৯/১১ এবং কিছু বিক্ষিপ্ত ভাবনা...

Submitted by WatchDog on Monday, September 13, 2010

মূল লেখাটায় যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা বাসি খবর সবার সাথে নতুন করে ভাগাভাগি করতে চাই। মনযোগ আকর্ষণ করার মত তেমন কোন খবর নয় যদিও, কিন্তু প্রসঙ্গটা মগজ হতে ফেলতে পারছি না বিশেষ কতগুলো কারণে। খবরে প্রকাশ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গোসাইলডাংগা এলাকায় হিন্দু একটা মন্দির ভাংচুর করেছে এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু। তাই ইচ্ছা থাকলেও এ নিয়ে খুব একটা হৈ চৈ করতে সক্ষম হবে বলে মনে হয়না। ঈদের আনন্দের সাথে অ্যালকোহল মিশিয়ে এলাকার কিছু তরুন ফুর্তি করেছে যার বলি হয়েছে মন্দিরের শিবলিঙ্গ, ঘট, নারায়ণ মূর্তি ও আসবাবপত্র। বাংলাদেশের মানদণ্ডে এমন কি মহা অন্যায়, বিশেষ করে তা যদি হয় দুর্বল সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে !

ঘটনাটা সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ ঘটলেও স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল ১৪ তারিখ। সে দিন ম্যানহাটনের বাতাসে শুধু টুইন টাওয়ারের লোহালক্কড় পোড়ার গন্ধ ছিলনা, ছিল মানুষ পোড়ার গন্ধ। যাদের এ অভিজ্ঞতা নেই বুঝাতে কস্ট হবে দৃশ্যের ভয়াবহতা। মা সন্তানের জন্যে, স্ত্রী স্বামীর জন্যে, স্বামী স্ত্রীর জন্যে, ভাই বোনের জন্যে অপেক্ষা করছে। সে অপেক্ষা জীবিত কারও জন্যে নয়, স্রেফ লাশের অপেক্ষা। গলিত বিকৃত লাশ উদ্ধার হচ্ছে আর অপেক্ষমান আত্মীয়স্বজন হুমড়ি খেয়ে পরছে। এ দৃশ্য বেশিক্ষণ দেখার মত ছিলনা। দেখলে তলপেট মোচ্‌ড়ায়, বমি আসে। তারপরও গেছি জায়গাটায়, একবার নয়, বহুবার। টনকে টন ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে যেদিন নতুন স্কাইস্ক্রেপারের ভিত্তি স্থাপন করা হল ভেবে ছিলাম ৯/১১’র ক্ষত হতে আমেরিকা বোধহয় বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ঘটনার ৯ম বার্ষিকীতে এসে এমনটা মনে করার কোন ভিত্তি দেখছি না।

ওসামা বিন লাদেনের জন্ম আমেরিকানদের গর্ভে, এ নেকেড সত্য বাইরের পৃথিবীতে জনপ্রিয় হলেও আমেরিকার ভেতর এ নিয়ে কথা বলতে কোথায় যেন সংকোচ। প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আমেরিকার গর্বের শেষ নেই, কিন্তু এই একটা জায়গায় তারা কেন জানি বোবা, আন্ধা। কথিত আছে আফগানিস্তান হতে দখলদার সোভিয়েত বাহিনী তাড়ানোর যুদ্ধে লাদেন বাহিনী এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করেছিল। স্ট্রাটেজিক উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হওয়ার সাথে মার্কিনিরা লাদেন বাহিনীকে পরিত্যাগ করলেও লাদেন বাহিনী সড়ে আসেনি তাদের মিশন হতে। এবং সে মিশন ছিল তাদের ভাষায় সত্যিকার ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এ ধরনের একটা রাষ্ট্রের আসল চেহারা কি হতে পারে তালেবান আমলের আফগানিস্তান তার চাক্ষুস প্রমান। একটা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি নিজেরাই যথেষ্ট তাদের সমাজ ব্যবস্থা পছন্দ করার জন্যে, এ নিয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ উপনিবেশ আমলের কথাই মনে করিয়ে দেবে। আফগানরা নিজেদের দেশে মোল্লা ওমরের তালেবানী না জহিরের রাজতন্ত্র কায়েম করবে তা একান্তই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু এই তন্ত্র যখন নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূরের দেশ আমেরিকার ম্যানহাটন পর্যন্ত পৌছে যায় তন্ত্র টা বোধহয় আর নিজস্ব থাকে না। মুসলমানদের সাথে বাকি দুনিয়ার কনফ্লিক্টের শুরুটা বোধহয় এখানেই। ওসামা বিন লাদেনের দেশ সৌদি আরব। রাজতন্ত্রের কঠিন নাগপাশে দেশটায় ধর্ম দূরে থাক মানবতার বেসিক মূল্যবোধও দলিত মথিত। জিহাদ যদি করতেই হয় ওসামার উচিৎ ছিল তা নিজের দেশ হতে শুরু করা।

নিজেদের ধর্ম আমরা ঘর হতে শুরু করতে পারিনা, শুরু করি বিদেশীদের ঘরে। ফিরে আসি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের গোসাইলডাংগায়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আমাদের দেশে মাইনরিটি সন্দেহ নেই। কিন্তু একই কথা প্রতিবেশি দেশ ভারতের বেলায় নিশ্চয় প্রযোজ্য নয়। এই ভারতীয়দের কেউ যদি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট নিয়ে গুড়িয়ে দেয় মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন কি হবে আমাদের প্রতিক্রিয়া?

৯/১১ ঘটনার নবম বার্ষিকীতে এসে মার্কিনিরা কেন এতটা মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করছে তা জানতে আমাদের হয়ত ঘাটতে হবে দেশটার কর্পোরেট চরিত্র। নতুন একটা লেখায় এ নিয়ে আলোকপাত করার ইচ্ছা রাখি।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন