একজন মালালা ইউসুফজাই!

Submitted by WatchDog on Thursday, November 11, 2021

আসুন কল্পনা করি এমন একটা সিচুয়েশান; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশকটা দেশ বাংলাদেশিদের জন্যে স্ব স্ব দেশ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, শত শত বিমান শাহজালাল বিমান বন্দরে অপেক্ষায় আছে "আগে আসলে আগে যাবে" এমন শর্তে বাংলাদেশিদের নিয়ে উড়াল দেয়ার জন্যে।

এবার আসুন কল্পনা করি ঢাকার বাস্তবতা:
কয়েক কোটি মানুষ পঙ্গপালের মত ধেয়ে আসছে বিমান বন্দরের দিকে। ষ্ট্যাম্পপিডে দলিত মথিত হয়ে মানুষ ভর্তা হচ্ছে আলুর মত।

এবার আসুন অন্যদিকে চোখ ফেরাই।
পাকিস্তানের পশতুন কিশোরী মালালা ইউসুফজাই বিয়ে করেছেন আরেক পাকিস্তানিকে। এ নিয়ে মন্তব্যের ঝড় বয়ে যাচ্ছে বাংলা সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরুটা বিয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মালালার প্রশ্ন হতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দুনিয়ার সব গণেশ একসাথে উলটে গেছে এই মন্তব্যে। ট্রল করতে গিয়ে অনেকে মালালাকে গর্ভবতী বানিয়ে হাসপাতালের ডেলিভারি ইউনিট পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন।

এসব নিকৃষ্টতম মন্তব্যের গোঁড়াটা অবশ্য অন্য জায়গায়।
মালালারা কেন স্কুলে যায় তা মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তানের মৌলবাদীরা। তেহরিক-ই-তালেবান নামের এক গ্রুপ তাকে খুব কাছ হতে গুলি করেছিল। সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল মালালা।
একজন স্কুলগামী কিশোরীর গুলি খেয়েে বেঁচে যাওয়া ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল পশ্চিমে। সহমর্মিতার ঢল নেমেছিল পাকিস্তানের এই কিশোরীর জন্যে।

চিকিৎসার জন্যে পশ্চিমা দেশে গিয়ে আর পাকিস্তানে ফিরে যাননি মালালা ইউসুফজাই। পৃথিবীর ঐ প্রান্তে ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগীতা পান নিজের জীবন গড়ে তোলার পথে। পাশাপাশি কথা বলতে শুরু করেন পাকিস্তানের মত দেশগুলোতে মেয়েদের স্কুল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।

২০১২ সালে পাকিস্তান সরকার মালালাকে সে দেশের ন্যাশনাল ইউসুফ পিস প্রাইজ দিয়ে সম্মানিত করে। ২০১৩ সালে পান শাখারভ প্রাইজ। ২০১৪ সালে ভারতীয় একজনের সাথে যৌথভাবে পান নোবেল শান্তি পুরস্কার।

প্রায় ১৭ কোটি বাংলাদেশির জন্যে এসব পুরস্কার কেন জানি তাদের গালে থাপ্পড় হয়ে ফিরে আসে। শুরু হয় হাসি তামাশা, ঠাট্টা ব্যাঙ্গ, চরিত্র হনন সহ হরেক রকম ট্রল। মালালার প্রতি বাংলাদেশিদের উষ্মার কারণ অটোপসি করলে বুঝা যায় ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদের প্রতি আমাদের দুর্বলতা।
কিশোরী মালালা সেদিন তেহরিক-ই-তালিবানদের গুলিতে নিহত হলেই যেন ধর্মের জয় হতো।

মালালা ইউসুফজাই বেঁচে গিয়ে যেন ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি করে ফেলেছেন, এমনটাই বাংলাদেশিদের মূল বক্তব্য। আর একজন গরীব পাকিস্তানী কিশোরীর পশ্চিমে যাওয়া যেন বিশাল এক অপরাধ। নোবেল কমিটির নোবেল দেয়া যেন পত পত করে উড়া ধর্মীয় পতাকাকে মাটিতে নামিয়ে আনার শামিল।

এই আপনাকেই বলছি:
শাহজালাল বিমানবন্দরে পশ্চিমাদের বিমান আপনার মত বাংলাদেশিদের অপেক্ষায় থাকলে ওখানে গিয়ে থু থু মেরে ঘরে ফিরে আসবেন। ভুলেও পশ্চিমা দুনিয়ায় দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। পৃথিবীর ঐ অংশ কেবল কাফেরদের জন্যে। মালালাও কাফের। কেবল আপনই সৎ চরিত্রবান ফুলের মত পবিত্র একজন বিশ্বাসী।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন