Calling all Bangladeshis...

ক্যালেন্ডারী বছরের সাথে বিদায় নিল আরও একটা ব্লগীয় বছর। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে বাংলা ব্লগের ইতিহাস খুব একটা বেশী দিনের ইতিহাস নয়, কিন্তূ এরই মধ্যে যোগাযোগের এ মাধ্যমটা ঝেকে বসেছে আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে। ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্যান্য অংগনের মত সমাজের শিক্ষিত অংশকে চুম্বকের মত টানছে ব্লগ। বলতে দ্বিধা নেই, যে কোন মানদন্ডে বাংলা ব্লগের এখন বসন্তকাল। সাংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি ব্লগীয় ভূবনে আপন মহিমায় স্থান করে নিয়েছে আমাদের রাজনীতি। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন শুধু টেকনাফ হতে তেতুলিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ব নয়, এর ব্যাপ্তি আর্টিক হতে এন্টার্টিকা, সুইডেন হতে দক্ষিন আফ্রিকা, আলাস্কা হতে তাসমানিয়া পর্য্যন্ত। যেখানেই বাংলাদেশী সেখানেই রাজনীতি, এমন একটা বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে বাংলা ব্লগ রাজনৈতিক চিন্তা চেতনাকে মাঠ-ময়দান হতে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছে আমাদের শয়নকক্ষে। এক কথায় সমসাময়িক ব্লগীয় প্ল্যাটফর্ম যে কোন বিচারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বক্তব্য পৌঁছে দেয়ার সহজ ও শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে কাজ করছে।

ব্লগীয় ভূবনে ’আমি বাংলাদেশী’র বয়সও বাড়ছে হাটি হাটি পা পা করে। বিশেষ কোন শোরগোল ছাড়াই আমরা টিকে আছি আপন মহিমায়। যে ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল তা হতে আমরা পিছিয়ে আসিনি, বরং শত বাধা বিপত্তি ও হুমকি ধামকিকে আগ্রায্য করে অটল থাকার চেষ্টা করেছি আমাদের বক্তব্যে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় রাজনৈতিক অপরাধ একটি মারাত্মক ব্যাধি, যার মূলে রয়েছে ব্যক্তি, দল ও পরিবারের নামে জাতিকে বিভক্ত করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট। সমাজকে কলুষিত করার এই প্রক্রিয়ার সাথে রাজনীতিবিদ্‌রা সূকৌশলে একাত্ম করে নিয়েছে সমাজের শিক্ষিত অংশকে, যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব র্দুনীতির কালো তালিকা হতে নিজদের অবস্থানকে সন্মানজনক পর্য্যায়ে আনতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। একটা দেশ কোন একটা বিশেষ ব্যক্তি, দল অথবা পরিবারের জন্য সৃষ্টি হয়না, বরং স্বাধীনতার স্পৃহা জন্ম নেয় একটা জাতির জাতীয়তাবোধ, ঐতিহাসিক প্রয়োজন ও হাজার বছর ধরে গড়ে উঠা সাংস্কৃতির সূতিকাগারে। কিন্তূ আমাদের বেলায় কেন জানি এমনটা হয়নি, বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি মূলত রাষ্ট্রের মালিকানা নিয়ে দুই পরিবারের বৈরীতার উপর প্রতিষ্ঠিত। পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় রাজনীতি মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরনের সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করার কথা, কিন্তূ আমাদের রাজনীতি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মত প্রয়োজনীয় ইস্যুগুলোর সমাধান না দিয়ে সমাধান খুঁজছে স্বাধীনতার ঘোষক, জাতির পিতা, মুক্তিযোদ্বা-রাজাকারের মত বিভাজনের ইস্যুগুলোর। বর্তমান ও ভবিষ্যতমূখী পথ হতে সড়ে এসে আমরা পথ ধরেছি অতীতে ফিরে যাওয়ার। সে অতীতের শেষ ঠিকানা ইতিহাস, এবং ইতিহাসই যেন এ মুহুর্তে আমাদের রাজনীতির চালিকাশাক্তি। অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত রাজনীতিবিদ্‌দের ভয়াবহ ছোবলে দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিনত হয়েছে আলী বাবা ৪০ চোরের গুপ্তধনের মত। নেতা-নেত্রীদের সিসিম ফাঁক মন্ত্রে গুপ্তধনের দরজা উন্মোচিত হচ্ছে, আর তাতে মৌমাছির মত ঝাপিয়ে পরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটে নিচ্ছে পরিবার এবং দলীয়তন্ত্রের লুটেরা বাহিনী।

এভাবেই কেটে গেছে গত ৩৯টা বছর, এবং হয়ত কেটে যাবে আরও অনেকগুলো বছর। কিন্তূ আমরা চাইলেই কি পারিনা আমাদের ভাগ্য বদলাতে? নিশ্চয় পারি, তবে তার জন্যে কথা বলতে হবে, সোচ্চার হতে হবে রাজনৈতিক র্দুবৃত্তায়নের বিরুদ্বে। অতীতের মত সামনেও ’আমি বাংলাদেশী’ এ নিয়ে কথা বলবে, পাশাপাশি উন্মোচন করবে রাজনীতিবিদ এবং তাদের সহযোগী লুটেরাদের নোংরা কদর্য্য চেহারা। আমরা চাইবো গলার আওয়াজ উঁচু করতে আপনিও যোগ দেন আমাদের সাথে। সময়ের সিড়ি মাড়িয়ে সাফল্য একদিন ধরা দেবে, আসুন, এমন একটা প্রত্যাশার আলো প্রতিটা বাংলাদেশীর দুয়ারে পৌঁছে দেই।