জামাল খাসোগী ও সৌদি রাজতন্ত্র

Submitted by WatchDog on Friday, October 12, 2018

ফিয়্যান্সেকে বিয়ে করার কাগজপত্র যোগার করতে ওয়াশিংটন হতে তুরস্কে কেন আসতে হয়েছে তার কোন ব্যখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে বাজারে গুজব রয়েছে তুরস্কস্থ কনস্যুলেট প্রি-প্লান করে খাসোগিকে ঐ দেশে আসতে বাধ্য করেছিল। জামাল খাসোগী নামটা হয়ত বাংলাদেশের পাঠকদের জন্যে পরিচিত কোন নাম নয়। হওয়ার কথাও নয়। কারণ প্রতিবাদী কন্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার কাজে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একই পথের পথিক। এক দিকে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সালমান, অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বঘোষিত রাজকন্যা শেখ হাসিনা। সৌদিদের বিষয়টা আরও ঘোরতর। ক্ষমতা নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের সংঘাত নতুন কিছু নয়। কথিত খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগেও খলিফারা একে অন্যকে যেমন খুন করতেন তেমনি পরিবারের সন্তান বাপকে খুন করতেও দ্বিধা করতেন না। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমান সউদ পরিবারেও চলছে খুনাখুনির ঐতিহ্য। যদিও টাইটেল ক্রাউন প্রিন্স, বাস্তবে তিনিই বাদশাহ। ক্ষমতার মসনদে অফিসিয়ালি বসার আগেই নিশ্চিত করতে চাইছেন তা আমৃত্যু ধরে রাখার। একে একে পরিবারের অনেককে কয়েদ করেছেন। ব্ল্যাক-মেইল করে কয়েক বিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায় করে নিয়েছেন। যাদের দরকার তাদের গুম করে পৃথিবী হতে সরিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসার আগে জামাল খাসোগি ছিলেন আলা আরব নিউজ চ্যানেলের জেনারেল ম্যানেজার ও এডিটর-ইন-চীফ। কাজ করেছেন দৈনিক আল ওয়াতান পত্রিকায়। দেশটার প্রগেসিভ প্লাটফর্ম হতে প্রায়ই তিনি ক্রাউন প্রিন্সের সমালোচনা করতেন। বাংলাদেশের শাসক-গুষ্টির মত সৌদি রাজা-বাদশাহদেরও সমালোচনা হজম হয়না। সমালোচনাকারীদের কেবল রাজতন্ত্রের শত্রুই ধরা হয়না, ইসলামের দুষমন হিসাবেও চিহ্নিত করা হয়। অনেকদিন ধরেই ওঁত পেতেছিল সালমানের গুপ্ত বাহিনী। খাসোগীকে লোভ দেখিয়ে ওয়াশিংটন হতে রিয়াদে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজী হননি তিনি। বান্ধবীকে বিয়ে করার কাগজপত্র যোগার করতে ওয়াশিংটনস্থ সৌদি দূতাবাসে যেতে সাহষ করেননি। এটা এখনও ধাঁধাঁ তুরস্কস্থ সৌদি কনস্যুলেট কিভাবে কনভিন্স করেছিলেন খাসোগীকে।

কনস্যুলেটে পা রাখার আগে দুটো প্রাইভেট বিমানে চড়ে পনের জন সৌদি ঘাতক উড়ে আসে তুরস্কে। ক্যামেরায় দেখা যায় ওরা তিনটা কালো গাড়িতে চড়ে কনস্যুলেটে প্রবেশ করছে। সবগুলো গাড়ির রঙ কালো এবং কাঁচ কালো রঙের আস্তরণে ঢাকা। কিছুক্ষণ পর ওখানে প্রবেশ করেন জামাল খাসোগী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওখান হতে খাসোগীকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়নি। অপেক্ষমাণ আত্নীয়-স্বজনদের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হয়। সার্ভেলেন্স ক্যামেরায় দেখা যায় খাসোগী কনস্যুলেটে প্রবেশের একঘণ্টা পর ওখান হতে ১৫ ঘাতক বেরিয়ে এসে প্রাইভেট প্লেনে চড়ে তুরস্ক ছেড় যান। ওদের একজনের হাতে ছিল বড় ধরণের একটা সুটকেস। তদন্তে বেরিয়ে আসে কনস্যুলেটের ভেতর খাসোগীকে হত্যার পর হেক্সো ব্লেড দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে সুটকেসে ভরা হয়। এবং সে সুটকেস প্লেনে উঠিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তুরস্ক হতে। অনেকে সন্দেহ করছেন এমন নিখুঁত হত্যাকাণ্ডে মহম্মদ বিন সালমানকে সহযোগিতা করেছে ইসরায়েলের মোসাদ।

খুন হওয়ার আগে জনাব খাসোগী ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লেখতেন। আর তাই এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পত্রিকাটি ব্যাপক হৈচৈ শুরু করেছে। ব্যপার মার্কিন সিনেট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এটা কোন গোপন খবর নয় ভণ্ড সৌদি রাজা-বাদশাহদের ক্ষমতার মূল স্তম্ভ মার্কিন সরকার। যুবরাজ সালমান নতুন বন্ধু হিসাবে কিছুদিন আগে রাজপ্রাসাদে ট্রাম্পের জামাই জ্যারড কুশনারকে দিয়েছিলেন রাজকীয় সন্মান। রাজনীতির শিক্ষানবিশ জ্যারড তার পতনোন্মুখ পারিবারিক ব্যবসার জন্যে করে গেছেন হরেক রকম রহস্যজনক চুক্তি। সৌদি রাজপরিবার ১১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র কিনছে যুক্তরাষ্ট্র হতে। যে অস্ত্র দিয়ে কিছুদিন আগে সৌদিরা বাসে বোমা মেরে ইয়েমেনের ৪০ জন শিশুকে হত্যা করেছিল। বলাই বাহুল্য ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ার হামলায় জড়িত ১৯ জনের ১৫ জনই ছিল সৌদি।

সৌদি আরব হতে একে একে ফিরছে বাংলাদেশি মহিলা গৃহকর্মীরা। এক একজনের আহজারীতে কেঁপে উঠছে বিমানবন্দরের লাউঞ্জ। বাপ, ছেলে, ভাই মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এসব অসহায় মহিলারা। ওদের নিয়মিত খেতে দেয়া হয়নি। হাবসি ক্রীতদাসদের মত পিটিয়ে রক্তাক্ত করে পৈশাচিক আনন্দ নিত পরিবারের সবাই। এই সেই সৌদি আরব আমাদের কাছে যাদের পরিচয় আল্লাহর ঘর রক্ষক হিসাবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন