দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...আল্‌বুকেরকে, নিউ মেক্সিকো

Submitted by WatchDog on Thursday, February 25, 2010

এ লেখাটার সূত্রপাত মূলত বাংলাদেশ হতে আসা একটা ফোন কল। অনেক দিন পর পরিচিত এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম। ইদানিং কোন্‌ শহরে বাস করছি জানতে চাইলে উত্তরে বল্‌লাম নিউ মেক্সিকো অংগরাজ্যের আল্‌বুকেরকেতে। ভূগোল নিয়ে মাথা ঘামানোর মত অতিরিক্ত সময় বন্ধুর হাতে নেই, তাই বিষয়টার উপর তার জ্ঞান খুবই সীমিত। নিউ মেক্সিকো শব্দটা শুনতেই ধরে নিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোতে বাস করছি। ইমিগ্রেশন সমস্যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি কিনা জানতে চাইল সে। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন এই প্রথম ছিলনা আমার জন্যে, তাই বন্ধুকে বেনিফিট অব ডাউট দিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করতে বাধ্য হলাম । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অংগরাজ্যের উপর ব্লগ পাঠকদের সম্যক ধারণা দিতেই এ লেখা। যুক্তরাষ্ট্রের বাকি ৪৯টা অংগ্রারাজ্য হতে এ অংগরাজ্যের সার্বিক চিত্র একটু ভিন্ন, যা ইতিহাস-ভূগোল প্রিয় পাঠকদের জানতে ভাল লাগবে।

নিউ মেক্সিকোর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে। এখানে আদিবাসী আমেরিকানদের বাস শত শত বছর ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অংশটা একসময় যথাক্রমে স্প্যনিশ রাজতন্ত্রের নিউ স্পেন ও মেক্সিকোর অংশ ছিল। এ অংগরাজ্যের শতকরা ৪৫ ভাগেরও বেশী মানুস হিস্পানিক। আলাস্কা ও ওকলোহামার পর নিউ মেক্সিকোতেই আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যাধিক্য। আদিবাসীরা মূলত নাভাখো ও পুয়েবলো গোত্রের অংশ। হিস্পানিক, মেক্সিকান এবং আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের সমন্বয়ের ফলে এ অংগরাজ্যের ডেমোগ্রাফিকস্‌ ও সাংস্কৃতি অন্য যেকোন অংগরাজ্য হতে আলাদা ও বৈচিত্রে ভরপুর। প্রতি বর্গমাইল এলাকায় কেবল ১৬ জন মানুষের বাস যুক্তরাষ্ট্রের এ অংশে।

৩১৫,১১০ বর্গমাইলের এ অংগরাজ্যের পূবদিকে ওক্‌লোহামা ও টেক্সাস, পশ্চিমে আরিজোনা ও ইউটা এবং উত্তরে কলোরাডো ষ্টেটস্‌। নিউ মেক্সিকো তুলনামূলক বড় ষ্টেট হলেও এখানে জলপথের পরিমান কেবল ৬৫০ বর্গমাইল। এখানে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৩৮০মিলিমিটারের বেশী নয়। অংগরাজ্যের ল্যান্ডস্ক্যপে একদিকে যেমন গোলাপী রংয়ের মরুভূমি, অন্যদিকে গভীর জংগল ও পাহাড়। সান্তা ফে্‌ নিউ মেক্সিকোর রাজধানী। এর অন্যতম বড় শহর আল্‌বুকেরকে। এ ছাড়াও লাস্‌ ক্রুসেস, রসওয়েল, কার্লস্‌বাদ ও আলমোগরদো শহরগুলোও উল্লেখ করার মত শহর। বিশ্বজুড়ে রসওয়েল শহরটার পরিচিতি একটু অন্য কারণে। বলা হয় ভিনদেশী এলিয়ানরা নিজদের এয়ারক্রাফট্‌ নিয়ে ল্যান্ড করেছিল এ শহরে। এ নিয়ে হলিউডে বেশ কটা মুভি পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। গেল গ্রীস্মে ঐ শহরটা ঘুরে আসার সৌভাগ্য হয়েছে। সময় করে এর উপর একটা লেখা দেব ভাব্‌ছি।

আমেরিকার উপকুলীয় অংগরাজ্যের মত এ অংগরাজ্যের কোন শহরেই বিদেশী অভিবাসীদের সহজে চোখে পরেনা। বিশেষ করে দক্ষিন এশিয়ানদের সংখ্যা একেবারেই হাতে গোনা। আমার জানা মতে সব চাইতে বড় শহর আল্‌বুকেরকেতে (যেখানেটায় আমি আছি) কেবল ১২টা বাংলাদেশী পরিবারের বাস। এখানে ’ঢাকা বাজার’ নামে বাংলাদেশী একটা গ্রোসারী ষ্টোর আছে, যা সোম হতে শুক্রবার আধাবেলা খোলা থাকে সীমিত গ্রাহকদের কারণে। চীনাদের সংখ্যাও একেবারে নগন্য, চাইনীজ রেঁস্তোরায় পা না রাখলে এদের দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মেক্সিকান ও রেড ইন্ডিয়ানদের ভীড়ে সাদা আমেরিকানদের খুঁজে পেতেও কষ্ট হয়, বিশেষ করে বড় শহরগুলোর বাইরে।

নীচের ছবিগুলো আল্‌বুকেরকে শহরের। প্রায় ৫ লাখ অধিবাসীর এ শহরটার জীবন তুলনামূলক শান্ত, এবং ঝকঝকে পরিস্কার। শহরের পূব দিগন্তজুড়ে সান্দিয়া পাহাড়। প্রায় দু’বছর পাহাড়ের পাদ্‌দেশে বাস করার পর মুভ করেছি ডাউনটাউন আল্‌বুকেরকেতে। আমার এপ্যার্টমেন্টের পূব জানালাটা খুল্‌লে দিগন্তজুড়ে আছড়ে পরে বরফাচ্ছন্ন সান্দিয়া পাহাড়ের চূড়াগুলো। এ এক অবর্ণনীয় প্যানোরমা। উপভোগ করুন ছবিগুলো। সময় ও সূযোগ করে ঘুরে যাওয়ার আমন্ত্রন রইল আমেরিকার ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েষ্টে।

Bangladeshi
Bangladeshi in USA
Bangladeshi
Bangladeshi
Bangladeshi in USA
Bangladeshi
Bangladeshi
Bangladeshi
Bangladeshi in USAi
Bangladeshi

ভালো লাগলে শেয়ার করুন