মহসীন আলীর সিঙ্গাপুর যাত্রা

Submitted by WatchDog on Sunday, September 6, 2015

Bangladeshi

অনেকদিন আগে সে পথ দিয়ে রেলগাড়ি চলত। ঠাট্টা করে আমরা গাড়িকে মামু বলে ডাকতাম। এর কিছু কারণও ছিল। রেলের গার্ড ও টিটিকে হাতে কিছু ধরিয়ে যেখানে খুশি সেখানে থামানো যেত। গ্রামে গঞ্জের মানুষ তাই করতো। কেউ টিকেট কাটতোনা মামু বাড়ির ট্রেন দাবি করে। তো একদিন সরকার বাহাদুর বিবেচনা করে দেখলেন এ লাইনের ট্রেন দিয়ে খাজাঞ্চিখানায় হীরা জহরত জমা পরছেনা। তাই কিছু একটা করা দরকার। সভাসদদের ডেকে দরবারে বসলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন বন্ধ করার। যেমন কথা তেমন কাজ, বন্ধ হয়ে গেল মামু বাড়ির ট্রেন সার্ভিস। নরসিংদী হতে মদনগঞ্জের রেল সার্ভিসের কথা এলাকার জনগণ আফসোস নিয়ে মনে করে। আমার মনে করার কারণ অন্যকিছু। মোল্লারচর নামক ষ্টেশন হয়ে দাদার বাড়ি যেতে হত। ষ্টেশন হতে দূরত্ব ২/৩ মাইল। পায়ে হেটেই রওয়ানা দিত সবাই। অসুবিধা হত বর্ষাকালে। পানিতে তলিয়ে যেত মেঠো-পথ। গাড়ি থামার সময় হলে গ্রাম-গঞ্জের অনেকে নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করতো যাত্রীদের। যতদূরই হোক আর যত দুর্গমই হোক পৌঁছে দিত অভীষ্ট লক্ষ্যে। খুবই আরামদায়ক ছিল সে যাত্রা। কচুরিপানা আর শাপলা বিলের বুক চীড়ে সাই সাই করে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দই ছিল অন্যরকম।

মন্ত্রী মিনিষ্টারদের ইদানীংকালের সিংগাপুর যাত্রার কাহিনী পড়ে মনে পড়ে গেল দিন গুলোর কথা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসিন আলী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। অসুস্থ হওয়া মাত্র ঐ দেশ হতে উড়ে এলো এয়ার এম্বুলেন্স এবং উঠিয়ে নিয়ে গেল সংকটাপন্ন মন্ত্রিকে। কদিন আগে একই কায়দায় রেল-মন্ত্রীও ঘুরে এলেন সিঙ্গাপুর হতে। কারও পেটে ব্যথা, কারও কানের সমস্যা, কারও আবার মাথা চক্কর দেয়ার রোগ...আমাদের প্রেসিডেন্টের যে কি রোগ তার কোন বর্ণনা নেই। তিনিও দুদিন পর পর সিঙ্গাপুর দৌড়চ্ছেন একই যানবাহনে । এয়ার এম্বুলেন্সের কথা শুনলেই কেন জানি মোল্লারচর ষ্টেশনে অপেক্ষমাণ নৌকা গুলোর কথা মনে পড়ে। চার আনা দিলেই মাঝি পৌঁছে দিত গন্তব্যস্থানে। সিঙ্গাপুরী এয়ার এম্বুলেন্সের বাংলাদেশ আগমনের ঘনত্ব বিবেচনায় আনলে কেন জানি কল্পনা করি দুই আনা চার আনার কথা। কথায় কথায় এয়ার এম্বুলেন্স আনা তখনই সম্ভব যখন এর মূল্য আনায় পরিশোধ করা যায়। অন্তত আমার মত হা-ভাতে স্বদেশীদের জন্য। দেশে কি আদৌ কোন চিকিৎসা নেই! ডাক্তার-কুলদের কেউ কি জবাব দেবেন কোন প্রেক্ষাপটে দুদিন আগের এসব ভিখারির দল এয়ার এম্বুলেন্সে করে বিদেশে দৌড়চ্ছে? অর্থনীতিবিদদের কেউ কি হিসাব কষে বলবেন কার পকেট হতে শোধ করা হচ্ছে এর মূল্য? আমার ডাম্ব মাথায় এ হিসাব কিছুতেই মেলাতে পারছিনা।

মোহসিন আলী সরকারী পয়সার শ্রাদ্ব করে জনসভার আয়োজন করেন। সে সব সভায় স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাদের টেনে আনেন। এবং সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিগারেট ফুঁকেন। নিজে অসুস্থ হন এবং বাকিদেরও সে পথে ঠেলে দেন। এবং একই আলীর চিকিৎসার জন্য আমাদেরই পকেট হতে টাকা খরচ করে ডেকে আনতে হয় এয়ার এম্বুলেন্স। মগের মুলুক বলে একটা মুলুক আছে জানতাম, আমাদের বাস কি তাহলে সে মুলুকেই?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন