রাজনীতির অলি গলি

Submitted by WatchDog on Thursday, July 15, 2010

Bangladeshi Politics

ইটের বদলে পাটকেল যদি রাজনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গত ১৮ মাসের শাসন সে অর্থে শতভাগ সফল। বিএনপি-জামাত জোটের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগনের ঐতিহাসিক ম্যান্ডেটকে প্রতিপক্ষ উচ্ছেদের ম্যান্ডেট হিসাবে নিয়ে দল হিসাবে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে এমন এক সাংস্কৃতি চালু করতে চাইছে যা বুমেরাং হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসতে বাধ্য । শুরুটা নাম বদল দিয়ে। বাংলাদেশের মাটি হতে জিয়া নাম উচ্ছেদকে এক অর্থে ব্যাক্তিগত ক্রুসেড হিসাবে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোন ভনিতা না করে নিজেই ঘোষনা দিয়েছেন ’খালেদা জিয়া করেছেন, তাই আমিও করছি’। সেনা ছাউনির গর্ভে জন্ম নেয়া অগনতান্ত্রিক দলের কর্মসূচীকে আওয়ামী লীগের মত পরীক্ষিত দলের কর্মসূচীতে পরিনত করে শেখ হাসিনা সাময়িক সন্তুষ্টি লাভ করলেও সব কিছু বদলে যেতে পারে আগামী সাধারণ নির্বাচনের পর। শেখ পরিবারের প্রতি এ দেশের মানুষ বরাবরই দুর্বল। কিন্তু তাই বলে এতটা দুর্বল নয় যা দিয়ে দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নাম প্রধানমন্ত্রীর ভ্রাতৃবধূ সুলতানা কামালের নাম দিয়ে পার পাওয়া যাবে। ৩০ লাখ শহীদ আর ৩ লাখ বীরাঙ্গনার দেশ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ভূমিকা রাখা এতগুলো মানুষের মূল্যায়ন সম্পুর্ণ না করে শেখ পরিবারের গৃহবধূকে মূল্যায়নের তাগাদা কোন মতেই জাতীয় তাগাদা হিসাবে মেনে নেয়া যায় না. এ নেহাতই পারিবারিক দাসত্ব পাকা করার আকাশ কুসুম পরিকল্পনা। এরশাদীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর এই একনায়কের নামে স্থাপনা গুলোর উপর নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল এ দেশের হুজুগে মাতাল জনগণ। সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হতে বিদায় নিলে শেখ নামের প্রতি প্রতিপক্ষ দল কতটা সন্মান দেখাবে তার টোন সেট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। আগের নির্বাচনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর দেশের সংখ্যালঘুদের উপর জাতীয়তাবাদীদের অত্যাচার জাতির মেমোরি হতে মুছে যাওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ডিম থেরাপি প্রাপ্ত শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি আর মাহমুদুর রহমানরা ক্ষমতা ফিরে পেয়ে কতটা হিংস্র হবেন তার সামান্যতম ধারণাও বোধহয় প্রধানমন্ত্রীকে দেয় হচ্ছে না।

বাংলায় একটা কথা আছে, এক মাঘে শীত যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগের জন্যে তা বোধহয় প্রযোজ্য নয়। ক্ষমতার হাওড়ে ভাসতে গিয়ে দলটা ধরে নিয়েছে এটা তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনের বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। নাম পরিবর্তন আর মুজিব হত্যার রায় কার্যকরকে যদি সাফল্যের মাপকাঠি হিসাবে ধরা হয়, চট্টগ্রামের জনগণ আওয়ামী লীগের এ সাফল্যে সাড়া দেয়নি। যে দেশে অপরাধের শাস্তি নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর, সে দেশে বিচার ব্যবস্থাকে নিরপেক্ষ ভাবার কোন উপলক্ষ নেই। জামাতী নেতাদের নিয়ে ইদানীংকালের আওয়ামী বিচার নাটকও এর বাইরে নয়। জামাতীরা অপরাধ করেছে ১৯৭১ সালে। এ অপরাধ কোন রহস্য উপন্যাসের অপরাধ ছিল না যা উন্মোচনের জন্যে শার্লক হোমসদের ভাড়া করা দরকার ছিল। ৩৯ বছর ধরে এরা সদম্ভে এ দেশের মাটিতে বাস করেছে, রাজনীতি করেছে, গাড়িতে নিশান উড়িয়ে মন্ত্রিত্ব জাহির করেছে। এ অপরাধী চক্রের সাথে খোদ আওয়ামী লীগও ক্ষমতা নিয়ে দরকষাকষি করেছে। তা হলে আমাদের কি মেনে নিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের বয়স যত বাড়ছে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আওয়ামী লীগের দেশপ্রেম? না-কি এবস্যালুট মেজরিটি পেয়ে প্রতিপক্ষকে খতম করার পুরানো কৌশলে ফিরে গেছে আওয়ামী লীগ? খবরে প্রকাশ আটককৃত জামাত নেতাদের সন্তানদের গ্রেফতার করা হয়েছে একত্রে গোপন বৈঠক করার জন্যে। দেশে কি পুলিশ রাজত্ব কায়েম হয়েছে যেখানে বাসায় বৈঠক করার অধিকারও হরণ করা হয়েছে? অপরাধ করেছে নিজামী, মুজাহিদ আর কামরুজ্জামানের দল। বাবার অপরাধে সন্তানদের যদি জেলে যেতে হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই মোশারফ হোসেন কি পূণ্য করেছেন যার জন্যে তাকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করা হল? দেশে আইনের শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না দিয়ে শুধু কজন রাজাকার আর যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দেয়া নিছকই তামাশায় পরিণত হবে যখন একই আসামিরা জাতীয়তাবাদী বিচারকদের কলমের খোঁচায় সগৌরবে বেরিয়ে আসবে জেল হতে, খালেদা জিয়ার কলমের খোঁচায় গাড়িতে পতাকা উড়িয়ে স্ব দম্ভে পদানত করবে দেশের অলি গলি।

সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপ ফুটবল দেখে আমরা কিছুটা হলেও পরিচিত হয়েছি আধুনিক ফুটবলের সাথে। স্থানীয় ফুটবলের দুই জায়ান্ট আবাহনী ও মোহামাডানের খেলা কতটা আধুনিক তাও যাচাই বাছাই করার সুযোগ এনে দিয়েছে এই টুর্নামেন্ট। নিকৃষ্ট হলেও স্থানীয় ফুটবল খেলা দেখতে হলে আমাদের এই দুই দলের খেলাই দেখতে হবে। আমাদের রাজনীতির অবস্থাও অনেকটা একই রকম। গণতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যম হিসাবে মেনে নিলে বিএনপি-জামাত জোটকেও মানতে হবে আওয়ামী লীগের। একই কথা প্রযোজ্য জোটের বেলায়। ফুটবল যেমন এক দলের খেলা নয় গণতন্ত্রেও এক দলের স্বীকৃতি নেই। এমনটাই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। দলন, মথন আর নিপীড়নের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে দুর্বল বানিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার আওয়ামী কৌশলের মূল্য যদি কাউকে দিতে হয় তা হবে জাতি হিসাবে আমাদেরকেই।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন