শূন্য কলস বাজে বেশী...

Submitted by WatchDog on Sunday, October 11, 2015

বহির্বিশ্বে তাদের পরিচয় পরাশক্তির ভারসাম্যের প্রতীক হিসাবে। তৃতীয় বিশ্বের কাছে মার্কিন 'সাম্রাজ্যবাদ' ঠেকানোর সাক্ষাত যম। সময়টা আসলেই সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সোনালী যুগ ছিল। তেমনি একটা সময়ের কাহিনী। আমার মত অনেককেই তৃতীয় বিশ্ব হতে কুড়িয়ে আনছে সোভিয়েত দেশে। উদ্দেশ্য বহুমুখী। সরকারী ভাবে বলা হচ্ছে আন্তঃ-রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক শক্ত করা। যা বলা হচ্ছেনা তা হল, সমাজতন্ত্রের সৈনিক হিসাবে মাঠ পর্যায়ে দীক্ষা দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া। মূল বিষয় ইঞ্জিনিয়ারিং হলেও যে বিষয়টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তা হল "নাউচনি কম্যুনিজম" তথা বৈজ্ঞানিক সাম্যবাদ। মূল বিষয়ের কোন সাবজেক্টে ফেল করলে অসুবিধা নেই, অসুবিধা কেবল সাম্যবাদের পরীক্ষায় ফেল করলে। সোজা বাড়ি যাওয়ার টিকেট কেটে বিদায় করার রাস্তা দেখানো হয়। তবে রাজনীতির এন এক্সপার্ট হেডমাস্টার বাংলাদেশিদের কেউ এ বিষয়টায় কোনদিন ফেল করেছে বলে শুনিনি। বরং মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহের কারণে অনেক সময় শিক্ষকদের বিরক্তির কারণ হয়েছে বলেই শোনা যায়। সাম্যবাদের বিরক্তিকর ক্লাস চলছে। এক কথায় আধো ঘুমে বাধ্য হয়ে শুনতে হচ্ছে সমাজতন্ত্রের এসব হাদিস। বিষয় সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থায় টাকার ভূমিকা। শিক্ষক একজন পিএইচডিধারী পণ্ডিত। হর হর করে বলে যাচ্ছেন সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থায় টাকার বিনিময় ব্যবস্থা বিলোপ হয়ে সেখানে স্থান করে নেবে প্রয়োজন ও চাহিদা। অর্থাৎ আমার প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী আমি ভোগ করবো। তার জন্য কোন বিনিময় মূল্য দিতে হবেনা। এসবের নিশ্চয়তা দেবে সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা। আমার ঘিলু মগজে অনেকটা রূপকথার মত শোনালো এসব আজগুবি কথাবার্তা। প্রশ্নটা না করে পারলাম না; মাননীয় শিক্ষক, না হয় অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চালিয়ে নিতে মনিটরী ফ্যাক্টর ম্যানেজ করা যাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য চলবে কোন বিনিময়ে? শিক্ষক বেশ বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন। প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করলেন, তুমি বাংলাদেশের ছাত্র? হ্যাঁ বলতে জানালেন ক্লাশের বিরতিতে উত্তর দেবেন, ওয়ান এন্ড ওয়ান। আমি খুশি নই শিক্ষক চেহারা দেখেই বুঝতে পারলেন।

বিরতিতে কথা হল। জানতে চাইলেন আমি জন্মগত ভাবে মুসলিম কিনা। বললাম, হ্যাঁ। এবার দিলেন আজব এক তথ্য। বললেন, ইসলাম ধর্মে মৃত্যুর পর যেমন হুর-পরীর অপশন আছে, তেমনি সাম্যবাদী ধর্মেও আছে প্রয়োজন ও চাহিদার হুর-পরী। এর দুটাই ভুয়া এবং জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মোক্ষম হাতিয়ার। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এ বিষয়ে পিএইচডি করেছো, ডিপার্টমেন্টের হেড হয়েছো, তুমিই যদি এসব বল তাহলে আমরা বিশ্বাস করবো কাকে? সোজাসাপ্টা উত্তর দিল; তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে কেন, বরং ইঞ্জিনিয়ারিং'এর ডিগ্রী নেয়ার জন্য সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করো। সাম্যবাদ হচ্ছে মানব ধর্মের সর্বশেষ সংস্করণ। তোমাদের ধর্মের মত এখানেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবেনা। উলটা পালটা বললে পৃথিবী হতে বিদায় নিতে হবে। এক কথায় সাম্যবাদ হচ্ছে তোমাদের শরিয়া আইনের অপর পীঠ। ওরা মায়ের পেটের খালাতো ভাই। ঝিমঝিম করে উঠল মাথাটা। ক্লাশের বাকি অংশ এড়িয়ে গেলাম। এসব শুনতে ইচ্ছা করছিলো না। এক বছর পর সাম্যবাদের উপর রাষ্ট্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে দেখি একই শিক্ষক পরীক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। আমি ঢুকতেই সময় ব্যয় না করে ডেকে নিয়ে গেলেন নিজের কাছে। কমিশনের বাকি সদস্যদের বললেন, এ ছাত্রের পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন নেই। এ বিষয়ে সে ওভার কোয়ালিফাইড।

মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত ও অস্তমান ক্ষয়িষ্ণু সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সমকালীন ডিক্টেটর ভ্লাদিমির পুতিন কখনো যুদ্ধ বিমান চালিয়ে, কখনো বা আইস হকির রিংয়ে নেমে প্রমাণ করতে চাইছেন নিজের বাহুবল। কথায় বলে শূন্য কলস বাজে বেশী। অতীতের সোভিয়েত সাম্রাজ্য তেমনি এক শূন্য কলস। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে আজীবন ক্ষমতা ধরে রাখার শেষ দেখতে আমাদের বোধহয় আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন