রাজন হত্যা ও কিছু বিষাক্ত সাপের গল্প

Submitted by WatchDog on Monday, July 13, 2015

Rajon

রাজন হত্যার পুরো ভিডিওটা আমি দেখিনি। দেখিনি বললে হয়ত মিথ্যা বলা হবে...দেখার সাহস হয়নি। ঘটনার হেডলাইন পড়ে বাকিটা কল্পনা করে নেই। তাতেই ভেসে উঠে মৃত্যু পথযাত্রী এক কিশোরের করুণ আর্তনাদ। বেঁচে থাকার আকুতি। ১৬ কোটি মানুষের দেশে মৃত্যু এখন কাঁচা লংকা দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার চাইতেও সস্তা। মানুষ মরছে অনেকটা পা পিষে পিঁপড়ে মারার মত। ভাই মারছে ভাইকে, সন্তান মারছে পিতাকে, দুই বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে পুতে রাখছে মাটিতে। পত্রিকার ভেতরের পাতায় ছোট্ট দুই লাইনের খবর হয়ে কবরে ঠাঁই নিচ্ছে মা-বাবার আদরের সন্তান, সন্তানের জন্মদাতা, প্রিয় ভাই,আদরের ছোট বোন, পাড়া প্রতিবেশী। সিমেন্টের বস্তা সহ লাশ ভেসে উঠছে নদীতে, লাশ পাওয়া যাচ্ছে ডোবায়, নালায়, নর্দমায়, ধান ক্ষেতে, বেড রুমে...। পাঠক হিসাবে এসব পড়তে আর দেখতে দেখতে আমরাও ক্লান্ত। তাই অবাক হইনা যখন সরকারের নিজস্ব বাহিনী রাতের অন্ধকারে ঘর হতে উঠিয়ে এনে গুলিতে বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। তারপর আমাদের গেলায় রূপকথার রক্ষক খোক্কসের গল্প। এসব গল্পের রূপকারের সংখ্যাও দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ওরা টিভিতে সাফাই গাইছে। পত্রিকা ও সোশাল মিডিয়াতে বিরামহীন চলছে কীর্তনের জলসা। আমরা শুনছি ও দেখছি। এবং ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে উঠছি। সৈয়দ আশরাফের মন্ত্রিত্ব থমকে যাওয়ায় জাতি হিসাবে আমরা নাকি স্তব্ধ। দক্ষিণ আফ্রিকাকে খেলার মাঠে হারিয়ে আমরা এখন সুখের নদীতে জলকেলি রত। অথচ একবারের জন্যও মনে করিনা এই সৈয়দ সাহেবের মন্ত্রিত্বটাই ছিল অবৈধ। একজন অবৈধ মন্ত্রীর সততা নিয়ে আহাজারি আর পতিতা ভাড়া করে তার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা দুটোই বোধহয় এক। রাজনকে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা তা প্রায় সরাসরি দেখতে পেয়েছি, যেমনটা দেখেছি মিরপুর মাঠের ক্রিকেট যুদ্ধ। অনেকে দাবি করছি এ হত্যার যেন যথাযথ বিচার হয়। কেউ চাইছে র‍্যাব এগিয়ে এসে যেন তাদের অন্ধকারের ডিউটি পালন করে। এবার আসুন খুন, খুনি, থানা পুলিশ, আদালত বিচারকদের পরিধানের কাপড় খুলে কিছুক্ষণের খুব কাছ হতে দেখি তাদের ভেতরটা।

খুনিরা স্থানীয় পয়সাওয়ালা। খুঁজলে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাওয়া যাবে। একজন সৌদি প্রবাসী। দেশ এসেছেন ছুটি কাটাতে। মানুষ পেটানো অথবা মেরে ফেলা তাদের জন্য ভয়াবহ কোন সমস্যা নয়। কেবল সাময়িক বিপত্তি মাত্র। ভ্যান চুরির অভিযোগ এনে রাজনকে খুন করা হয়েছে। যে ভ্যান গাড়ির জন্য এই নির্মমতা খুঁজলে তার মালিকানায়ও পাওয়া যাবে চুরি চামারি, ঠঁকবাজি। থানা পুলিশের কাছে রাজন হত্যা স্রেফ মাল কামানোর উপলক্ষ মাত্র। দুদিন পর আমরা যখন নতুন কোন ইস্যু নিয়ে পঙ্গপালের মত ঝাঁপিয়ে পরবো সুন্দর এক সকালে খুনিদের অভিভাবকরা এক বস্তা টাকা নিয়ে হাজির হবে থানায়। দফারফা হবে। ভাগ যাবে উঁচু মহলে। ভাগ যাবে স্থানীয় নেতাদের পকেটে। ভাগ যাবে সাংবাদিকদের ব্যাংক একাউন্টে। থেমে যাবে রাজিন কান্নার স্বরলিপি। কারণ ততদিন নতুন কোন মৃত্যু হার মানাবে রাজন হত্যার পশুত্ব। আর রাজনের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠোকার জন্য হাতুড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবেন আমাদের বিচারক গন। নগদ নারায়ণ বদলে দেবে দৃশ্যপট। বদলে যাবে পুলিশের ফাইনাল রিপোর্ট। স্থানীয় ডাক্তারদের কেউ রিপোর্ট লিখবেন রাজনের মৃত্যু হয়েছিল আসলে বিষাক্ত সাপের দংশনে।

আমরা সবাই জানি কে এই বিষাক্ত সাপ, কোন জরায়ুতে এই সাপের জন্ম। রাজন হত্যার বিচার চাইলে এবং নতুন কোন রাজনের জন্ম দিতে না চাইলে আগে আমাদের সাপ মারতে হবে।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন