হিন্দুধর্ম ও বাবরী মসজিদ!

Submitted by WatchDog on Monday, November 11, 2019

অনেক পণ্ডিতের মতে হিন্দু ধর্মের ইতিহাস জানতে চাইলে আমাদের ৪০০০ বছর পিছিয়ে সেতে হবে। বলাহয় এই ধর্ম পৃথিবীর অন্যতম পুরনো ধর্ম যার বয়সও ৪০০০ বছর। আজকের পৃথিবীতে খ্রীষ্টায়ানিটি ও ইসলাম ধর্মের পর হিন্দু-ইজম হচ্ছে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী কম করে হলেও ৯০ কোটি। ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, এই ধর্মের শতকরা ৯০ জনের বাসই ভারতে। যেহেতু হিন্দু ধর্মের সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠাতা নেই, তাই এর গোঁড়া ও ইতিহাস অনুসরণ করে বিস্তারিত বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। যদিও অধিকাংশ পণ্ডিতদের বিশ্বাস হিন্দুধর্মের গোঁড়া পত্তন হয় ২৩০০ ও ২৫০০ বিসি'র মাঝামাঝি সময়ে আজকের পাকিস্তানের সিন্ধু উপত্যকায়।

সুপ্রিম গড ব্রহ্মা ছাড়াও এই ধর্মের অনুসারীদের অনেকে বিষ্ণু, শিবা, কৃষ্ণা, লক্ষ্মী, সরস্বতীর পূজা করে থাকে। সংগত কারণেই হিন্দুধর্মকে বলা হয় 'এ ফ্যামিলি অব রিলিজিয়ন'।

ধর্মের অপর নামই হচ্ছে বিশ্বাস। এবং তা হতে হবে অন্ধ ও অল আউট। এখানে প্রশ্ন করার কোন অবকাশ নেই। মানুষের জ্ঞান পরিধির সীমাবদ্ধতা যেখানে শেষ, সেখানেই শুরু হয় ধর্মের। মানব জাতির উত্থানের অনেক তত্ত্ব আছে, যার স্বপক্ষে নেই কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ। তবু আমরা তা বিশ্বাস করি আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে। কারণ জীবন-মৃত্যুর মাঝখানের যে জীবন থাকে তাকে আঁকড়ে ধরতে একটা স্বরলিপির প্রয়োজন বাধ্যতামূলক। এ স্বরলিপিই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী হতে আলাদা করতে সাহায্য করে। সভ্যতা বিবর্তনের ধাপে ধাপে এ স্বরলিপি বিবর্তিত হয়েছে। এই বিবর্তনের অপর নামই হচ্ছে ধর্ম। নিরাকার সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের চাইতেও জরুরি ছিল আমাদের সভ্য হয়ে উঠা। সৃষ্টির আদিযুগ হতে তাই ঈশ্বর ভয় আমাদের পাথেয় হিসাবে কাজ করেছে। এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে সে প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে?

বোধহয় না। বিবর্তনের ধারায় যোগ হয়েছে নতুন নতুন সমস্যা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন এসব সমস্যাকে করছে আরও জটিল, আরও কমপ্লেক্স। রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা তার অন্যতম। বাকি ধর্মের মত হিন্দু ধর্মও এর বাইরে ছিলনা।

হিন্দুধর্মের তীর্থভূমি ভারতে বিজেপির মত কট্টর সাম্প্রদায়িক গুষ্টির উত্থানের পেছনেও ছিল ধর্ম বিশ্বাসকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল। এবং এ কাজে যারা জড়ি তারা দারুণভাবে সফল হয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস ছিল এ মাইলস্টোনের প্রথম ভিত্তি। গোটা ভারতজুড়ে আজকের যে ধর্মীয় উন্মাদনা তার ক্যাটালিস্ট হিসাবে কাজ করেছিল কথিত বাবরী মসজিদের নীচে মন্দিরের অস্তিত্ব ও সেখানে রামের জন্ম নিয়ে অলৌকিক ও অবাস্তব কাহিনী।

বাল্মীকি রচিত রামায়ণ হচ্ছে একটি উপকথা, অথবা উপন্যাস। সংগত কারণেই এই উপকথার সবগুলো চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবে রাম বলতে কেউ ছিল তা আমরা জানিনা। এর সবটাই হচ্ছে বিশ্বাস। আজকের রাম অথবা অযোধ্যায় তার জন্মস্থানের উপর মন্দির নির্মাণ সবটাতে আছে রাজনৈতিক ভণ্ডামি। আছে প্রতারণা, যার অন্তরালে লুকিয়ে আছে ক্ষমতা দখলের দানবীয় লিপ্সা।

উপসংহার হচ্ছে, যুগে যুগে ধর্ম প্রবর্তনের মাধ্যমে মহামানবেরা মানব জাতির উপকারের যে চেষ্টা করেছেন, সে ধর্ম এখন আমাদের গলারকাঁটা । সভ্যতা বিবর্তনে অন্যতম বাধা। এ হতে হিন্দুধর্ম যেমন বাদ যায়না, তেমনি বাদ যায়না আজকের ক্রিষ্টিয়ানিটি ও বিলিয়ন মানুষের ইসলাম।

অযোধ্যার নির্দিষ্ট স্থানে মন্দির হবে না মসজিদ হবে, এটা কোন সমস্যা নয়, সমস্যা আমাদের বিশ্বাসে। ধর্ম নিশ্চয় ধর্মের জায়গায়ই অবস্থান করছে। কেবল আমরা নেই আমাদের কক্ষপথে। আমাদের কক্ষপথে এখন জয় শ্রী রাম দাবীদার একদল দস্যু ও তস্করদের দৌরাত্ব!

ভালো লাগলে শেয়ার করুন