আফগানিস্তান, মিশন ইম্পসিবল!

Submitted by WatchDog on Monday, August 2, 2021

অক্টোবর ৭, ২০০১ সালে শুরু হওয়া মার্কিনীদের আফগান মিশন শেষ হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। আমেরিকান ইন্টারেস্টের কয়েকটা স্থাপনা ছাড়া দেশটার আর কোথাও মার্কিন সৈন্যরা তালেবানদের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকবেনা।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এ যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইতিপূর্বে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন বারাক হোসেন ওবামা ও ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। কিন্তু এ দুজনের কেউই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি কৌশলগত কারণ দেখিয়ে।
যদিও সৈন্য সংখ্যা ব্যপাকহারে কমানো হয়েছিল এবং সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পূর্বে স্থানীয় সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছিল যথোপযুক্ত ট্রেনিং, মার্কিন জেনারেলরা শেষপর্যন্ত বুঝতে পেরেছিলেন ট্র্যাডিশনাল যুদ্ধের জন্য অনুপযুক্ত আফগান মাটিতে যুদ্ধ জেতার সম্ভাবনা নেই।
ইতিমধ্যে ২.২৬১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে এ যুদ্ধে। ২,৩৭২ জন সৈনিকের মৃত্যুর পাশাপাশি ৭১,০০০ সাধারণ আফগান নিহত হয়েছে মার্কিনীদের হাতে। তালেবানদের হাতে নিহত আফগানদের সংখ্যা এক করলে এ সংখ্যা হবে এস্ট্রোনমিকেল। সন্দেহ নেই মার্কিনীদের আফগান যুদ্ধের মূল ভিক্টিম আফগান জনগণ।
অনেকে আফগানিস্তান হতে মার্কিনীদের প্রস্থানকে তালেবানদের বিজয় হিসাবে দেখছেন। ধর্মীয় উন্মাদনায় উন্মাদ অনেকে আবার উল্লাসও শুরু করেছেন। এমনটা তারা করতেই পারেন। কারণ দিনশেষে তালেবানদের নিশ্চিহ্ন করা যায়নি।
এখানে প্রশ্ন উঠবে, আফগানিস্তান আক্রমণে মার্কিনীদের মূল উদ্দেশ্য কি ছিল এবং তা কতটা সফল অথবা ব্যর্থ হয়েছে।
আফগানিস্তান আক্রমণের মূল প্রেক্ষাপট ছিল ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে আল-কায়েদার আক্রমণ।
এ আক্রমণের সাথে সাধারণ আফগান জনগণের কোন হাত ছিলনা। তবে দেশটার তৎকালীন তালেবান সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে ওখানে গড়ে উঠেছিল আল-কায়েদার ট্রেনিং সেন্টার। দলটার প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ওসামা বিন লাদেন সহ দলের বাকি সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান সরকার।
২০ বছর স্থায়ী এ যুদ্ধে আল-কায়েদার অস্তিত্ব বলতে এখন আর কিছু নেই। খোদ ওসামা বিন লাদেনকেও হত্যা করেছে মার্কিনীরা। ভেঙ্গে দিয়েছে তাদের আক্রমণ ও প্রতিরোধের নেটওয়ার্ক। দলটার ২/১ জন নেতা গোছের যারা বেঁচে আছেন তারা এখন পলাতক। এ কাজে মার্কিনীদের সাফল্যকে খাটো করে দেখার উপায় নেই।
দেশটার রাজনৈতিক ক্ষমতা তালেবানদের হাতে গেলে সন্দেহ নেই আল-কায়েদা ও আইসিসদের মত অনেক সন্ত্রাসী সংগঠন আবারও সেইফ-হেভেন খুঁজবে ওখানে। মূলত এমন সম্ভাবনার ভিত্তি উপড়ে ফেলার মিশন নিয়েই মার্কিনীরা যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছিল।
মার্কিনীদের এ মিশন সাফল্যের মুখ দেখেনি। এ ব্যর্থতাকেও খাটো করার উপায় নেই।

উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মত আফগানিস্তানে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ রাজত্ব করতে পারেনি। হয়ত এ কারণেই এ জাতি আধুনিক সভ্যতার অনেক উপাদানের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল হতেও তারা বঞ্চিত হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে সমসাময়িক উন্নতির শূন্যস্থান পূরণ করেছিল ধর্মীয় উন্মাদনা।
আজকের তালেবান সে উন্মাদনারই বাই-প্রোডাক্ট।

অন্য একদেশকে আজীবন নিজেদের দখলে রাখার রাজনৈতিক বাস্তবতা বিলীন হয়ে গেছে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পরপর। তাই মার্কিনীদের আফগানিস্তান ত্যাগ ছিল সময়ের ব্যপার। সে সময় এসে গেছে।
তবে মার্কিনীদের প্রস্থানের পর দেশটার অবস্থা কি হবে তা নিয়ে আতংকিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তার কিছু আলামত ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন