খালেদা জিয়ার মুক্তি...

Submitted by WatchDog on Sunday, July 19, 2020

আদলত শাস্তি দিলে মুক্তিও দেয় আদালত, এমনটাই জানতাম এতদিন। মুফতি ইব্রাহিম টাইপের ওয়াজের মাধ্যমে জাতিকে এতদিন তাই নসিহত করে আসছিল আওয়ামী প্রোপাগান্ডা মেশিন। হঠাৎ করে ভোজবাজির মত সব কেমন উলটে গেল। আইন আদালত আর শাস্তির দোহাই খড়কুটার মত ভেসে গেল শেখ হাসিনার এক ঘোষণায়। কোন ঘোমটা না দিয়েই তিনি জানান দিলেন দেশে আইন আদালত, বিচার, শাস্তি, সবকিছুর নিয়ন্ত্রক তিনি।

খালেদা জিয়ার বিচার ও শাস্তি নিয়ে বেশিকিছু বলার নেই। শেষ টার্মে বিএনপি সরকার নিয়ে আমার কলম অনেক সময় শালীনতাও অতিক্রম করেছিল। তাই অতীত কর্ম রাতারাতি ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করবোনা। বিএনপি ও জিয়া পরিবার কোন বিচারেই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। কিন্তু এই দল কোন টার্মেই আওয়ামী লীগের মত বেহায়া পদ্বতিতে বিদেশীদের দয়ায় ক্ষমতায় আসেনি। পার্থক্যটা এখানেই। বিএনপি সরকারকে যদি খাম্বা চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, আওয়ামী লীগকে করা হবে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাংক চুরির। এখানের পার্থকটা এক অর্থে আকাশ সমান। আজ স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে অভিযোগে খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয় হয়েছিল একই অভিযোগে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের প্রতিটা নেতাকে আজীবন জেলে আটকে রাখা যায়। হানিফ আর নাসিমদের কথা না হয় বাদই দিলাম।

খালেদা জিয়ার মুক্তির টাইমিংটা খুব ইন্টারেষ্টিং। বাংলাদেশ সহ গোটা বিশ্ব কাঁপছে মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে। খালেদা জিয়ার দল বিএনপি এখন সরকারের ঘরজামাই। খোদ খালেদা জিয়া বয়সের কাছে অলমোষ্ট পরাজিত। সন্দেহ নেই বন্দী খালেদা জিয়া ছিলেন সরকারের জন্যে একটা হেডেক। দেশব্যাপী চুরির মহামারীরে খালেদা জিয়ার ২ কোটি টাকা চুরির কাহিনী অনেকটা বাল্যশিক্ষার মন শোনাচ্ছিল। তাই সরকার হয়ত সুযোগ খুঁজছিল মুক্তি দেয়ার। মৃত্যু ভয়ে ভীত গোটা জাতি। রাজনীতি এখন সেলফ-কোরেন্টাইনে। নিশ্চিতভাবে বলা যায় এর চাইতে ভাল সময় সরকারের জন্যে আসবেনা। সরকার ভাল করেই জানে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে আনন্দ মিছিল করার মত একটা আদমকেও এখন মাঠে পাওয়া যাবেনা। আর পাওয়া গেলেও করোনা প্রতিরোধ আইনে তাদের ঠেকানো কোন অবৈধ কাজ হবেনা। এক ঢিলে অনেক পাখি মেরেছে শেখ পরিবার। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যপারে আওয়ামী বিদেশী প্রভুদের কতটা হাত ছিল তা জানতে আমাদের বোধহয় কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে।

শেখ হাসিনা নিজ ও পরিবারের স্বার্থের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করেন না, এটা এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। নিজের লাভ ছাড়া মানবিক অথবা স্বাস্থ্যগত কারণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছেন, এটা পাগলেও বিশ্বাস করবেনা। আমার সোর্স বলছে এই মুক্তি আরও অনেক আগেই আসতে পারতো যদিনা খালেদা পুত্র তারেক জিয়া শেখ হাসিনার লন্ডন ভ্রমনের সময় ঝামেলা না পাকাতো। ওখানে নাকি প্রকাশ্যেই তারেক জিয়াকে তার মার মুক্তির ব্যপারে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দেশের সার্বিক রাজনীতিতে এ মহূর্তে একটা ইনসিগনিফিকেন্ট ইভেন্ট। শেখ হাসিনাই রাজনীতির ড্রাইভিং সীটে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যই বলে দিচ্ছে তিনি মরণযাত্রী। হয়ত গোপন তথ্য পেয়েই সরকার উপযুক্ত সময়ে মুক্তি দেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে। জ্যান্ত ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী খালেদা জিয়া আজীবন শেখ হাসিনার জন্যে মূর্তিমান আতংক হয়ে থাকবেন সন্দেহ নেই।

আশাকরি বেগম জিয়া জীবনের শেষদিন গুলি মওদুদদের মত অস্বাস্থ্যকর আবর্জনা হতে দূরে থেকেই কাটিয়ে দেবেন। আমি বলবো মুক্তির শ্বাস নিন বেগম জিয়া। এ দেশের মানুষ আপনাকে ভুলে যায়নি। কোনদিন ভুলবেওনা। ঘুম খুন হত্যা জেল জরিমানা করে অনেক কিছু আটকে দেয়া যায়, যায়না কেবল মানুষের ভালবাসা। একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের জেল হয়ত আপনার অনেক কিছুই কেড়ে নিয়েছে, কিন্তু বিনিময়ে আপনিও পেয়েছেন অনেক কিছু। সেটা জনগণের ভালবাসা।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন