ভারতের সাথে ৭ হাজার কোটির চুক্তি, চাঁদের অন্য পীঠ।

Submitted by WatchDog on Saturday, August 7, 2010

Indian-Bangladesh Trade agreement

ভারত বাংলাদেশকে ১.৭৫% সুদে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে যা ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। প্রনব বাবু ঢাকায় এসে চুক্তি চুড়ান্ত করে গেলেন। এ চুক্তি দু'দেশের সম্পর্কে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলেও তিনি দাবি করেছেন। চুক্তির পাশাপাশি দু দেশের মধ্যে অনেকদিন ধরে ঝুলে থাকা নেপাল ট্রানজিট সমস্যারও একটা আশাব্যঞ্জক সমাধা দিয়ে গেলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের সাথে তিন লাখ টন চাল আর দুই লাখ টন গম রফতানিরও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক ভারসাম্যতা বজায় রাখতে এ ধরনের চুক্তির প্রয়োজনীয়তা আজ প্রতিষ্ঠিত সত্য। প্রতিবেশীর সাথে স্থায়ী বৈরিতা কোন পক্ষের জন্যেই ভাল কিছু বয়ে আনে না, তার প্রমান খুঁজতে আমাদের বোধহয় খুব একটা দূরে যেতে হবেনা। এমনটাই আজকের বাস্তবতা, অর্থনৈতিক বাস্তবতা।

প্রনব বাবু শেখ হাসিনার ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক বন্ধু। সন্দেহ নেই ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রসের এই শক্তিধর নেতা সব সময়ই চাইবেন পছন্দের দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক। অর্থনৈতিক মুক্তির সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ভারতীয়দের তা ভাল করেই জানা আছে। প্রনব বাবুরা যদি পছন্দের দল আওয়ামী লীগকে অনন্তকাল ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে চান তাহলে প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিৎ দেশটার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহযোগী হওয়া। ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ এ অর্থে ভারতীয়দের সদিচ্ছারই ইঙ্গিত বহন করে। দেখার বিষয় ক্ষমতার পরিবর্তনের সাথে ভারতীয়দের নীতিরও পরিবর্তন হয় কি-না।

চুক্তির শর্তানুযায়ী দেয় ৭ হাজার কোটি টাকার শতকরা ৮৫ ভাব ব্যায় করতে হবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে। সোজা বাংলায়, যা কিছু কেনাকাটা তার ৮৫ ভাগই করতে হবে ভারত হতে। বিশ্ব দুর্নীতির চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর ৪ বার শিরোপা লাভের পর বাংলাদেশের প্রতি বিশ্ব সমাজের বিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে। অনেক সরকারই এখন সরকারী ভান্ডারে সাহায্য দূরে থাক ঋণ দিতেও আগ্রহ দেখায় না। কারণ একটাই, দুর্নীতি। ঋণ দাতা দেশগুলো এখন বিনা সংকোচে জুড়ে দিচ্ছে হরেক রকম শর্ত যেমনটা দিয়েছে ভারত। ৮০ দশকের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার সহযোগী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন প্রকল্পে ব্যাপক সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বাধ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে প্রকল্পের শতকরা ১০০ ভাগ মালামাল ক্রয় করতে যার মধ্যে অন্যতম ছিল তার, কাঠের খুটি, গাই এ্যংকর সহ নাট-বল্টু পর্যন্ত। বিষয়টা এখানে শেষ হলে কথা ছিলনা, মালামালের উপর মার্কিনিরা আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছিল হরেক রকম উপদেষ্টা। এসব উপদেষ্টাদের তৎকালীন বেতন ছিল মাসিক ৫/৬ লাখ টাকা। যারা ঐ সময় প্রকল্পের সাথে জড়িত ছিলেন তাদের মনে থাকার কথা কমনওয়েলথ ইনক্‌ নামের মার্কিন উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানটির কথা। জিয়াউর রহমানের কথিত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীরা তখন ক্ষমতায়। রাজনৈতিক কালচারের অংশ হিসাবে দেশের বামপন্থী দলগুলো মার্কিন সাহায্য নিয়ে কম হৈ চৈ করেনি। তাদের কথা বিশ্বাস করলে আমাদের দেশ এতদিনে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। আমরা এখনও বাংলাদেশ নামেই বিশ্বের কাছে পরিচিত। বামদের সমালোচনা আমলে নিলে আর যাই হোক অন্তত আমাদের গ্রামে গঞ্জে বিদ্যুতায়ন সম্ভব হত না। জানিনা আজকের রাশেদ খান মেনন আর রনোর দলের কেউ পল্লী বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করেন কি-না। করে থাকলে তা হবে হিপোক্রেসি, রাজনৈতিক দেউলিয়াপণা।

ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভেতর যারা ষড়যন্ত্রের আলামত খুঁজে পান তাদের সাথে দ্বিমত করতে চাই। বিনা স্বার্থে আজকের দুনিয়ায় কেউ কাউকে কানা কড়িও দেয় না। বেনিয়া জাতির দেশ ভারত হতে এমনটা আশা করা হবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করা। আমাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। দুর্নীতি। ভারতীয় সহায়তায় যে সব প্রকল্প ইতিমধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই ব্যায় হবে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে যার মধ্যে রেল ও নৌপথ অন্যতম। শুরুটা হবে সচিবালয়ের অতি শিক্ষিত সচিবদের দিয়ে। ভারতীয় ঋণে ভারতের মালামাল কেনায় খালি চোখে অসুবিধা দেখা না গেলেও দূরবীন নিয়ে দেখলে চোখে পড়বে আমাদের কলংক গুলো। আজকে যারা রেল ও নৌ মন্ত্রনালয়ের সচিব প্রকল্প বাস্তবায়নের পর তাদের ব্যাংক ব্যালন্স পরীক্ষা করলেই বেরিয়ে আসবে কি কারণে দুর্নীতিতে আমরা বার বার প্রথম হই।

৭ হাজার কোটির কত কোটি ভারতে যাবে আর কত কোটি রাজনীতির অলিগলিতে ওঁৎ পেতে থাকা চোরদের পকেটে যাবে তার হদিস বের করার রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার। সরকারী কর্মকান্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যে সবেধন নীলমনি দুদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা দিয়েছে মন্ত্রী এমপির দল। অনেকে বলেন নেত্রী ইচ্ছা করে না-কি গৃহপালিত ভৃত্যদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কথা বলাচ্ছেন বিশেষ কারণে। অবাক হবনা যদি সাত হাজার কোটির একটা অংশ হাত পা গজিয়ে উড়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় এবং যুক্তরাজ্যে। প্রনব বাবুরা টাকা দেবেন আর এ টাকা বিশ্বের সেরা কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের দুয়ারে নক করবে না বাংলাদেশ নিশ্চয় এতটা অকৃতজ্ঞ দেশ নয়।

৭ হাজার কোটি টাকা ভারত সাহায্য হিসাবে দিচ্ছে না, দিচ্ছে লোন হিসাবে, যা ২৫ বছরে সরকারী খাজাঞ্চি হতে পরিশোধ করতে হবে। ভারত আসলেই যদি আমাদের উন্নয়নের সহযোগী হতে চায় অনুরোধ করব বড় অংকের এ টাকা মনিটর করার জন্যে বাংলাদেশে একদল আবাসিক প্রতিনিধি পাঠাতে। হয়ত এভাবে কিছুটা হলেও নিশ্চিত করা যাবে কোটি কোটি টাকার হাঁটাচলা।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী চোর, বিরোধী দলীয় নেত্রী চোর, মন্ত্রী, এম্পি, আমলা, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, বিচারক সহ প্রায় সবাই চোর। ভারতীয়দের তা জানা থাকার কথা। আশাকরি এতগুলো টাকা একদল ক্ষুধার্ত চোরের সামনে বিনা নিয়ন্ত্রনে তুলে দেবেনা বিশ্বের এই অর্থনৈতিক জায়ান্ট।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন