কলোম্বিয়ার পথে পথে। পর্ব-১

Submitted by WatchDog on Monday, October 14, 2013

Columbia

ইচ্ছে ছিল খুব ভোরে রওয়ানা হয়ে যাব। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গতে দেরি হওয়ায় তা আর সম্ভব হলনা। দ্বিতীয় বারের মত ঘটল এমন ঘটনা। আমার মত কর্পোরেট দাসদের জন্য ব্যাপারটা খুব অস্বাভাবিক। কিছুটা অবাক হলেও এ নিয়ে আক্ষেপ করলাম না। বরং মূল উদ্দেশ্য কাজ করছে জেনে ভাল লাগল। জগৎ সংসার হতে কটা দিন নির্বাসনে কাটাবো বলে এদিকে আসা। সাথে মুঠোফোনটা পর্যন্ত আনিনি। কম দামের হাতঘড়িটাও ফেলে এসেছি মিরাফ্লরেস হতে দুই মাইল উত্তরে প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে। যদিও গিন্নীর ভাষায় এ ছিল অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা এবং বড় ধরণের বাড়াবাড়ি। আমলে নিলাম না এসব অভিযোগ। প্রথম যেদিন আসি সেদিনই কাউন্টারে নিশ্চিত করে নিয়েছিলাম রুমে কোন ইন্টারনেট নয়। রুম বললে বোধহয় কম বলা হবে, বাংলো টাইপের ঝক্‌ঝকে একটা বাড়ি। সাথে আধুনিক সুবিধাদির ভরা যৌবন। ইরোতামা রিসোর্টকে প্রথম দর্শনে মনে হয়েছিল রসকসহীন সুরক্ষিত একটা দূর্গ। বিষণ্নতার ছাপ চারদিকে। প্রবেশ পথের রাস্তা গুলোর অবস্থাও তথৈবচঃ। পাঁকা হলেও গাড়ির চাকায় সাথে পিষ্ট হয়ে আসফাল্টের অনেকটাই চলে গেছে সীমানার বাইরে। সশস্ত্র পাহারার একে একে তিনটা বলয় পেরুলেই দেখা মেলে অফিসের। সেখানকার ঝামেলা চুকিয়ে নির্দিষ্ট দরজায় পা ফেললে চোখের সামনে যে দৃশ্য ফুটে উঠবে তা কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, অকল্পনীয়। ক্যারাবিয়ান সমুদ্রের নীলাভ জলরাশির আছড়ে পরছে ইরোতামার বুকে। বিচের কোল ঘিরে সাড়ি সাড়ি পাম ও নারকেল গাছের মিছিল। কাছাকাছি খড়কুটা ও শনের তৈরী ছোট ছোট শেড গুলোকে মনে হয় আদিম সভ্যতার আধুনিক প্রদর্শনী। শরীরের উপরাংশ উন্মুক্ত করে স্বল্প বসনা রমণীদের অনেকে সূর্যস্নান করছে সেখানে। না বললেই নয়, ক্যারাবিয়ান সাগরের তীর ঘেষে বিচের এ অংশটা প্রাইভেট এবং মালিক খোদ ইরোতামা। খুব তাড়া তাড়ি মিশে গেলাম সমুদ্র পাড়ের মোশন লেস জীবনে। সকাল ৮টা হতে ১০টার ভেতর নাস্তা, দুপর ১২টার দিকে মধ্যাহ্ন ভোজ এবং সন্ধ্যা নামতে রাতের খাবার। বাকি সময়টা কাটে ক্যাটাম্যারনে চড়ে ক্যারাবিয়ান সাগরের অথৈ জলে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বদলে যায় রিসোর্টের জীবন। হরেক রকম গাছ আর পাখির কিচিরমিচিরে ঘেরা বাংলো গুলো হতে বেরিয়ে আসে জোড়ায় জোড়ায় কপোত কপোতী। যোগ দেয় রঙিন নৈশ জীবনে। সাগর পাড়ের বিশাল ফায়ার প্লেসকে ঘিরে জমে উঠে কম্বিয়া, মেরেঙ্গা আর সালসা নাচের অনুপম প্রদর্শনী।

কলোম্বিয়ায় এর আগেও এসেছি। পৃথিবীর এ অংশে প্রকৃতি ও চাহিদার সাথে লড়াই করে মানুষের বেঁচে থাকার যে ছন্দ তা কাছ হতে না দেখলে বুঝা মুস্কিল। লাতিন আমেরিকার কোন দেশের অর্থনীতিই শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে নেই। বাঁচতে হলে এখানে লড়তে হয়। তবে এ লড়াই আমাদের মত ধ্বংসের লড়াই নয়, বরং বাস্তবতা মেনে নিয়ে সৃষ্টির লড়াই। বলিভিয়ার মত বেচে থাকা এতটা জটিল না হলেও কলোম্বিয়ার জীবনও মসৃন নয়। একদিকে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা, পাশাপাশি ড্রাগ সমস্যা। কিন্তু বোগোটার রাস্তায় হাঁটলে অথবা নৈশ জীবনে পা রাখলে এসব বুঝার উপায় থাকেনা। উপভোগ যেন লাতিনদের রক্তের সাথে মিশে থাকা কোন কিছু, হোক তা নৈশ ক্লাবে, সমুদ্র পাড়ে অথবা নিজ ঘরে। কলম্বিয়ানরা এ ব্যাপারে কয়েক এক ধাপ এগিয়ে। সবকিছুতে আনন্দ খোজার তাগাটা যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। হতে পারে একদিকে ক্যারাবিয়ান সাগর অন্যদিকে এন্ডিস পর্বতমালা এর অন্যতম কারণ। আগের বার সময় নিয়ে আসিনি, তাই রাজধানী বোগোটার বাইরে কোথাও যাওয়া হয়নি। এবারের ব্যাপারটা একটু আলাদা। বোগোটায় দুটা দিন কাটিয়ে চলে এসেছি সাগর পাড়ের শহর শান্তা মার্তা। এখানের অবস্থান ৭ দিনের জন্য। এর পরের গন্তব্য আরেক শহর কার্তাখেনা দ্যা ইন্ডিয়াস। যদিও যাত্রা পথে বারাংকিয়া নামের একটা শহরে থামতে হবে। এ যাত্রায় আকাশ পথ নয়, বরং দেশটার সাধারণ যানবাহনে চড়ে অলিগলি, রাজপথ ও এন্ডিসের বুক চিড়ে।

- চলবে


কলোম্বিয়ার পথে পথে। পর্ব-২

ভালো লাগলে শেয়ার করুন