পূণর্জন্ম হোক বাকশালের

Submitted by WatchDog on Wednesday, June 2, 2010

বাকশাল নামক একদলীয় শাসন বিদায় নিয়েছে আজ প্রায় ৩৫ বছর। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এই নামের একটা রাজনৈতিক দলও সক্রিয় ছিল দেশে। জনবিচ্ছিন্নতার কারণে টিকতে পারেনি, এবং শেষ পর্যন্ত যে জঁড়ায়ুতে জন্ম সেখানে আত্মাহুতি দিয়ে বিদায় নিয়েছে আভ্যন্তরীণ ও বর্হিবিশ্বের চাপে। কিন্তু তাই বলে বাকশাল শব্দটা কি আমাদের জাতীয় জীবন হতে মুছে ফেলা গেছে চিরতরে? মনে হয়না। রাজনীতির মাঠে ডানপন্থী দলগুলোকে ঘায়েল করায় রাজাকার শব্দের ব্যবহার যেমন জনপ্রিয়, প্রায় একই উচ্চতায় বাকশাল শব্দটাকেও ব্যবহার করা হয় আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের সমালোচনার কাজে। শব্দ দুটো ব্যবহৃত হয় মূলত কাঁদা ছোড়াছুড়ির বিশেষণ হিসাবে। বাকশাল শাসন ব্যবস্থাকে পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই সমাহিত করা হয়েছিল মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার নামে। বহুদলীয় গণতন্ত্র বিপরীতে একদলীয় শাষন এবং মানুষের কিছু মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে টোটালিটেরিয়ান টাইপের সমাজব্যবস্থা চালু করার অপর নামই ছিল বাকশাল। কথা ছিল সাময়িক কিছু অধিকার কেড়ে নিলেও মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া হবে তার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর মত মৌলিক অধিকার গুলো।

কতটুকু সফল হয়েছে সে অজুহাত যার উপর ভর করে উর্দিওয়ালারা রাজত্ব করে গেল প্রায় একযুগ? অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও আইনের শাসনের মত জন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধানে কতটা সাফল্যের মুখ দেখাচ্ছে হাসিনা-খালেদার বহুদলীয় গণতন্ত্র? ভৌগোলিক স্বাধীনতা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার তালিকায় ক্ষমতাসীন সরকার ও তার শত্রুপক্ষ ছাড়া দেশের সাধারণ জনগণের অংশীদারিত্ব কতটুকু তা বলাই বাহুল্য। উন্নতির যে অন্ধগলিতে সমসাময়িক বাংলাদেশের অবস্থান তা হতে উত্তোরণের রাস্তা দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে পারছেনা। এক কাপ চা আর একটা আকিজ বিড়ির গণতন্ত্রে আমরা সরকার বদলের সুযোগ পাচ্ছি সত্য, কিন্তু তাতে বদলাচ্ছে কি মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের চাহিদা?

ব্যক্তিগতভাবে একযুগ ধরে বাস করার সুযোগ হয়েছে বাকশাল শাসনব্যবস্থার উন্নত ভার্সন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়। নতুন বিশ্বব্যবস্থার বাস্তবতায় সমাজতান্ত্রিক সমাজ নিয়ে বহুমুখী বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু মানব সভ্যতার বিকাশে ধর্মের মত এর অবদানকেও খাটো করার কোন সুযোগ নেই। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের চরিত্রহীন সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের কোন বিকল্প নেই। ধর্ম হতে পারতো এর বিকল্প, কিন্তু গণতন্ত্রের মত এটাও চলে গেছে কায়েমী স্বার্থবাদীদের দখলে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যে হলেও আমাদের রক্ত পরিবর্তন আবশ্যক। ধমনীতে যা বইছে তাতে সাতার কেটে আমরা বেশিদূর যেতে পারবো বলে মনে হয়না। একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হিসাবে নয়, বরং সাময়িক চিকিৎসা হিসাবে নিলে জাতির জন্যে বয়ে আনতে পারে কাঙ্খিত ফল। বেশিদূর যেতে হয়না, বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ চীনাদের কথাই ধরা যাক। আফিমখোর জাতি হিসাবে পরিচিত ছিল একসময়। বর্তমান পরিচয় একটা সুশৃংখল ও উত্পাদনমুখী জাতি হিসাবে।

আমাদের মত দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র কাজ করেনা, করতে পারে না। পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র আমাদের উপহার দিয়েছে পারিবারিক স্বৈরতন্ত্র যা না গণতন্ত্র না সমাজতন্ত্র। দু সপ্তাহ হয়নি সরকার দুটা টিভি ষ্টেশন বন্ধ করেছে, আজ বন্ধ করল ’আমার দেশ’ নামক একটা দৈনিক। দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো কোন ভ্রূণে জন্ম হয় তা সবারই জানা। ’আমার দেশ’ তেমনই একটা মাধ্যম, যার জন্ম হয়েছিল দুর্নীতির ভরা যৌবনে। দলীয় ক্ষমতার বাস্টার্ডস সন্তান আমাদের টিভি, রেডিও ও পত্রিকা সমূহ, এমনটা বললে খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবেনা নিশ্চয়। নেত্রী ও দলীয় স্তুতি-বন্দনার মাধ্যমে ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতিবিদরা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে আবর্জনার মত জন্ম দিচ্ছে্ন টিভি ও পত্রিকার মত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। ’আমার দেশ’ পত্রিকা ক্ষমতাহীন দলের পত্রিকা, এবং তা সত্য মিথ্যায় সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে দিনরাত। কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেলে সরকারকে এ পথে নামতে হয়? তাহলে আমরা কি ধরে নেব সরকার বাকশালের পথে এগুচ্ছে? যদি তাই হয় তাহলে সরকারকে তা খোলামেলা করতে হবে। ’আমার দেশ’ পত্রিকা বন্ধ করে সরকার যদি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে গুনগত পরিবর্তন আনতে পারেন তাহলে প্রকাশ করা হোক সে চাহিদার বিবরণ। মাহমুদুর রহমান একজন মিথ্যুক, দুর্নীতিবাজ ও ক্ষতিকর এলিমেন্ট, মানতে বাধা নেই। কিন্তু কার জন্যে ক্ষতিকর, জাতির না ক্ষমতাসীন দলের? তা হলে মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে আমরা কি হিসাবে নেব? এই কি সেই আমলা নন যিনি চাকরী অবস্থায় জনতার মঞ্চ বানিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার রসদ যুগিয়েছিলেন? তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায়, দুই দল স্বার্থবাজ নিজেদের স্বার্থ নিয়ে মারামারি করছে আর আমাদের সামনে ঝুলানো হচ্ছে গনতন্ত্রের মূলা!

নাচতে নেমে ঘোমটা দিয়ে লাভ কি, নেংটি দিয়ে ভাল করে নাচলেই বোধহয় ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাকশাল কায়েম-ই যদি সরকারের আসল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, আলো দেখুক সে উদ্দেশ্য। আমরা স্বৈরশাসন দেখেছি, মিলিটারি শাসন দেখেছি, দেশনেত্রী আর জননেত্রীর শাসন আমাদের জন্যে ডালভাত। এ বিচারে বাকশাল জন্ম নিয়েও আলোর মুখ দেখেনি। ক্ষতি কি এমন শিশু নতুন করে জন্ম নিলে?

ভালো লাগলে শেয়ার করুন