লা কোচা নস্ত্রা ও বাংলাদেশের মাফিয়া কাহিনী...

Submitted by WatchDog on Saturday, September 21, 2019

ডন কার্লিওনির নামের সাথে যাদের পরিচয় নেই তাদের অনুরোধ করবো মারিও পুজোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হলিউডের ছবি 'গডফাদার' মুভিটা দেখে নিতে। আর যাদের ইংরেজিতে ভাল দখল আছে এবং বই পড়ার অভ্যাস এখনো ইতিহাস হয়ে যায়নি, চাইলে তারা খোদ উপন্যাসটাই পড়ে নিতে পারেন। ইন্টারনেটে তা সহজলভ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইতালিয়ান মাফিওজিদের উত্থান, বিবর্তন ও এর পতনের উপর সম্যক ধারণা পেতে এই উপন্যাস আপনাকে ব্যাপক সহায়তা করবে।

আপনি বলবেন ইতালিয়ান মাফিয়াদের জীবন ঘেঁটে সময় নষ্ট করার মত যথেষ্ট সময় কোথায়! আর তা করে লাভটাই-বা কি! আমি বলবো দেশপ্রেম নিয়ে আপনার যে গর্ব, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার যে উচ্ছ্বাস তা ঝালাই করে নিতে এর কোন সহজ বিকল্প নেই। আলোর অন্য-পীঠেই অন্ধকারের বাস। আপনি রাজনীতির আলোতে বাস করে নিজকে ধন্য মনে করেছেন। পূজা বন্দনায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন আপনার পছন্দের মানুষ ও দলকে। চাঁদের মত তাদেরও অন্ধকার দিক আছে। সে অন্ধকার আপনার খুব কাছের। হাত বাড়ালেই ধরা যায়। অথচ আপনি বুঝতেই পারছেন না এর নৈকট্য। হয়ত কিছুটা হলেও আলো ফুটছে আপনার চোখে ইদানীংকালের ক্যসিনো রাজ্য উদঘাটনে। চলুন মিলিয়ে নেই পৃথিবীর দুই মেরুর দুই মাফিয়া চক্রের সমীকরণ। দেশকে ভালবাসলে এ সমীকরণ মেলানো আপনার জন্যে জরুরি।

আসুন ফিরে যাই উনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। স্থান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহর। অভিবাসী আগমনের হিড়িক পরে গেছে শহরে। ওরা আসছে জাহাজে করে। আসছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হতে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ইতালিয়ানরা। বিশেষ করে সিসিলি দ্ধীপের ইতালিয়ান। এসব অভিবাসীদের পূর্ব ইতিহাস যাচাই করার মত রিসোর্স ছিলনা মার্কিনীদের হাতে। তাই অভিবাসীদের কাফেলায় লুকিয়ে থাকা ক্রিমিনালদের আলাদা করা যায়নি।

সুযোগের সদ্বব্যবহার করে অপরাধের অভয়রাণ্য সিসিলি হতে আসা অপরাধীরা ঠাঁই নেয় নিউ ইয়র্ক শহরে। এদের সংখ্যা বাড়তে থাকে জ্যামিতিক হারে। শহরের লোয়ার ইস্ট সাইড, হারলেম এবং ব্রুকলিনের মত জায়গাগুলো চলে যায় তাদের দখলে। সময়ের প্রবাহে প্রবাসেও রিভাইভ করে ফেলে আসা সিসিলিয়ান জীবন। গড়ে তুলে অর্গেনাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেট। তাদেরই অন্যতম ছিল লা কোচা নস্ত্রা। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের সাথে যোগ দেয় ইতিমধ্যে গড়ে উঠা ক্যমোরা অব নেয়াপলস ও ড্রাঙ্গেতা অব কালাব্রিয়া, মালা দ্যাল ব্রেন্তার মত সিন্ডিকেট গুলো।

লা কোচা নস্ত্রা নেটওয়ার্ক একে একে গ্রাস করে নেয় নিউ ইয়র্ক শহরের আইন-রক্ষাকারী পুলিশ, বিচার ব্যবস্থার বিচারক সহ সমাজের সর্বস্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। গড়ে তুলে ড্রাগ ও জুয়ার সাম্রাজ্য। পেশী ও অর্থ বলে ডমিনেট করতে শুরু করে নিউ ইয়র্ক শহরের জনপ্রতিনিধিদের। শহর পরিণত হয় খুনের ভাগারে। উত্থান হয় সালভাতরি রিনো, ভিতো রেজুতো, কার্লো গামবিনো ও পল কাস্তেলিয়ানোর মত সন্ত্রাসী বস ও পরিবারের।

এবার চলুন আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে ফিরে যাই বাংলাদেশ নামের একটা দেশে। একটা সময় ছিল যখন নিউ ইয়র্ক শহরের পাঁচ মাফিয়া পরিবারের বসদের নাম উচ্চারণ করতে বুকের পাটার প্রয়োজন হতো। আজকের বাংলাদেশের অবস্থা কি তাই নয়? পাঁচ পরিবার নয়, বাংলাদেশের মাফিওজির নিয়ন্ত্রণ এখন দুই পরিবারের হাতে। আজকের শেখ ও জিয়া পরিবার রেজুতো ও গাম্বিনো পরিবারেরই প্রতিচ্ছবি। দুই পরিবারের আর্ন্তপারিবারিক দন্দ্বকে বলা হচ্ছে রাজনীতি। লা কোচা নস্ত্রা সিন্ডিকেটের মত এই দুই পরিবারের সিন্ডিকেটের জালে আটকে গেছে দেশের আইনের শাসন, ভৃত্যের মত সেবা করতে বাধ্য হচ্ছে দেশের বিচারকরা। অলি গলিতে জন্ম নিচ্ছে অর্গেনাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেট। আজকের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ওলামালীগ মনে করিয়ে দেয় ক্যামোরো ও ড্রাঙ্গেতা সিন্ডিকেটগুলোরই নতুন ভার্সন।

দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও যোগ দিয়েছে দুই পরিবারের ক্রাইম সিন্ডিকেটে। পঙ্গু করে দিচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। শিক্ষকরা, মাদ্রাসার হুজুররা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই চালাচ্ছে ধর্ষণের মত অপকর্ম। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা পরিণত হয়েছে ইনকাম জেনারেটিং সিন্ডিকেটে।

আপনি দলের ভক্ত। নেত্রী পূজারী। একবারও কি ভেবে দেখেছেন দল ও নেত্রীর ক্ষমতার ভিত্তি কোথায়? অর্গানাইজড ক্রাইম সিন্ডিকেট নয় কি? এসব সিন্ডিকেটের প্রধানরা নিরাপদে বিদেশে জীবন গড়ে তুলছে। সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। নিশ্চিত করছে পরিবর্তী প্রজন্মের নিরাপদ জীবন। আর আমি আপনি ছাগলের ৩নং বাচ্চা হয়ে তালি দিচ্ছি তাদের সাফল্যে। হয়ত তার পেছনে অবৈধ সম্পদের উচ্ছিষ্ট আহরণের ইচ্ছাও কাজ করছে। কিন্তু দিন শেষে আপনিও একজন পিতা, মাতা অথবা ভাই-বোন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন কি রেখে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে? একবার হলেও ভেবে দেখুন আজ হতে ৫০ বছর কি অবস্থা হবে আপনার জন্মভূমির। আপনি আমি হয়ত চলে যাবো, কিন্তু এখানে বেড়ে উঠবে আমাদের সন্তানেরা।

সময় এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়নি। আসুন নেত্রীর আগে দল এবং দলের আগে দেশকে ভালবাসতে শিখি। ফ্যাসিবাদকে না বলার সাহষ সঞ্চয় করতে শুরুকরি। এ দেশ আমার, আপনার; পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কারও বাবার অথবা স্বামীর সম্পদ নয়।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন