বেহুলা লখিন্দর ও একজন আসলামুল হক!

Submitted by WatchDog on Thursday, April 8, 2021

বেহুলা লখিন্দরের কথা কি আপনাদের মনে আছে?
আমার আছে, থ্যাংক্স টু ছোটবেলায় দেখা বাংলা ছায়াছবি।
মঙ্গলকাব্য মানসমঙ্গলের প্রধান চরিত্র এই বেহুলা। চাঁদ সওদাগরের পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী।
চাঁদ সওদাগর ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের পুজারি। শিবের কন্যা মনসা ছিলেন সর্পদেবী।
সর্পদেবীর কোন পুজারী ছিলনা। তাই তার মন থাকত ভারাক্রান্ত।
একদিন পিতা শিব তাকে ডেকে বললেন, যদি কোন ভক্তিমান শৈব (শিবের উপাসক) প্রথম মনসার পূজা করেন তাহলেই মর্ত্যে তার পূজার প্রচলন সম্ভব।
মনসা এমনটা করার জন্যে চাঁদ সওদাগরকে নির্চাচন করেন। এবং অনুরোধ করেন, তিনি যেন মনসার পূজা শুরু করেন।
শিবের পূজারি চাঁদ সওদাগর অস্বীকার করেন তা করতে।
ক্রোধান্বিত মনসা শাপ দেন একে একে চাঁদ সওদাগরের সব পুত্রকে বিনাশ করার।
সর্পদংশনে একে একে চাঁদ সওদাগরের সব পুত্র নিহত হয়। সময় আসে লখিন্দরের।
অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে চাঁদ সওদাগর সাহায্য নেন দেবতা বিশ্বকর্মার। তিনিই তৈরী করে দেন এমন একটা বাসরঘর যেখানে ছিদ্র করে কোন সাপের প্রবেশ সম্ভব ছিলনা।
কিন্তু মনসার সামর্থের কাছে হার মানে বিশ্বকর্মার বাসরঘর। সর্পদংশনেই প্রাণ হারায় লখিন্দর।
প্রচলিতে নিয়ম অনুযায়ী সর্পদংশনের নিহত লখিন্দরকে ভাসিয়ে দেয়া হয় কলার ভেলায়।

আসলামুল হক ছিলেন এ সহস্রাব্দির লখিন্দর। দুদিন আগে হৃদয় দংশনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চাঁদ সওদাগরের মত তিনিও শক্তিশালী কারও সন্তান।
অঢেল সম্পত্তির মালিক ছিলেন। সবকিছু ভোগ করা হয়নি, তার আগেই মালেকিল মউতের ডাক।
চাঁদ সওদাগর তার সন্তান লখিন্দরের জন্যে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সাজিয়ে ছিলেন বাসর রাত। জনাব হকের প্রতিপালকও তেনার জন্যে নিশ্চিত করেছিলেন নিরাপত্তা। আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক, সব ধরণের নিরাপত্তা।
বালু মহল...সরকারী খাস জমি...ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি মিলিয়ে কোটি কোটি টাকার আর্থিক নিরাপত্তা।
থানা-পুলিশ, আদালত বিচারক, ডান্ডা লীগ মিলিয়ে বিশাল এক বাহিনী্র নিরাপত্তা।
সামাজিক নিরাপত্তার জন্যে গায়ে মেখেছিলেন চেতনার ১নং আতর। তিনি হাঁটলে শরীর হতে বিচ্যুরিত হত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির নূরানী আলো।
এই তিনি হঠাৎ করে লাখ লাখ মানুষকে শোকের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে চলে গেলেন সীমানার ওপারে।
তিনি কি আসলেই চলে গেছেন? এ নিয়ে উপসংহার টানার কি সময় হয়েছে?
প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের বোধহয় অপেক্ষা করতে হবে।
কে জানে হয়ত লখিন্দরের কায়দায় লাশ ভেলায় ভাসিয়ে দিলে নোঙর করবে কোন এক বন্দরে। আর ওখানেই দেখা মিলবে এমন একজনের, যার তেলেসমাতিতে জেগে উঠবেন আসলামুল হক।

সময়টা লখিন্দরদের মরার সময় নয়। কারণ ব্যাংকে এখনো অনেক টাকা পরে আছে। আছে নদী পাড়ের সরকারী খাস জমি। ব্যবসা বাণিজ্য এখনো বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। লখিন্দরদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ ওরা না বাঁঅলে দেশের স্বাধীনতা বাঁচবেনা। চিড় ধরবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় । দেশ ফিরে যাবে পাকিস্তানের কোলে।

আসলামুল হকদের চাঁদ সওদাগর আছে, চাই কেবল একজন বেহুলা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন