান এবং সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। তার এই চিকিৎসার খরচের সবটাই বহন করেছিল এই জাতি।

অসুস্থ, বৃদ্ধ, মৃত্যু পথযাত্রী খালেদা জিয়াও কি ক্ষমতার পথে বাধা? তিনি কি বিদেশ গিয়ে রাতারাতি সুস্থ হয়ে মাঠ গরম করবেন, ক্ষমতা ফিরে পেতে দুয়ারে দুয়ারে ধর্না দেবেন এমনটাই কি ভোট চোরদের ভয়?

মনে আছে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের জানাজায় হাজির হওয়া লাখ লাখ মানুষের কথা? ওরা হাজির হয়েছিল ককো জিয়ার জানাজায় শামিল হয়ে সওয়াব হাসিলের জন্যে নয়, বরং জিয়া পরিবারের প্রতি তাদের একাত্মতা ও সহমর্মিতা প্রকাশের জন্যে।

যতই আদালতের দোহাই দেয়া হোক না কেন, শেখ পরিবারের মত জিয়া পরিবারেরও কোটি কোটি ভক্ত আছে বাংলাদেশে। হামলা মামলা গুম খুন করে তাদের দমিয়ে রাখলেও তার সরে যায়নি তাদের কমিটমেন্ট হতে। সময় ও সুযোগই তা প্রমাণ করে।

বাড়ি হতে উচ্ছেদ করে, শয়নকক্ষে পর্ণ ম্যাগাজিন রেখে, জেলে ঢুকিয়ে, মামলার পর মামলা ঠুকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূল করা ফ্যাসিবাদের অন্যতম কলকব্জা। বাংলাদেশের ভোট-চোরের দল তাই করছে।

ক্ষমতার সোনালী প্রহরে খালেদা জিয়ার সরকার ফেরেশতা ছিল এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। খাম্বা মামুন আর হাওয়া ভবন নিয়ে আমার লেখা ৪০০'র মত ব্লগ খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে নেট দুনিয়ায়।
কিন্তু একজন বৃদ্ধ, অসুস্থ, মৃত্যু পথযাত্রী মহিলাকে নিয়ে ভোট-চোরদের উপহাস, ঠাট্টা, বিদ্রূপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করা আমার বিচারে অন্যায়।

ক্ষালেদা জিয়াকে নিয়ে আজকের ভোট-চোরদের রাজনীতির দেশীয় রাজনীতির কলঙ্কময় অধ্যায় হিসাবেই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকব

ভালো লাগলে শেয়ার করুন