"হাসিনার গুগলিতে ইউনূসের ছক্কা"

Submitted by WatchDog on Sunday, March 4, 2012

Yunus

হাসিনার গুগলিতে ইউনূসের ছক্কা! বাক্যটা আমার নিজের নয়, অন্য একজন ব্লগারের লেখা হতে ধার করা। হাসিনা-ইউনূস অধ্যায়ের শেষ পর্বকে একবাক্যে বর্ণনা করতে চাইলে এর চাইতে ভাল কোন শব্দ খুজে পাওয়া মুস্কিল হবে। প্রতিপক্ষ নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করায় শেখ হাসিনা এ মুহূর্তে দেশ চ্যাম্পিয়ন। অতীতে দেশের উচ্চ আদালতও এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনীর মত নেত্রীর মুখেরও কোন উন্নতি হয়নি। বরং ক্ষমতা ফিরে পেয়ে মুখের অপব্যবহারকে নিয়ে গেছেন নতুন এক উচ্চতায়। এই অতি উচ্চতার কারণে গাফফার চৌধুরীদের মত আন্ধা সমর্থকেরাও গাই গুই করে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এসবে মোটেও দমার পাত্র নন তিনি। ’১২ই মার্চ অন্যকিছু করলে খবর আছে’ - একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যতম রাজনৈতিক দলের নেত্রীর মুখে এ ধরণের সস্তা মন্তব্য মোটেও কাম্য হতে পারেনা। ১২ই মার্চ দেশের বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীর অংশ হিসাবে রাজধানীতে গণজমায়েতের আয়োজন করেছে। এ ধরণের জমায়েত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কোন সংযোজন নয়, বরং ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে লগি-বৈঠার মত হিংসাত্মক পথ খোদ শেখ হাসিনার আবিস্কার। আবিস্কারের ফসল রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি পেলে তার উপকারিতা সবাই ভোগ করে, আবিস্কারের এটা অন্যতম ধর্ম। গণজমায়েত, লাগাতার হরতাল, প্রেসিডেন্ট ভবনের বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ সহ লগি-বৈঠার তান্ডবে মানুষ খুন করিয়ে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার রোডম্যাপ খোদ শেখ হাসিনার হাতে তৈরী। এ শিল্পকর্ম উপভোগ করার অধিকার হতে অন্যদের বঞ্চিত করতে চাইলে পেটেন্ট আইনে তালিকাভুক্তির প্রয়োজন ছিল। যেহেতু তিনি তা করেননি তাই এর ব্যবহার হতে প্রতিপক্ষদের বঞ্চিত করার আইনি অধিকারও উনার পক্ষে নেই। তাই বিরোধী দল অন্যকিছু করলে দেশের প্রধানমন্ত্রী খবর করে দেবেন তা সহজভাবে নেয়ার কোন উপায় নেই। এমনকি প্রতিপক্ষ বিএনপি-জামাত জোট যদি আওয়ামী সমর্থকদের হাটে মাঠে ঘাটে পিটিয়ে লাশ বানায় তাতেও আমার মত সাধারণ বাংলাদেশিদের বলার কিছু থাকবেনা, কারণ ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়, এমন একটা শিক্ষা প্রাথমিক স্কুলে পেয়েই আমরা বড় হয়েছি।

ঢাকা জিম্মি করে গণজমায়েত প্রধানমন্ত্রীর দল আওয়ামী লীগ করতে পারলে দেশের বাকিও দলও করার অধিকার রাখে, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খবর করার কিছু নেই। শেখ হাসিনার খবর করার এ সতর্কবাণী বরং বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে যদি রাজপথে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটে যায়। বুদ্ধিমান বলতে আওয়ামী লীগে কেউ যদি অবশিষ্ট থাকে তাদের উচিৎ হবে আর কিছু না হোক অন্তত নেত্রীর মুখকে সামাল দেয়া। দেশের মানুষ ফুঁসছে। প্রচন্ড একটা বিস্ফোরণের দোরগোড়ায় দাড়িয়ে আছে গোটা জাতি। এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার এসব উত্তেজক কথাবার্তা বড় কোন ট্রাজেডির ডেটোনেটর হিসাবে কাজ করতে পারে।

ইউনূস স্যারের ছক্কাটা যারা উপভোগ করেননি তাদের জন্যে লেখার এ অংশ। হিসাবটা ছিল এ রকম, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট পদের লোভনীয় ফাঁদে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েই নোবেল লরিয়টকে নেংটা করাবেন। তারপর গোটা বিশ্বের চোখে ডক্টর মোহম্মদ ইউনূসকে প্রতিষ্ঠিত করবেন একজন ক্ষমতালিপ্সু বাংলাদেশি হিসাবে। তিনি ভাল করেই জানতেন ব্যাংকটির ইতিহাসে মার্কিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোন দেশের নাগরিককে প্রেসিডেন্ট বানানোর ঘটনা একবারই ঘটেছিল। যে অস্ট্রেলিয়ানকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তিনিও ছিলেন কনভার্টেড মার্কিনি। কিন্তু ইউনূস স্যার হাসিনার স্পিন ফাঁদে পা না দিয়ে সোজা ব্যাটে এমন একটা শট খেললেন যা নেত্রীর কুট চালকে উড়িয়ে নিয়ে আছড়ে ফেলল সীমানার ওপারে। এক কথায় ছক্কা!

স্যারের উত্তরটা সোজা বাংলায় অনুবাদ করলে এই দাড়াবে; ‘আপনি শেখ হাসিনা রিকমেন্ড করার আগেই আপনার চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে ডেকে নিয়ে এ পদের অফার দিয়েছিলেন, যা বিনীতভাবে আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। এমনকি তৎকালীন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টে তার নাম্বার ওয়ান ডেপুটি হওয়ার প্রস্তাবকেও আমি বিবেচনা করিনি। আপনার প্রস্তাব আরও প্রমাণ করে যে অভিযোগের ভিত্তিতে আপনি আমাকে গ্রামীন ব্যাংক হতে সরিয়েছিলেন তা ছিল মিথ্যা ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধের ছলচাতুরি। আমার বাস আপনার চাইতে অনেক গভীর জলে, আমাকে ঘায়েল করতে চাইলে আপনাকে আরও পাকা শিকারী হতে হবে।‘ আমি জানিনা বাংলাদেশে এ মুহূর্তে এমন কোন মার সন্তান আছে কিনা যিনি বিশ্বব্যাংক প্রধানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে জন্মভূমিতে থেকে নিজের ধ্যান ধারণা বাস্তবায়নে আগ্রহী হবেন। ধন্যবাদ ইউনূস স্যারকে। যে ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে অতীতে সমালোচনা করেছেন তারই প্রধান হওয়ার প্রস্তাবে রাজী হওয়া হত দ্বিমুখী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এ ধরণের চরিত্রের ধারক বাহক আমাদের রাজনীতিবিদ গণ, যার অন্যতম আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আপনি সে পথে না হেটে প্রমাণ করেছেন ভাল বলতে দেশে এখনো মানুষ বাস করে। বিনম্র শ্রদ্ধা রইল আপনার জন্যে। আর ধিক তাদের জন্যে যারা আপনাকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান বানানোর প্রস্তাব দিয়ে হেয় করার চেষ্টা করেছিল।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন