জীবন যেখানে যেমন...

Submitted by WatchDog on Monday, January 25, 2021

এমন একটা অভিজ্ঞতার চিন্তা দু'দিন আগেও ছিল অকল্পনীয়। এতদিন যা মুভিতে দেখেছি, টিভির ছোট পর্দায় বছরের পর বছর ধরে নেশাগ্রস্তের মত উপভোগ করেছি আজ নিজে স্বাক্ষী হয়েছি কর্পোরেট আমেরিকার এ অধ্যায়ের। স্থানীয় কাউন্টি অফিস আমাদের কোম্পানীকে কোর্টে নিয়ে গেছে নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত এক বিতর্কের পক্ষে রায় চাইতে। গোটা ব্যপারটার শতকরা ৯০ ভাগই ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং, তাই আমাদের এটর্নী দ্বিপক্ষয়ী বার্গেনের সময় একজন ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতি জরুরি বলে মনে করেছিল। উপর হতে আঙ্গুল তোলা হয় আমার দিকে। আমিও তা সানন্দে গ্রহন করি। প্রথমত; বিতর্কের বিষয়টার সাথে আমার পূর্ব পরিচয় ছিল। আমার জন্যে মূল আকর্ষণ ছিল, প্রতিপক্ষের এটর্নীর অফিসে বসে দরকষাকষি করা।

মুভি অথবা টিভি সিরিজে দেখা ল ফার্মের চাইতেই লাক্সরাসিয়াস ছিল প্রতিপক্ষের অফিস। সাত তলা হতে গোটা শহরকে দেখাচ্ছিল ছবির মত। অফিসে প্রবেশ করার আগে লবিতে কথা বললাম আমাদের এটর্নীর সাথে। ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে। ইমেইল এক্সচেঞ্জ করেছি হাজার বার। নাম হতেই ধরে নিয়েছিলাম ইন্ডিয়ান। পরিচয়ে অবাক হলাম, কেবল ভারতীয়ই নয়, কোলকাতার বাঙ্গালী। স্যুট কোট ছেড়ে শাড়ি পরলে নিশ্চয় আরও আকর্ষনীয় দেখাবে, এমনটাই প্রথম ধারণা। সাধারনত এ ধরনের আলোচনায় এটর্নীরা কথা বলে এবং প্লেইনটিফ ও ডিফেন্ডাররা বোবা বনে শুনে যায়। যেহেতু মামলা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং সংক্রান্ত, এটর্নী আমাকে অনুরোধ করল কথা বলতে। আমি লুফে নিলাম লোভনীয় এ প্রস্তাব।

টিভি সিরিজের মতই প্রতিপক্ষ এটর্নী ভেতরে আমন্ত্রণ জানালো। স্পেশাল রুম। ব্যবস্থাও স্পেশাল। কফি, স্ন্যাক্স সহ আরও অনেক কিছু। বিনয়ের সাথে অস্বীকার করলাম এসব, যেমনটা করে থাকে মামলার দেনদরবারে।
তর্কাতর্কির সবাটাই ছিল কর্পোরেট আমেরিকার প্রফেশনাল আবহাওয়ায়। প্রতিপক্ষ টীমেও ইঞ্জিনিয়ার ছিল। কথা আমরা দুজনেই বললাম। এবং লক্ষ্য পূরণ অমিমাংসিত রেখেই আলোচনা ভাঙ্গতে হলো। সামনে আবার বসতে হবে। লবিতে আমার এটর্নী আমাকে অভিনন্দন জানালো যুক্তিতর্কের জন্যে।

রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। কোভিটই আসল কারণ। স্বাভাবিক সময়ে শহরের উকিল পাড়া ট্রাফিকে গিজগিজ করে। ফাঁকা রাস্তায় পা রাখতে চারদিকের শূণ্যতা একধরণের হতাশার জন্মদিল। ততক্ষণে সূর্যের ঝলমলে আলো গ্রাসকরে নিয়েছে সকালের কুয়াশা। দূরে সান্দিয়া পাহাড়ের চূড়াগুলোও বেরিয়ে এসেছে শীতের ঘোমটা হতে।
ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল কোভিড লড়াইয়ে হেরে যাওয়া বড় বোনের কথা মনে হতে। নিজে ছিলেন এটর্নী। এবং সব সময়ই বলতেন, 'এ লাইনে আসলে তুই একজন ভাল এটর্নী হতে পারতি...

ভালো লাগলে শেয়ার করুন