মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় টাইটম্বুর সৈনিকদের ইতিকথা..

Submitted by WatchDog on Monday, October 4, 2010

তরুণ এমপিদের নিয়ে বিব্রত সরকার, বিপাকে আ’লীগ

নবীন ও তরুণ এমপিদের নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। এসব নেতা নিয়ে বিপাকে শাসক দল আওয়ামী লীগও। দলের শীর্ষ নেতাদের বারবার হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এমপিদের মধ্যে রয়েছেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, গোলাম মাওলা রনি, সারাহ বেগম কবরী, আবদুর রহমান বদি, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, সানজিদা খানম, এম আব্দুল লতিফ, শেখ আফিল উদ্দিনসহ আরো অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নিয়োগ তদবিরসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে যেমন ক্ষোভ বাড়ছে, তেমনি ক্ষুব্ধ দলের শুভাকাáক্ষীরাও। গত শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টারা। প্রধানমন্ত্রীও উষ্মা প্রকাশ করে তাদের পরামর্শে সায় দিয়েছেন। অভিযুক্ত এসব এমপি’র ব্যাপারে গোয়েন্দারা খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র মতে, মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১২৮ জন নেতা। তাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনা বিগত নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নবীন ও তরুণদের অগ্রাধিকার দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব কার্যকর ভূমিকা রাখবে­ এটিই ছিল তার প্রত্যাশা। কিন্তু নির্বাচনী লড়াইয়ে জিতে এলেও নতুন সংসদ সদস্যরা মহাজোট নেত্রী শেখ হাসিনার আকাáক্ষা তেমনভাবে পূরণ করতে পারেননি। উল্টো প্রায় দুই ডজন এমপি বিভিন্নমুখী অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। গত ২২ জুলাই সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে সংসদীয় দলের বৈঠকে দলীয় ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে তাদের সতর্ক করেন। এসব সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ইত:পূর্বে বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠলেও এবার এক এমপি’র বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও উথাপিত হয়েছে। উপনির্বাচনে ভোলা-৩ আসন থেকে নির্বাচিত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে তার অস্ত্র ও গাড়ি জব্দ করেছে। এমপি’র বৈধ অস্ত্রে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় চলছে।

গত ৩০ জুন আশুলিয়া বাজারসংলগ্ন সেতুর কাছে কর্তব্য পালনের সময় ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা সাভারের এক ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধর করেন। এ ঘটনায় সার্জেন্ট শরীফুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সানজিদা খানমের বিরুদ্ধে রাজধানীর দয়াগঞ্জের একটি সড়কের উন্নয়ন নিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনা থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে।

ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে সরকারের বিপক্ষে সরাসরি অবস্খান নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিরুদ্ধে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগও রয়েছে। মহাজোট সরকারের আলোচিত এমপিদের অন্যতম পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত গোলাম মাওলা রনি। তার বিরুদ্ধে ভূমি দখল, সরকারি জমিতে অবৈধ স্খাপনা নির্মাণ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুর এবং পুলিশ কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে তার দল আওয়ামী লীগ থেকেই অভিযোগ করা হয়েছে।

আলোচিত সংসদ সদস্যদের অন্যতম সারাহ বেগম কবরী। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এই এমপি’র বিরুদ্ধে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতি ছাড়াও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কথা বলায় ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনিরকে মারধর করা হয়েছে। তিনি সংসদ ভবনের লিফটম্যানকে লাঞ্ছিত করেছেন। নারায়ণগঞ্জের নতুন ত্রাস হিসেবে টেন্ডারবাজির অভিযোগও উঠেছে এই এমপি’র বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে প্রথমবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা এম আব্দুল লতিফ আলোচনায় আসেন চট্টগ্রাম বন্দরে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ের মাধ্যমে। তার হাতে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারাও লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিনি গত ৩১ ডিসেম্বর ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আবদুল আজিজ এবং পরে হাবিলদার শামসুল আলমের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে পুলিশকে মারধর করেন তিনি।

মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই আলোচনায় আসেন কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। এই এমপি’র সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে নির্বাচন কমিশনকে উখিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্খগিত করতে হয়। কক্সবাজারের একটি সড়ক মেরামত ও ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে ১৬ জুন আবদুর রহমান বদি নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিমকে মারধর করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে এক মুক্তিযোদ্ধা এবং এক বন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন করে প্রথম আলোচনায় আসেন ময়মনসিংহ-১০ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। বিষয়টি সরকারকে রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্খিতিতে ফেলে। আলোচিত এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ভূমি দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দার সেলুনও আলোচনায় আসেন সাংবাদিক লাঞ্ছিত করে। গত বছর একাধিক পত্রিকায় তার সম্পর্কে সন্ত্রাসী তৎপরতাসহ নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশিত হলে তিনি সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন। মেহেরপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন স্খানীয় উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করে আলোচিত হন। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান।

গত ২৫ আগস্ট একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে যশোর-১ আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে থাপ্পড় মারেন। এ সময় মুসা নামে সরকারি দলের এক ক্যাডার ওসিকে বেদম প্রহার করেন। যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের বিরুদ্ধেও জলমহাল দখল এবং প্রশাসনের ওপর অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। তার নির্দেশে সম্প্রতি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় একটি মাছের খামার লুট হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য আজিজুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভিজিএফ কার্ড বিতরণে হস্তক্ষেপ, কর্মীদের মারধর, অসহযোগিতা এবং দুর্ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের আবদুল ওদুদ এমপি’র বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে মামলা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমানসহ তিনজন বাদি হয়ে চলতি বছর ৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে এই মামলা করেছেন। নেত্রকোনা-১ আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমেদ রুহীর বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখল করে বাগান তৈরি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন গত ৬ জানুয়ারি রৌমারী ভূমি অফিসের কর্মচারী মোশাররফ হোসেনকে মারধর করেছেন। সর্বশেষ পাবনা সদর আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স জেলা প্রশাসককে প্রকাশ্যে গালমন্দ এবং সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে মহাঅরাজক পরিস্খিতি সৃষ্টি করেছেন। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এ ঘটনা; যা নিয়ে বর্তমানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে।

দলীয় সংসদ সদস্যদের এই বেপরোয়া আচরণ দল এবং সরকারের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহল। এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলেন, গুটিকয়েক এমপি’র জন্য দলের ভাবমর্যাদা মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে। তাদের এখনই কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে দলকে খেসারত দিতে হবে।
সূত্রঃ http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=237097&sec=1

ভালো লাগলে শেয়ার করুন