রাজনীতির বলি নাফিস

Submitted by WatchDog on Saturday, August 10, 2013

Nafis

খুব জরুরি কিছু না হলে অফিস আওয়ারে ফোন করিনা আমরা। এ নিয়ে অলিখিত চুক্তি আছে বন্ধু মোর্শেদের সাথে। তাই ভর দুপুরে ফোনটা পেয়ে একটু হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাবলাম নিশ্চয় খারাপ কিছু। নিউ ইয়র্ক থাকার সুবাদে দেশের তাবত খবর তার নখদর্পণে। তেমন কিছু থাকলে আমার সাথেও শেয়ার করে। তবে তা হয় অফিস শেষে বাসায় ফিরে। জরুরি একটা মিটিংয়ে ছিলাম, তাই ধরা হলনা। এসএমএস পাঠিয়ে নিজ অবস্থানের কথা জানাতে ফ্রি হয়ে ফোনব্যক করার অনুরোধ করল। ভেতরের খচখচানিটা থেকেই গেল। তাই মিটিংটা সংক্ষিপ্ত করে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলাম। পরিমরি করে লবিতে ছুটে গিয়ে ফোন দিলাম।

’তুই কি উচ্চ আদালতের রায়টা পড়েছিস?
ভাবলাম হয়ত মার্কিন উচ্চ আদালত নতুন করে ওবামাকেয়ারের উপর রায় দিয়েছে। অনেকদিন ধরেই বিরক্ত করছে সিনেট ও হাউস রিপাবলিকানরা। বিচারকরাও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন। আগের বার চীফ জাষ্টিস জন রবার্টের অপ্রত্যাশিত ভোটে টিকে গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট ওবামার ম্যান্ডেটরি হেলথ প্রোগ্রাম ওবামাকেয়ার। একটু হতাশ হয়েই জিজ্ঞেস করলাম, ’রেজাল্ট কি? জন রবার্ট কি এ যাত্রায় ভোট দেয়নি?’ মোর্শেদ রেগে গেল। এবং জানাল দেশি বিদেশি খবরের ব্যাপারে আমি নাকি পিছিয়ে পরছি। অকপটে স্বীকার করলাম নিজ সীমাবদ্ধতার কথা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উত্তেজনা থিতু হয়ে আসার পর আকর্ষন হারিয়ে ফেলেছি মার্কিন রাজনীতির। বলতে গেলে দেখাই হয়না এমএসএনবিসি, সিএনএন অথবা ফক্স নিউজ। অনেকটা রাগত সুরে জানালো, মার্কিন নয়, দেশীয় উচ্চ আদালতের যায়। জামায়েত-ই ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে দেশের উচ্চ আদালত। এ নিয়ে উত্তেজনায় টগবগ করছে বন্ধু মোর্শেদ। শাহবাগ চত্বরের গণজমায়েত নিয়েও উত্তেজনা ও উচ্ছাসের শেষ ছিলনা তার। গাঁটের পয়সা খরচ করে দেশে পর্যন্ত ছুটে গিয়েছিল।

’এ আর নতুন কি! এমনটা যে হবে তা তো জানাই ছিল। উচ্চ আদালতের বিচারকদের প্রায় সবাই দলীয় ক্যাডার। স্ব স্ব দলের নেত্রী যা বলবেন তার আইনি দিকটা দেখভাল করার জন্যেই এদের নিয়োগ দেয়া হয়। এ যাত্রায়ও তাই ঘটেছে।’ উত্তরটা মনে হয় হতাশ করলো মোর্শেদকে। সে ভেবেছিল আমিও তার মত উত্তেজিত হব এবং লম্বা একটা ভাষন দিয়ে খুলে দেব দেশপ্রমের সবকটা জানালা। গণজাগরন মঞ্চ নিয়ে আমার ভবিষৎ বাণী মনে করিয়ে দিতেই দমে গেল সে। রায়ের বর্তমান ও ভবিষৎ নিয়ে মোর্শেদের সাথে বাক্যালাপে রাখ ঢাক করার মত কিছু ছিলনা। যা বলার তা সরাসরি বলে দিলাম। অস্বিত্ত্ব টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগের অপর পীঠে জামাতের পদচারণা দলটার জন্য বাধ্যতামূলক। এ শুধু অভ্যন্তরীণ নয়, ঠান্ডা যুদ্ধ অবসানের পর সমসাময়িক বিশ্ব বাস্তবতার বিচারেও আওয়ামী লীগের জন্য জামাতে ইসলামের রাজনীতি বাধ্যতামূলক। জামাত বিহীন আওয়ামী রাজনীতি অস্তিত্ব সংকটে পরতে বাধ্য। জামাতিদের জেল-হাজত অথবা মাথায় দুধের নহবত বইয়ে দিলেও ভোটের রাজনীতিতে ওরা আওয়ামী ঘরমুখি হবেনা। ভোট যাবে সেই জাত শত্রু বিএনপির বাক্সে। পাশাপাশি চুরির ময়দানে গায়ে শীর্ষ চোরের তকমা লাগিয়ে নতুন প্রজন্মের স্বদেশিদের নৌকার যাত্রী বানানো সহজ হবেনা দাঁড়িপাল্লার ভূত পাশে না থাকলে। আওয়ামী ও জামাতি একে অপরের পরিপূরক, মায়ের পেটের খালাতো ভাই। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তা ভাল করেই জানে। এ জন্যই রায়ের ২৪ ঘন্টার ভেতর বিভিন্ন নেতার মুখ হতে বেরিয়ে এসেছে জামাতি রাজনীতি নিষিদ্ধ না করার ঘোষনা। প্রশ্ন উঠবে, রাজনীতি নিষিদ্ধ করার অধিকার তাহলে কার, আদালত না ক্ষমতাসীনদের হাতে? আদলতের রায়ে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হতে পারে, জামাতি রাজনীতি বাতিল হতে অসুবিধাটা কোথায়? এর অটোপসি করলেই বেরিয়ে আসবে দেশের উচ্চ আদালতের সাথে মাফিয়া রাজনীতিবিদিদের আসল সম্পর্ক। সুশাসনের পথে রাজনীতিই যে একমাত্র অন্তরায় নয় দল হিসাবে জামাতে ইসলামের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়ার রায় তাই প্রমাণ করে।

নাফিস নামক তরুন বাংলাদেশিকে মার্কিন আদালত ৩০ বছরের জেল দিয়েছে। অপরাধ, বোমা মেরে দেশটার ফেডারেল বিল্ডিং উড়িয়ে দেয়া। মার্কিন গোয়েন্দাদের ষ্টিং অপরেশনের সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের জানা থাকার কথা কতটা অনৈতিক এসব অপারেশন। অপরাধীদের প্রামণ সহ হাতেনাতে ধরা না গেলে ফাঁদ পেতে ধরার অপর নামই ষ্টিং অপারেশন। বলা হয় এফবিআইয়ের জনৈক বাংলাদেশি এজেন্টের হাত ধরেই নাফিসের উত্থান। বন্ধুদের আড্ডায় মুসলমানদের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির কড়া সমালোচনা, পাশাপাশি দেশটার ক্ষতি করার হুমকিই নাফিস অধ্যায়ের শুরু। এফবিআই এজেন্ট সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাকে নিয়ে যায় অনেকদূর, যেখান হতে ফিরতে নাফিসের সময় লেগে যাবে ৩০ বছর। ফেডারেল বি্লডিং উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ও মালমসলা সহ সবকিছু যোগান দেয়ার দায়িত্বে ছিল এজেন্ট। এমনকি যে গাড়িতে করে বোমা পেতে রওয়ানা হয়েছিল তাও সরবরাহ করেছিল সরকারেরই প্রতিনিধি। এ ধরণের অনৈতিক ও অপরাধপ্রবণ পরিকল্পনার ফাঁদ ফেলে নাফিসদের মত হতাশ ও জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ তরুণদের আটকে ফেলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। মার্কিন সরকার তাই করছে। এবং টার্গেট বানানো হচ্ছে রেসিয়াল প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশি মুসলমানদের এফবিআইয়ের রাডারে আনার জন্য মূল দায়ী বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের দায়িত্বহীন কথাবার্তা। জামাতি ও হেফাজতি যুযুর ভয়, পাশাপাশি আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় তালেবান রাষ্ট্র, এ ধরনের চরম হঠকারী বক্তব্যের কারণেই আমরা যারা দেশটায় বাস করছি তাদের পেছনে টিকটিকি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় গেলে ইসলামি জঙ্গিবাদের মূল আখড়ায় পরিণত হবে আজকের বাংলাদেশ, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এ অন্যতম দাবি। এ ধরনের দাবির প্রতি মার্কিনিরা দৃষ্টি দিতে বাধ্য। ৯/১১’র আগে এসব কথাবার্তায় খুব একটা নজর দেয়নি বলেই আল-কায়েদা সুযোগ নিয়েছিল এবং হত্যা করেছিল প্রায় তিন হাজার মার্কিন নাগরিক। সময় এখন ভিন্ন। আশাকরি আমাদের চোর রাজনীতিবিদগন কেবল চুরি নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন; আল-কায়েদা, তালেবান ও আফগানিস্থানের মত অপ্রসাঙ্গিক বিষয়ের উপর কথা বলে আমরা যারা বিদেশে আছি তাদের জীবন বিপন্ন করবেন না।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন