চলুন আল-আকসায় ঘুরে আসি!

Submitted by WatchDog on Saturday, August 14, 2021

আপনি যখন Damascus Gate দিয়ে পুরানো জেরুজালেমের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকবেন প্রথমেই চোখে পরবে আল-আকসা মসজিদের চূড়া।
ওখানে যাওয়ার রাস্তা ধরলে আপনাকে পার হতে হবে অনেক গুলো সিঁড়ি।
একবার সিঁড়ির গোঁড়ায় পা রাখলে মনে হবে এ যেন অনন্তকালের যাত্রা। মনে হবে এর শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।
সূর্যাস্ত পর্যন্ত পাথরের এ রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ট্যুরিষ্টদের বিরামহীন স্রোত আপনাকে ভুলিয়ে দেবে সিঁড়ির প্রতিটা ধাপ ইতিহাসের সাক্ষী।
অন্ধকার নামলে এখানে চেপে বসে ভৌতিক নীরবতা।
হাঁটতে ভয় লাগে। গায়ের লোম শিউড়ে উঠে। মনে হয় কেউ যেন পিছু নিয়ে তাড়া করছে।
লম্বা এই রাস্তার গণ্ডায় গণ্ডায় বাঁক। একটা বাঁক মিস করলে আপনি হারিয়ে যাবেন।
কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। কারণ দু'ধারের দোকানগুলোও ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে।
কেউ যদি আপনার সবকিছু ছিনিয়ে নিতে চায় রাতের এ রাস্তাটা হবে ওতপাতার উত্তম গলি।
হোটেল হাশমি হতে বেরিয়ে আমি যখন এ রাস্তাটা ধরি ততক্ষণে নীরব হয়ে গেছে সবকিছু।
ভয় চাপলেও উপায় ছিলনা। রাতের আল-আকসা মসজিদকে দেখার একটা তাগাদা ছিল। ছিল ভেতরের চাপ।
রাস্তা নয় যেন একটা টানেল! টানেলের শেষপ্রান্তে পা রাখতে দিগন্তরেখায় আবারও ভেসে উঠলে আল-আকসার মিনার। একটা নয়, এ যাত্রায় দুটা।
ডোম অব দ্যা রক ও পুরানো আল-আকসা মসজিদ।
মূল ফটকের দুপাশ আটকে ওরা দাঁড়িয়ে ছিল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক প্লাটুন সৈনিক।
ওদের সবার হাতে সেমি-অটোমেটিক রাইফেল।
আটকে দিল আমাকে।
পরিচয় জানতে চাইলে বললাম আমেরিকান।
পাশের একটা সাইন দেখিয়ে বলল, এই অবেলায় কেবল মুসলমানদের অধিকার আছে মসজিদ সীমানায় পা রাখার।
বললাম, আমিও জন্মগত মুসলমান।
ওরা প্রমাণ চাইলো। বলল যে কোন একটা কালেমা অথবা কোরানের আয়াত বলতে।
৪০ বছর ধরে ধর্মহীন আমি সূরা ফাতেহার কয়েকটা লাইন বললাম।
এবার যেতে দিল। যাওয়ার আগে একজনের সাথে ছবি তুলতে চাইলে বাধা দিলনা।
আল-আকসার মূল সীমানায় আরও একটা বাধা। এ যাত্রায় সাধারণ পোশাক পরিহিত ক'জন গার্ড।
লম্বা একটা সালাম দিলাম। ওরা সালামের জবাবে আমার চাইতে লম্বা সালাম দিল।
যা বুঝার ওরা বুঝে নিলো। স্বাগত জানালো মসজিদের আঙ্গিনায়।

আল-আকসা। বিলিয়ন মুসলমানের ৩য় পবিত্রতম স্থান। ইহুদিদের দাবি এটা আসলে তাদের তীর্থস্থান। ওদের টেম্পল মাউন্টের উপর মুসলমানরা নাকি গায়ের জোরে তৈরি করেছে আল-আকসা।
ইহুদিদের দাবি অনেকটা বাবরি মসজিদ নিয়ে ভারতীয় হিন্দুদের দাবির মত।
ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্যে এতদূর আসিনি। এসেছি এসব ইতিহাস খুব কাছ হতে দেখতে।
ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরেও আপনি যদি রক্ত মাংসের মানুষ হয়ে থাকেন রাতের আল-আকসা কমপ্লেক্স আপনাকে আলোড়িত করতে বাধ্য।

প্রায় ঘণ্টা-খানেক সময় কাটিয়ে আমি যখন হোটেলের রাস্তা ধরি জেরুজালেম নগরী ততক্ষণে ঘুমিয়ে পরেছে।
উপরের দিকে তাকাতে মনে-হল লাখ লাখ তারাদের মেলা আমাকে বিদায় জানাচ্ছে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন