চুড়িহাট্টার ম্যাসাকার ও নিমতলির ডিজিটাল বিয়ে...

Submitted by WatchDog on Sunday, February 24, 2019

পুরানো ঢাকার চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনার সাথে কি দেশীয় রাজনীতির কোন যোগসূত্র আছে? অনেকে বলবেন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, শোকের সময় এটা, এখানে প্রথাগত রাজনীতি টেনে আনা হবে অমানবিক। ক্ষমতার রাজনীতির সাথে যাদের হরিহর আত্মা তারা এক ধাপ এগিয়ে আমার এ প্রশ্ন বর্তমান সরকারকে হেয় করার প্রয়াস হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করবেন। সন্দেহ নেই রাজনীতির অনেক উপরে শোকের অবস্থান। তবে বাংলাদেশের শোকের মাঠেও যে রাজনীতির প্রভাব থাকে তার প্রমাণ কদিন আগে কবি আল মাহমুদের মৃত্যু। একজন মৃত ব্যক্তির লাশ কোথায় দাফন হবে সেটাও নির্ভর করে জীবদ্দশায় তার রাজনৈতিক পরিচয়ের উপর। শতাধিক মানুষের মৃত্যু নিয়ে আমার মত ইনসিগনিফিক্যান্ট ম্যাংগোর মুখ খোলার আগেই কিন্তু মুখ খুলে ফেলেছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী তদন্ত দূরে থাক, এর উপর কোন কমিটি গঠনের আগেই রায় দিয়ে ফেলেছেন, দুর্ঘটনার সাথে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের কোন সম্পর্ক ছিলনা। সরকারের তথ্যমন্ত্রী একধাপ এগিয়ে দাবি জানিয়েছেন এ দুর্ঘটনায় তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির হাত রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে। জনগণের ‘ম্যাণ্ডেট’ পাওয়া মন্ত্রীরা যদি মৃত্যুর সাথে রাজনীতির প্যারালাল টানতে পারেন, আমার তাহলে বাধা কোথায়?

সরকারের চেটের-বাল মন্ত্রীরা জনগণের জন্ম-মৃত্যু, হাগু-মুতু নিয়ে কি বলল তা নিয়ে আমার বিশেষ কোন মাথাব্যথা নেই। যা বলার তা বলতেই থাকবো; আর তা হচ্ছে ঘটনায়-দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া প্রতিটা বাংলাদেশির ঘাতক হচ্ছে রাজনীতি। ২০১০ সালে প্রায় একই রকম দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল শতাধিক ব্যক্তি। অনেক কথা হয়েছিল। দাবি ছিল শত শত। তদন্ত কমিটির সুপারিশ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মা-বাবার লাশ কবরে রেখে এসে তিন এতিম কন্যা সন্তানকে বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে রাজনীতি করেছিলেন। ফাইনাল রেজাল্ট? - নাথিং! শূন্য!!! যেই লাউ সেই কদু টাইপের জীবন এগিয়ে গেছে পুরানো ঢাকায়। ২০১০ হতে ২০১৯, প্রায় নয় বছর। এই লম্বা সময়ে এলাকার জনবসতি আরও ঘন হয়েছে, সম্প্রসারিত হয়েছে রাসায়নিক স্টক-পাইল। যাদের মা সেজে বিয়ে দিয়েছিলেন সেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর গণভবনের দুয়ার হতে তাদের গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় করা হয়েছে। সবকিছুই ছিল রাজনৈতিক সমীকরণের ফাইনাল রেজাল্ট। এলাকার স্ব-নির্বাচিত মেয়র অথবা স্বপ্নে পাওয়া মন্ত্রিত্বের শিল্পমন্ত্রীরা কোন ব্যবস্থাই হাতে নেননি কারণ এলাকা হতে যাদের ব্যবসা সরাবেন তারা যে তাদেরই কর্মী, তাদেরই আর্থিক অনুদান অথবা পেশী শক্তির উপর নির্ভর করে রাজনীতির পশরা সাজান। সোনার গয়না আর লাল শাড়ির ঝলমলে আলোর বিয়েও ছিল মাদার অব হিউম্যানাটি সাজার নতুন ফিকির। সবই ছিল দেশীয় রুগ্ন-রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ভোট চুরির রাজনীতির চাইতেও নিকৃষ্ট।

হোয়াচো, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর একটি ছোট শহর। প্রশান্ত মহাসাগরের কোল ঘেষে এই শহরে প্রথম পা রাখার পর আমাকে যা অবাক করেছিল তা ছিল ফায়ারহাইড্রেন্ট। শহরের তিন দিকেই মহাসাগর। থৈ থৈ পানি। অথচ শহর পরিকল্পনায় এই হাইড্রেন্ট ছিল বাধ্যতামূলক। প্রতি রাস্তায় জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় আছে পানির ব্যবস্থা। হাইড্রেন্টের মুখ খুলে ওখানে হোসপাইপ লাগিয়ে দিলেই কাজ করবে ফায়ার বিগ্রেডের কাজ। এমনকি গভীর রাতেও ঐ হাইড্রেন্টের ১০-১৫ গজের ভেতর গাড়ি পার্ক করা দণ্ডনীয় অপরাধ। জনগণ হাসিমুখে মেনে নিয়েছে এ ব্যবস্থা ও প্রাসঙ্গিক আইন। এ নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই। যদিও হোয়াচো শহর আগামী একশ বছরেও পুরানো ঢাকার মত আগুন আগ্রাসনে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আমাদের পাচাটা একদল চামচা দেশের উন্নতি নিয়ে যে গোলাপি ছবি আঁকছেন তাতে রয়েছে আগামী ক’বছরে সিংগাপুর বনে যাওয়া, আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাওয়া, হাতির ঝিলে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার দেখা। অথচ সভ্যতা বিকাশের এই ম্যাণ্ডেটরি উপাদান ফায়ার হাইড্রেন্ট এখনো বিদেশি কাহিনী। কোন গ্রাউন্ডে এস আলম গ্রুপকে ৩,১৭০ কোটি টাকা কর রেয়াত দেয়া হয়েছে তার কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। অটোপসি করলে দেখা যাবে সেখানেও লুকিয়ে আছে রাজনীতি। এই টাকার সামান্য কিছু অংশ খরচ করলে ঢাকাকে আনা যেত ফায়ারহাইড্রেন্ট নেটওয়ার্কের আওতায়। মন্ত্রী আর মেয়রদের মিথ্যা আশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বিয়ের আয়োজন যে কাজ দেয়না তার নগ্নতম উদাহরণ চুড়িহাট্টার নতুন ম্যাসাকার।

উপসংহার হচ্ছে, জবাবদিহিতা-বিহীন ক্ষমতার রাজনীতি যেভাবে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনকে গ্রাস করে নিয়েছে তা চলতে থাকলে এ ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের নামে যে দানব এই সরকার বসাতে চাচ্ছে তা বিগড়ে গেলে কেবল নির্দিষ্ট কোন এলাকা নয়, গোটা বাংলাদেশকে বরণ করতে হবে চুড়িহাট্টার ভাগ্য।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন