যুক্তরাষ্ট্রের ৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রস্তাব

শনিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০১০
১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অসামান্য অবদান রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের ৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব কিংবা বিশেষ সম্মাননা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থানীয় প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি এ প্রস্তাব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এই ৬ জনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশি আর্থিক সহযোগিতাসহ নানাভাবে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তাদেরকে দেশের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেয়ার ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনি আলোচনাও করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৬ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন: প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, বিখ্যাত পপ গায়ক প্রয়াত জর্জ হ্যারিসন, জোয়ান বায়েজ, প্রখ্যাত সেতারবাদক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওস্তাদ রবিশংকর, প্রয়াত প্রফেসর ড. রবার্ট রাইন্ডস ও কূটনীতিক আর্চার ব্লার্ড।

ড. একে আব্দুল মোমেন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, কেনেডি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্সন প্রশাসন যখন পাকিস্তানের পক্ষে বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠাচ্ছে তখন কেনেডি তীব্র প্রতিবাদ করে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে বলেছেন। বাংলাদেশের সপক্ষে সিনেটে ৩১ বার জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। জর্জ হ্যারিসন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য নিউইয়র্কে আয়োজন করেছিলেন বৃহৎ কনসার্টের। তার সঙ্গে ছিলেন মহিলা শিল্পী জোয়ান বায়েজ ও সেতারবাদক ওস্তাদ রবিশংকর। হ্যারিসনের গাওয়া "বাংলাদেশ, বাংলাদেশ" গানটি আমেরিকানদের মধ্যে বাংলাদেশকে ব্যাপক পরিচিত করে তোলে। এ কনসার্টের টিকিট থেকে পাওয়া সমুদয় অর্থ তারা মুজিবনগর সরকারকে দান করেন।

প্রফেসর ড. রবার্ট রাইন্ডস ছিলেন আমেরিকান ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য একাই ৬৫ হাজার ডলার সংগ্রহ করে দেন। অথচ সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি সবাই মিলে তখন সংগ্রহ করেছিলেন মাত্র ১৮ হাজার ডলার। শুধু তাই নয়, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অতিগোপনে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছিলেন। এসব সরঞ্জামাদি পরিচালনার জন্য তিনি তৈয়ব উদ্দিন মাহতাব ও হাসান নামে দুজন বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণও দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।

আর্চার ব্লার্ড মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জেনারেল। পাকিস্তান বাহিনীর বর্বরতার সব তথ্য তিনি সংগ্রহ করে প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পাঠাতেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে সহযোগিতা চাইতেন। যদিও নিক্সন সরকারের অবস্থান ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তার এই ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। এর ফলে পুরো চাকরি জীবনে আর্চারের আর পদোন্নতি হয়নি। অবশ্য চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার ৭১-এ তার ওই সাহসী ভূমিকার জন্য তাকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে।

ড. মোমেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এদের মূল্যায়ন ছাড়া অপূর্ণ থেকে যাবে। যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন তাদের মরণোত্তরসহ এই ৬ জনকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করলে পক্ষান্তরে বাংলাদেশই সম্মানিত হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন।

আগামী ২৬ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে তাদেরকে (পরিবারের সদস্যসহ) একটি সংবর্ধনা দেয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেন ড. মোমেন। সূত্র: আমাদের সময়।