পদ্মাসেতুর আমলনামা...

Submitted by WatchDog on Saturday, December 12, 2020

রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, রেললাইন নির্মাণ একটা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের অংশ। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদা বাড়ে। ইনফ্রাষ্ট্রাকচার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষন এসব চাহিদারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশে একটা সেতু নির্মাণ চলছে এবং এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ার প্রতিটা ধাপ এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সাফল্য হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এখানে প্রশ্ন, একটা দেশে সরকারের কাজটা কি? সেতু নির্মাণ কি তার দৈনন্দিন কাজের অংশ নয়?

পদ্মা সেতু কারও ব্যক্তিগত দয়ায় নির্মিত হয়নি। বিশ্বব্যাংকের সাথে সেতুর অর্থায়ন নিয়ে কি সমস্যা হয়েছিল ব্যপারটা এখনো পরিস্কার করা হয়নি। এমনকি ইদানিং ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের নেতা হওয়া নিক্সন চৌধুরির নামেও অভিযোগ করেছিল বিশ্বব্যাংক। তৎকালীন সেতু মন্ত্রী, সেতু সচীব, কেবিনেট ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাই হামলে পরেছিল বিশ্বব্যাংকের উপর। উদ্দেশ্য, অবৈধ আয়ে পকেট ভারি করা।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট নতুন কোন ঘটনা নয়। কানাডার টরেন্টো শহরের বেগম পাড়ায় কিছুটা সময় কাটালে অপরাধের মাত্রা কিছুটা উপলদ্বি করা সম্ভব হয়। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল শতকরা ১ ভাগেরও নীচে সুদে। উপরি আদায় নিয়ে মহামারী দেখা দিলে বিশ্বব্যাংক সরে আসে বিনিয়োগ হতে। কেবল তখন দৃষ্টপটে হাজির হন নিক্সন চৌধুরিদের বস শেখ হাসিনা।

মধ্যপ্রাচ্য হতে লাখ লাখ বাংলাদেশির রেমিটেন্স পাঠায়। করোনা সময়েও রেমিটেন্স আসা বন্ধ হয়নি। বরং আরও বেড়েছে। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় দেশের ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ এখন অনেক বেশী। পকেটে টাকা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। ব্যয় অপব্যায় কোনটাই অসম্ভব নয়। পদ্মা সেতুর ষ্ট্রাকচারাল প্রোগ্রেস অনেকটা লাইভ ক্রিকেট দেখানোর মত দেখানো হয়েছে দেশবাসীকে। দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রায় সবাই সেতুর উন্নতিকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উন্নতি হিসাবে আখ্যায়িত করে স্তূতি বন্দনা করছেন। ডান-বাম চিন্তা না করে ব্যক্তি হাসিনাকে পদ্মাসেতুর জননী বানানো অনেকটা পাকিস্তানের জেলে বসে উনার পিতা শেখ মুজিবকে বাংলাদেশ স্বাধীন করার একমাত্র সৈনিক হিসাবে আখ্যায়িত করার মতই অলীক বাস্তবতা।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত তহবিল হতে পদ্মা সেতু করলে নিশ্চয় বাহবা পাওয়ার দাবি রাখতেন। টাকা আসলো প্রবাসে অমানুষিক পরিশ্রম করা লাখ লাখ শ্রমিক আর মধ্যপ্রাচ্যে শেখদের কাছে বিলিয়ে দেয়া মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে। সে টাকায় সেতু বানালো চীনারা। আর সেতু তৈরীর সব কৃতিত্ব দিচ্ছি ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে। সেতু সহ দেশের রাস্তা-ঘাট উন্নতি করা সরকারের দায়িত্ব। এজন্যেই জনগণ সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। যদিও বাংলাদেশের সরকার জনগনের সরকার নয় তবুও লম্বা একটা সেতু হয়েছে। এটা অবৈধ হলেও সরকারের রুটিন কাজের অংশ। দেশবাসীকে দেয়া কোন ব্যক্তির দয়া নয়

ভালো লাগলে শেয়ার করুন