একটি রাস্তার ইতিকথা

Submitted by WatchDog on Wednesday, August 25, 2010

Road to Politics

চাইলে এই একটা ছবি নিয়েই লেখা যাবে বিশাল ক্যানভাসের গল্প। অনেকে বলবেন রাজনীতির গল্প, কারণ ওয়াচডগ রাজনীতি বাদে অন্যকিছু লিখতে জানে না। আপনারা সঠিক হলেও ক্ষতি নেই। অন্যের কাছে যা রাজনীতি আমার কাছে তা জীবন, আমি যা লিখি তা আমার জন্যে জীবনের গল্প, বেচে থাকার গল্প। চোখে পরার মত এমন কিছু নেই ছবিটায়। শূণ্য একটা রাস্তা। উঁচু-নিচু ও আঁকা বাঁকা হয়ে চলে গেছে দুরে বহুদূরে। মনে হবে আকাশের সাথে মিশে গেছে দিগন্ত রেখায়। শখের ছবি নয় এটা, অফিসের প্রয়োজনে তোলা। আমার গল্প ছবিকে ঘিরে কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে তা নয়, বরং এ রাস্তায় কি হচ্ছে না তা নিয়ে এ লেখা।

ছ’মাস আগের কথা। অফিসের কাজে প্রথম যেতে হয় রাস্তাটায়। রাস্তা বলতে খোলা মাঠ ধরে বয়ে যাওয়া সুক্ষ্ম একটা রেখা। বলা হল দুমাসের ভেতর ফুটে উঠবে এর আসল চেহারা। টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসাবে আমার কাজ হবে এলাকায় ল্যান্ডফোন ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ডিজাইন করা। একটু অবাকই হয়েছিলাম খোলা মাঠের জন্যে হাইস্পিড ইন্টারনেটের কথা ভেবে। দুই মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প। বাংলা টাকায় প্রায় ১৪ কোটি টাকা। টেন্ডার যেদিন চূড়ান্ত হয় অফিসের কোথাও কোন উত্তেজনা চোখে পড়ল না। প্রবেশমুখে তরুণ, উদীয়মান ও উঠতি ব্যবসায়ীদের কাউকে জটলা করতে দেখা যায়নি। এ কাজে ৫০ বছরে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন গেহার্ড ইনক্‌ নামের কোম্পানী কাজ পাওয়ায় অস্ত্র হাতে কেউ ঝাপিয়ে পরেনি তাদের উপর। রিও র‌্যাঞ্চো শহরের মেয়র টমাস সুইসট্যাক, অঙ্গরাজ্যের নব নির্বাচিত সিনেটর টম উডাল অথবা বিদায়ী গভর্নর বিল রিচার্ডসনকে ফোন করতে হয়নি নিজ ক্যাম্পের কাউকে কাজ দেয়ার সুপারিশ নিয়ে। টেন্ডারের একটা অংশ লোকাল প্রতিনিধি মারফত প্রেসিডেন্ট ওবামার অফিস হয়ে তার ১৫ বছরের মেয়ে মালিয়ার পকেটে যাবে এমনটাও কাউকে বিবেচনা করতে হয়নি। টেন্ডার হেটে গেছে টেন্ডারের পথে। ও পথে ওঁৎ পেতে থাকেনি ডেমোক্র্যাট অথবা রিপাবলিকান দলীয় হায়েনা।

রাস্তাটার কোন নাম ছিলনা। আর থাকলেও আমার মত সাধারণ প্রকৌশলীর তা জানার কথা নয়। কাগজপত্র ঘাটতে গিয়ে জানা গেল রাস্তাটার নাম হবে 19th Street। এর সামনে পেছনে ১৮তম ও ২০তম রাস্তা। নামকরণ নিয়ে অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকান নেতাদের মারামারি করতে হয়েছে এমন স্বাক্ষী কেউ দেবেনা। নাম হেটে গেছে নামের পথে। ও পথে গভর্নর রিচার্ডসনকে দেখা যায়নি নিজের মা-বাবার কবর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। রাস্তার নাম নিয়ে যেমন কেউ মাথা ঘামায়নি তেমনি রাস্তা যেদিন খুলে দেয়া হবে রাজধানী সান্তা ফে হতে কারও আসার দরকার হবেনা। মোড়ে মোড়ে তোরণ নির্মানের প্রয়োজন দেখা দেবেনা। ১৯তম রাস্তায় নামবে না মিডিয়ার ঢল। রাস্তা হেটে যাবে রাস্তার পথে, কারণ এটাই জনপ্রতিনিধিদের কাজ।

আপনি বলবেন এ তো আমেরিকা, পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ, এ দেশে এমনটা হওয়াই তো স্বভাবিক। আপনি সঠিক হলেও আমার আপত্তি নেই। ঘুম ভেংগে আয়নায় তাকালে যার মুখ দেখি সে একজন মানুষ। দুহাত, দুপা, দুকান আর দুচোখ ওয়ালা স্বাভাবিক মানুষ যার সাথে সামান্যতম পার্থক্য নেই রিও র‌্যাঞ্চো শহরের সাধারণ মানুষের। অর্ধ শতাব্দি আগে যে আমেরিকায় সাদাদের বাসে কালোদের চড়ার সূযোগ ছিলনা সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এখন কালো। চাইলে সবই সম্ভব, তবে তার জন্যে চাই মনের দারিদ্রতা হতে বেরিয়ে আসা।

সন্দেহ নেই নিকট ভবিষ্যতে বদলে যাবে ১৯তম রাস্তার চেহারা। যে রাস্তার শুরুটা ছিল শূন্য হতে তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিশাল এক জনপদ। মানুষ ও প্রকৃতির মাঝে নিবিড় সম্পর্কের যে চিরন্তন ধারা তার প্রায় দোর গোড়ায় পৌছে যাবে এলাকার জীবন। এ নিয়ে কেউ কথা বলবে না, উচ্চবাচ্য করবে না, ক্রেডিট নেবে না রাস্তার জন্ম নিয়ে। ১৯তম রাস্তা হতে হাজার হাজার মাইল দুরে পৃথিবীর অন্য কোথাও হয়ত তৈরী হবে আরও একটা রাস্তা। এ রাস্তার টেন্ডার লাভে দু’একটা জীবন ঝরে গেলেও কেউ অবাক হবেনা, ফেলবে না দুফোঁটা চোখের পানি। টেন্ডার কমিশনের জন্যে হা হয়ে থাকবে দেশটার প্রধানমন্ত্রীর সন্তান, হা হুতাশ করবে বিরোধী দলের সন্তান। রাস্তার নাম নিয়ে হয়ত হাঙ্গামা হবে, উত্তাল হবে মিডিয়া। মিছিল আর ভাংচুর হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শেষ পর্যন্ত আসবে উদ্বোধনের দিন। ব্যানার আর তোরণে ঢেকে যাবে উপরের আকাশ। ভাষণ হবে, মানুষের পদভারে সয়লাব হবে এলাকা। কবর হতে মৃত বাবা অথবা স্বামীকে উঠিয়েও অনেকে বিক্রি করবে ভিন্ন মেরুর ১৯তম রাস্তায়। সময়ের প্রবাহে একই রাস্তা হারিয়ে ফেলবে তার চেহারা, পদে পদে তৈরী হবে মৃত্যু খাদ। আবারও টেন্ডার হবে। তবে এ যাত্রায় নতুন নয়, পুরানো ১৯তম রাস্তার জন্যে। এ ফাকে ঘুরে যাবে শতাব্দি।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন