Body Of Evidence... Money & Sex, BD Style!

Submitted by WatchDog on Friday, August 19, 2016

Bd Style

গল্প আমাকে দিয়ে হয়না। সে প্রতিভা আমার নেই। তবে যা নিয়ে লিখতে যাচ্ছি তাতে এমন কিছু আছে, যা গল্পের মতই। কাহিনীর শুরু বেশ কবছর আগে। বসন্তের শুরুতে সে বছর দুমাসের জন্য দেশে গেছি। জীবন হতে সিডনি পর্ব চুকিয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানোর প্রস্তুতি পাকা করার জন্যই এ যাত্রা। প্রতিবারের মত এবারও বাড়ির কাউকে জানাইনি আমি আসছি। মা'কে সারপ্রাইজ দেয়া আমার জন্য নতুন কিছু নয়। মা'র চোখের পানি আর হঠাৎ দেখা পাওয়া সুখের বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের কাছে প্রতিবারই হার মানে এয়ারপোর্টের গতানুগতিক অভ্যর্থনা। তাই এবারও এর ব্যতিক্রম হলোনা। বন্ধু রোমেলই এয়ারপোর্টে এসে আমাকে নিয়ে গেল। প্রতিবারই তাই হয়। এয়ারপোর্টে নেমে বন্ধুকে ফোন করলে সে নিজে আসে। গুলশান হতে সে দূরত্ব তেমন কিছু নয়, তাই আগ বাড়িয়ে অপেক্ষা করার ঝামেলা পোহাতে দেই না। আমাদের বন্ধুত্ব অনেক দিনের। শেকড় টানলে তা চলে যাবে আশির দশকের লন্ডনে। ওখানেই পরিচয়।

বছরের এ সময়টায় প্রকৃতিতে পরিবর্তন আসলেও আলো বাতাসে পরিবর্তন আসেনা বাংলাদেশে। বরাবরের মত বাতাস ভারী ও দুষিত। এ নিয়ে আলোচনা জমে উঠার আগে বন্ধু বোমা ফাটাল। গুলশানে যাচ্ছিনা আমারা। আমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। তবে তা স্ত্রী সন্তান নিয়ে গুলশানস্থ বাসায় নয়। গাড়ি থামল নিকেতনের বহুতল একটা ভবনের সামনে। লোপ্পা মার্কা দারোয়ান দরজা খুলে দিতে অবাক হলাম ঢাকার এ দিকটার উন্নতি দেখে। লিফটে চড়ে নয়-তলায় পর্যন্ত স্থায়ী হল আমাদের যাত্রা। চারদিকে সুনসান নীরবতা। কলিং-বেল টিপে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা শেষে ও প্রান্ত হতে দরজা খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। অপূর্ব সুন্দরী এক নারী! ক্রিম কালার জর্জেট শাড়ির সাথে ম্যাচ করানো রূপার গয়না। গল্পের কোন নায়িকার বর্ণনা করলেও বুঝানো যাবেনা তার দ্যুতি। বয়সের তুলনায় আমার বন্ধু অস্বাভাবিক ধনী। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত গুলশানের সম্পত্তি ছাড়াও শিল্পকারখানা, শপিং মল, জাহাজ ব্যবসা, সিমেন্ট ব্যবসা, সহ হরেক রকম ব্যবসার সাথে জড়িত। ড্রইংরুমের প্রতি ইঞ্চিতে প্রাচুর্য ও ঐশ্বর্যের ছড়াছড়ি। কিন্তু এসবে আমার মন ছিলনা। রহস্য হয়ে সামনে দাঁড়ালো লাস্যময়ী এক নারীর উপস্থিতি। কে সে? আমার বন্ধুর সাথেই বা কি সম্পর্ক!

ধীরে ধীরে উন্মোচিত হল সে রহস্য। আসলে রহস্যের কিছু ছিলনা। বন্ধু আমার নতুন একটা বিয়ে করেছে। কোন পশু পাখি পর্যন্ত জানেনা এ তথ্য। খুব গোপনে নিকুঞ্জের এ বাসায় রেখেছে স্ত্রীকে। বড় ধরণের শক পেলেও আমি অবাক হইনি বন্ধুর এহেন কর্মে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক তার জন্য ছিল ডালভাত। কিন্তু সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়াবে এতটা বোকামি করবে তা ভাবতে পারিনি। কোন অযাচিত প্রশ্ন না করেই যেনে নিলাম সম্পর্কের ইতিবৃত্ত। বন্ধুর ভাষায়, ভালবাসা! সেকেন্ডের জন্যও আমি তা বিশ্বাস করিনি। নিজকে নিকিতা হিসাবে পরিচয় দিল সে মহিলা। একদিনের মধ্যেই আপনি হতে তুমি, তুমি হতে তুই...কোথায় কি যেন একটা মিস করছি ভেবে ভেতরে খুবই অশ্বস্তি ফিল করতে শুরু করলাম। কারও ব্যক্তিগত পছন্দ নিয়ে নাক গলানো আমার অভ্যাস নয়। কিন্তু এ যাত্রায় এ অভ্যাস কাজে আসবে বলে মনে হলোনা। প্রায় ফুল-টাইম অতিথি হয়ে একমাস কাটিয়ে দিলাম বন্ধুর রহস্যপুরীতে।

বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দুবছরের মাথায় বন্ধু আবিষ্কার করলো তারই এক বন্ধুর সাথে রোমান্টিক সম্পর্ক রয়েছে নিকিতার। দুজনের বিচ্ছিন্ন জীবনের এক পর্যায়ে আমি দেশে গেলাম। গুলশানের এক রেস্টুরেন্টে তিনজন একত্র হলাম। কথার বয়স মাত্র পাঁচ মিনিট। বন্ধু পায়ের জুতা খুলে শতাধিক গ্রাহকের সামনে বেধড়ক পেটাতে শুরু করলো তার বিবাহ বিচ্ছেদ প্রার্থী দ্বিতীয় স্ত্রীকে। কোন স্বামী তার স্ত্রীকে পাবলিক প্লেসে এভাবে পেটাতে পারে আমার জন্য তা ছিল অকল্পনীয়। ভেবেছিলাম হয়ত পুলিশ আসবে। জেল-হাজত হবে। কিছুই হলোনা। বরং ডিনার শেষ হাসি মুখে বিদায় জানিয়ে চলে গেলে। এবং যাবার সময় খুব গোপনে ফোন নাম্বারটা ধরিয়ে দিল হাতে। ছয় মাসের মাথায় ডিভোর্স হয়ে গেল তাদের। বন্ধু তার সদ্য ক্রয় করা ৫৬ লাখ টাকার ফ্ল্যাট লিখে দিয়ে পরিত্রাণ পেল নিকিতার হাত হতে।

বন্ধু পরিত্রাণ পেলেও আমি কিন্তু পেলামনা। তিন মাসের মাথায় শুরু হল তার আনাগোনা। ফোন করে জেনে নিল আমি অবিবাহিত এবং স্থায়ী কোন গার্লফ্রেণ্ড নেই। ভূমিকা ও ভণিতা না করে সরাসরি প্রস্তাব দিল, টিকেট পাঠালে বছরে ৩/৪ মাস আমার সাথে সংসার করে যাবে। মোটেও অবাক হইনি তার প্রস্তাবে। কিছুটা আন্দাজ আগেই করেছিলাম। এবার নিশ্চিত হলাম, সাধারণ কোন মেয়ে নয় এই নিকিতা।

রহস্য উন্মোচনে ঢাকাস্থ কতিপয় হাই-প্রোফাইল বন্ধুর সাহায্য নিলাম। নিকিতা তার আসল নাম নয়। আসল নাম রাশেদা আক্তার। ডাক নাম পারুল। ঢাকার শ্যাওড়া পাড়ার খুবই দরিদ্র পরিবারের জন্ম ও বেড়ে উঠা। শুরুটা গুলশানের জনৈক ব্যাংক ম্যানেজারকে দিয়ে। একই কায়দায় গোপনে বিয়ে করে মাস ছয়েক রক্ষিতার মত বসবাস করেছিল। ম্যানেজারকে ব্ল্যাক-মেইল করে তার ধনী গ্রাহকদের ফোন নাম্বার যোগাড় করতো। তারপর শুরু করতো নতুন অধ্যায়। আমার বন্ধুকেও এভাবে শিকার করেছে। নতুন বসন্তের নতুন এক সন্ধ্যায় পারুলকে ফোন দিলাম। পারুল নামেই ডাকলাম এবং কিছু ডলার পাঠিয়ে সাহায্য করা যায় কিনা জানতে চাইলাম। শ্যওড়া পাড়ার তাবৎ ময়লা আবর্জনা বেরিয়ে এলো তার মুখ হতে।

এবারের লাস ভেগাস ভ্রমণটা ছিল মূলত ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুইমিং পুলে কাটানোর জন্য। প্রায় ৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাস্তায় বের হওয়া ছিল নিতান্তই বোকামি। রোববার সকাল ৯টার ভেতর সপরিবারে নেমে গেলাম বিশাল পুলটায়। চারদিকে যৌবনের ছড়াছড়ি। প্রায় উলঙ্গ মহিলারা আলো ছড়াচ্ছে পুলের চতুর্দিকে। খুব ভাল করে তাকালে মনে হবে খোদ ঈশ্বর নিজ হাতে তৈরি করেছেন তাদের। কিন্তু সবাইকে সৃষ্টি করার সময় যে ঈশ্বরের হাতে নেই তা বুঝতে সময় লাগলো না। স্থূল ও খর্বাকৃতির একজন শরীরের সাথে খুবই বেমানান সংক্ষিপ্ত পোশাক পড়ে শুয়ে আছে পুলের টেবিলে। চোখে পাহাড় সমান একজোড়া সানগ্লাস। নিকিতা! আমাদের পারুল! খাঁটি বাংলায় সালাম দিতে ককিয়ে উঠলো পুল সুন্দরী। 'মাই নেইম ইজ ক্রিস্টিনা, এন্ড নেভার হার্ড এবাউট সামওয়ান নেইম পারুল, সরি! টাসকি খেয়ে তাকিয়ে রইলাম পাশের জনের দিকে। ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউর জনৈক নামকরা অফিসার। এবং বিশ্বচোর। হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল অনেকদিন আগে দেখা একটা হলিউড মুভির কথা। বডি অব এভিডেন্স! গায়িকা ম্যাডোনা অভিনীত এ মুভিটার সারমর্মও ছিল অনেকটা একইরকম। হাসপাতাল হতে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধদের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের শরীর দিয়ে ভুলিয়ে বিয়ের টেবিল পর্যন্ত নিয়ে যেত। তারপর বিছানায় উত্তেজিত করে পাঠিয়ে দিত না ফেরার দেশে। বাকি সবটাই উত্তরাধিকার সূত্রে ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্য পাওয়ার পর্ব। বলাই বাহুল্য, মুটিয়ে গেছে আমাদের পারুল। যৌবনও চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন